গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনায় অনুমোদন দিল ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের গাজা সিটি দখলের জন্য প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয়ে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বরাতে বলেছে, 'আইডিএফ যুদ্ধাঞ্চলের বাইরের বেসামরিক জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি গাজা শহর নিয়ন্ত্রণের প্রস্তুতি নেবে।'
প্রায় দুই বছরের বিধ্বংসী যুদ্ধ নিয়ে দেশে-বিদেশে তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। তারই অংশ এই অনুমোদন।
উপত্যকার উত্তরে অবস্থিত গাজা সিটি এ অঞ্চলের বৃহত্তম শহর।
শুক্রবার সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস প্রথম এই খবরটি প্রকাশ করে। অ্যাক্সিওসের সাংবাদিক বারাক রাভিদ একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে গাজা সিটি থেকে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া ও সেখানে স্থল অভিযান শুরু করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রাভিদ আরও বলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য '৭ অক্টোবরের মধ্যে গাজা সিটির সমস্ত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে সেন্ট্রাল ক্যাম্পসহ অন্যান্য এলাকায় সরিয়ে নেওয়া।'
রাভিদ এক্সে লিখেছেন, গাজা সিটিতে থেকে যাওয়া হামাস যোদ্ধাদের ওপর অবরোধ আরোপ করা হবে।
বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজকে সাক্ষাৎকারে প্রদানকালে ইসরায়েল সম্পূর্ণ গাজা দখল করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, 'আমাদের সেই পরিকল্পনা আছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা এটি রাখতে চাই না। আমরা একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করতে চাই। আমরা গাজা শাসন করতে চাই না।'
নেতানিয়াহু জানান, ইসরায়েল এই ভূখণ্ড আরব বাহিনীর হাতে তুলে দিতে চায়, তারা এটি শাসন করবে। তবে শাসন ব্যবস্থা কেমন হবে বা কোন কোন আরব দেশ এতে জড়িত থাকতে পারে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
গাজায় আরও ভূখণ্ড দখলের সামরিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করার জন্য ঊর্ধ্বতন মন্ত্রীদের একটি ছোট দলের সঙ্গে বৈঠকের আগে ফক্স নিউজকে এসব কথা বলেছিলেন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে শুক্রবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার সিংহভাগ সদস্যের বিশ্বাস, 'মন্ত্রিসভায় উপস্থাপিত বিকল্প পরিকল্পনা হামাসকে পরাজিত করতে বা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে পারবে না।' এ কারণেই গাজা সিটি দখলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে আল জাজিরার সংবাদদাতা শিহাব রাতানসি বলেছেন, গাজা দখলের এই পদক্ষেপের 'আভাস গত কদিন ধরেই পাওয়া যাচ্ছিল।'
তিনি বলেন, 'বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যা করতে চান, তাতে একপ্রকার সবুজ সংকেত দিয়ে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।'
এদিকে দুটি সরকারি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার যেকোনো সিদ্ধান্ত পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হতে হবে। সেই বৈঠক হয়তো রোববারের আগে হবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, নিরাপত্তা বৈঠকের আগে যেসব সম্ভাব্য পরিকল্পনা বিবেচনা করা হচ্ছিল, তার মধ্যে একটি হলো গাজার যেসব এলাকা এখনও সামরিক নিয়ন্ত্রণে নেই, সেগুলো পর্যায়ক্রমে দখল করা।
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, গাজার নির্দিষ্ট অঞ্চলের ফিলিস্তিনিদের জন্য এলাকা ছাড়ার সতর্কতা জারি করা হতে পারে। সামরিক বাহিনী প্রবেশের আগে তাদের কয়েক সপ্তাহ সময় দেওয়া হতে পারে।
ভূখণ্ডটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হলে তা ২০০৫ সালের একটি সিদ্ধান্তকে পাল্টে দেবে। ওই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ইসরায়েল গাজা থেকে তাদের নাগরিক ও সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। তবে এর সীমান্ত, আকাশসীমা এবং পরিষেবাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রেখেছিল।