‘আমি পরোয়া করি না’: যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিলের জবাবে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্তকে পাত্তা না দিয়ে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো পাল্টা অভিযোগ করেছেন যে, ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধ নিয়ে সমালোচনা করায় ওয়াশিংটন এ সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।
এ ভিসা নিষেধাজ্ঞা ১৯৪৭ সালের জাতিসংঘ সদর দপ্তর চুক্তির লঙ্ঘন তিনি একথার মাধ্যমে সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন, যে চুক্তিতে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে বিদেশি কূটনীতিকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সে দেওয়া এক পোস্টে পেত্রো লেখেন, "আমার কাছে আর যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ভিসা নেই। আমি পরোয়া করি না। আমার ভিসার দরকার নেই … কারণ আমি শুধু কলম্বিয়ার নাগরিক নই, ইউরোপীয় নাগরিকও বটে। আমি নিজেকে বিশ্বের একজন স্বাধীন মানুষ হিসেবে বিবেচনা করি।"
তিনি আরও যোগ করেন, "গণহত্যার নিন্দার জন্য ভিসা বাতিল করা প্রমাণ করে, যুক্তরাষ্ট্র আর আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করছে না।"
সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘের এক অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যার পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে ইসরায়েল বারবার এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং বলছে, তারা আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ করছে।
তবে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে উঠছে ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে।
গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের বাইরে ফিলিস্তিনের পক্ষে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পেত্রো। তিনি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির অগ্রাধিকার দিয়ে একটি বৈশ্বিক সশস্ত্র বাহিনী গঠনের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে মার্কিন সেনাদের উদ্দেশে বলেন, "মানুষের দিকে অস্ত্র তাক করবেন না। ট্রাম্পের আদেশ অমান্য করুন, মানবতার আদেশ মেনে চলুন।"
পেত্রোর এই বক্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্সে পোস্ট দিয়ে জানায়, "উসকানিমূলক ও বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের কারণে" তাঁর ভিসা বাতিল করা হবে।
কলম্বিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় জানায়, ভিসাকে কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা জাতিসংঘের চেতনার পরিপন্থী। জাতিসংঘের অনুষ্ঠানসমূহে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করাই হওয়া উচিত প্রধান অঙ্গীকার।
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, "জাতিসংঘের জন্য এমন একটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ স্বাগতিক দেশ খুঁজে বের করা জরুরি, যেখানে জাতিসংঘ নিজেই সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কর্মকর্তাদের প্রবেশের অনুমতি দিতে পারবে।"
তবে এবারই প্রথম কোনো কলম্বিয়ান প্রেসিডেন্টের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল করা হলো না। এর আগে ১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এরনেস্তো সাম্পেরের ভিসা বাতিল করেছিল ওয়াশিংটন। কলম্বিয়ার একটি কুখ্যাত মাদক চক্র তাঁর নির্বাচনি প্রচারে অর্থায়ন করেছে—এমন অভিযোগ ওঠার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
তবে এবারের প্রেক্ষাপটটাই আলাদা। ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই বোগোটা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। এ বছরের শুরুর দিকে পেত্রো যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃতদের কলম্বিয়ায় ফেরত পাঠানোর ফ্লাইট বন্ধ করে দেন। এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিলে দুই দেশ পরবর্তীতে সমঝোতায় পৌঁছায়।
জুলাইয়ে দুই দেশই নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নেয়, যখন পেত্রো অভিযোগ করেন যে মার্কিন কর্মকর্তারা তাঁর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র করছে। ওয়াশিংটন এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়েছিল।
ওয়াশিংটনের সাথে টানাপোড়েনের মধ্যেই ২০২৪ সালে পেত্রো ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং দেশটিতে কলম্বিয়ান কয়লা রপ্তানি নিষিদ্ধ করেন।