সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে ফ্রান্স: মাখোঁ

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বরে ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। জি-৭ জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স-ই প্রথম এই সিদ্ধান্ত নিল। খবর বিবিসি'র।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে মাখোঁ জানান, নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এই স্বীকৃতি ঘোষণা করা হবে।
তিনি লিখেছেন, 'গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করাই এখন সবচেয়ে জরুরি। সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। শান্তি সম্ভব। আমাদের এখনই যুদ্ধবিরতি দরকার, সকল জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং গাজার জনগণের জন্য ব্যাপক মানবিক সহায়তা পাঠাতে হবে।'
ফ্রান্সের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার প্রেক্ষাপটে এই স্বীকৃতি 'সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত করা'র শামিল।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, মাখোঁর সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র 'জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান' করছে। তিনি একে 'দায়িত্বজ্ঞানহীন' পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন।
জি-৭ হলো বিশ্বের সাতটি বৃহৎ শিল্পোন্নত দেশের একটি জোট। এর সদস্য দেশগুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, কানাডা ও জাপান।
বৃহস্পতিবার এক্স-এ দেওয়া আরও একটি পোস্টে মাখোঁ লেখেন, 'মধ্যপ্রাচ্যে ন্যায়সংগত ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তির প্রতি ঐতিহাসিক অঙ্গীকারের জায়গা থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ফ্রান্স ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের হামাসকে নিরস্ত্র করতে হবে, গাজা অঞ্চলকে নিরাপদ করতে হবে এবং তা পুনর্গঠন করতে হবে।'
মাখোঁ বলেন, 'সবশেষে আমাদের একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে, তার দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে। এবং নিশ্চিত করতে হবে, এই রাষ্ট্র নিরস্ত্রীকরণ মেনে নিয়ে এবং ইসরায়েলকে পূর্ণ স্বীকৃতি দিয়ে গোটা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখবে। এর কোনো বিকল্প নেই।'
মাখোঁ এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কাছে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন।
ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় আব্বাসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হুসেইন আল-শেইখ বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ফ্রান্সের অঙ্গীকার এবং ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের অধিকারের প্রতি তাদের সমর্থনকে প্রতিফলিত করে।' বার্তা সংস্থা এএফপি এই তথ্য জানিয়েছে।
অন্যদিকে নেতানিয়াহু এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, '৭ অক্টোবরের হত্যাযজ্ঞের পর তেল আবিবের পাশেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।'
তিনি আরও লেখেন, 'এই পরিস্থিতিতে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ইসরায়েলকে ধ্বংসের জন্য একটি উৎক্ষেপণক্ষেত্রে পরিণত হবে—ইসরায়েলের পাশে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থানের উদ্দেশ্য এতে নেই। স্পষ্ট করে বলি, ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের পাশাপাশি নয়, বরং ইসরায়েলের পরিবর্তে একটি রাষ্ট্র চায়।'
হামাস ফ্রান্সের এই সিদ্ধান্তকে 'একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ' হিসেবে আখ্যায়িত করে বিশ্বের সকল দেশকে ফ্রান্সের পথ অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে বর্তমানে ১৪০টির বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে স্পেন ও আয়ারল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে এই স্বীকৃতি দিয়েছে।
তবে, ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাজ্যসহ আরও কয়েকটি দেশ এখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়নি।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার জানান, তিনি শুক্রবার ফ্রান্স ও জার্মানির নেতাদের সঙ্গে 'জরুরি ফোনালাপ' করবেন—'যাতে দ্রুত সহিংসতা বন্ধে কী করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা যায়।'
স্টারমার বলেন, রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি 'ফিলিস্তিনি জনগণের এক অখণ্ড অধিকার'। তিনি আরও বলেন, একটি যুদ্ধবিরতি 'আমাদের ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির পথে এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথে এগিয়ে নিতে পারে।'
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফ্রান্সের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এই অবস্থান 'আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সেই ঐকমত্যকে পুনরায় নিশ্চিত করেছে, যার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।'
হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হন এবং আরও ২৫১ জনকে জিম্মি করে নেওয়া হয়। এরপরই গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে অন্তত ৫৯ হাজার ১০৬ জন নিহত হয়েছেন।
এই সময়ে গাজার বেশিরভাগ অংশই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, গাজা শহরে প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন এখন অপুষ্টিতে ভুগছে এবং প্রতিদিনই এ হার বাড়ছে।
অন্যদিকে, ১০০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ত্রাণ ও মানবাধিকার সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, গাজা উপত্যকায় ব্যাপক দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তারা বিশ্ব নেতাদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েল গাজায় প্রবেশ করা সব ধরনের পণ্য ও সহায়তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের দাবি, সেখানে কোনো অবরোধ নেই। বরং তারা গাজায় অপুষ্টির জন্য হামাসকেই দায়ী করছে।