ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করতেই সোমালিল্যান্ডকে ইসরায়েলের স্বীকৃতি—বলছে সোমালিয়া, প্রত্যাহারের দাবি
সোমালিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অঞ্চল সোমালিল্যান্ডকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সোমালিয়া। এই পদক্ষেপকে 'আগ্রাসন' হিসেবে অভিহিত করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে দেশটি।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোমালিয়ার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলী ওমর বলেন, সরকার এই 'রাষ্ট্রীয় আগ্রাসন' এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইসরায়েলের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সব ধরনের কূটনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
গত শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় ইসরায়েল। এর পরপরই আফ্রিকা ও আরব দেশগুলো থেকে তীব্র নিন্দা জানানো হয়। একই সঙ্গে আশঙ্কা করা হচ্ছে, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের কথিত ইসরায়েলি পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
সোমালিয়ার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলী ওমর বলেন, 'আমাদের সরকার এবং জনগণ আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ কখনোই গ্রহণযোগ্য বা সহ্য করা হবে না। আমাদের সরকার ইসরায়েলকে তাদের এই বিভাজক কর্মকাণ্ড প্রত্যাহার করে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছে।'
আলী ওমর অভিযোগ করেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে সোমালিল্যান্ডে স্থানান্তরের লক্ষ্যেই ইসরায়েল এই স্বীকৃতির পথ বেছে নিয়েছে। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, 'এর অন্যতম কারণ হলো গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করা। এই বিষয়ে ইসরায়েলের লক্ষ্য সবারই জানা।'
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সোমালিয়ার এই আশঙ্কাকে সমর্থন জানিয়েছে। তারা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, এর আগে ইসরায়েল সোমালিল্যান্ডকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, যাকে ফিলিস্তিন 'রেড লাইন' বা সীমা লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করেছে।
১৯৯১ সালে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের পর সোমালিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সোমালিল্যান্ড। নিজেদের আলাদা পতাকা, মুদ্রা ও সংসদ থাকলেও জাতিসংঘের কোনো সদস্য রাষ্ট্র এতদিন তাদের স্বীকৃতি দেয়নি।
সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আবদিরাহমান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহি (সিরো) ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তিনি দাবি করেন, এটি কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয় এবং আঞ্চলিক শান্তির জন্য হুমকিও নয়।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই কূটনৈতিক ঘটনাকে 'আব্রাহাম একর্ডস'-এর চেতনার অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্টকে ইসরায়েল সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যা সিরো গ্রহণ করেছেন।
ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ইস্যুতে নেতানিয়াহুর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তিনি নিউ ইয়র্ক পোস্টকে জানিয়েছেন, তিনি এই বিষয়ে ইসরায়েলকে অনুসরণ করবেন না। ট্রাম্পের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন সোমালিয়ার গণপূর্ত মন্ত্রী আইয়ুব ইসমাইল ইউসুফ।
আফ্রিকান ইউনিয়নের (এইউ) চেয়ারপারসন মাহমুদ আলী ইউসুফ সোমালিল্যান্ডকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির যেকোনো উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, এটি সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক নজির স্থাপন করবে।
আরব লিগের মহাসচিব আহমেদ আবুল ঘেইত একে আরব ও আফ্রিকান রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ওপর ইসরায়েলের উসকানিমূলক হামলা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
শুক্রবার স্বীকৃতির ঘোষণার পর সোমালিল্যান্ডের রাজধানী হারগিসার রাস্তায় হাজারো মানুষ উল্লাস প্রকাশ করে। অনেকে একে ৩০ বছরের কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার অবসান হিসেবে দেখছেন। এ সময় জাতীয় জাদুঘরে ইসরায়েলের পতাকাও টাঙানো হয়।
উল্লেখ্য, ঐতিহাসিকভাবেই সোমালিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ। স্নায়ুযুদ্ধের সময় ইসরায়েল সোমালিয়ার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইথিওপিয়াকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করেছিল।
