ইরান নিয়ে ট্রাম্পের হুমকি, ‘শাসন পরিবর্তনের বিশৃঙ্খলা’ নিয়ে উদ্বেগে মাখোঁ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইরান ইস্যুতে মতভেদ প্রকাশ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। মঙ্গলবার (১৭ জুন) তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইরানে সামরিক হামলা চালিয়ে শাসন পরিবর্তনের চেষ্টা করা হলে দেশটি ও গোটা অঞ্চল ভয়াবহ বিশৃঙ্খলার মুখে পড়বে।
সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মাখোঁ বলেছিলেন, ট্রাম্প সম্ভবত ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে জি-৭ সম্মেলন থেকে আগেভাগে বেরিয়ে গেছেন।
তবে মঙ্গলবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প মাখোঁর দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, তার প্রস্থান যুদ্ধবিরতির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। বরং এ দিন সকাল থেকেই তিনি ইরানকে 'নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ'-এর আহ্বান জানিয়ে আগের চেয়ে আরও কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করেন।
ইসরায়েল-ইরান আকাশযুদ্ধ মঙ্গলবার পঞ্চম দিনে গড়ালে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের 'ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে'। এদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা থামাতে অভিযান চালাচ্ছে। যদিও তেহরান এ অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছে।
মাখোঁ বলেন, সোমবার কানাডায় জি-৭ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি যুদ্ধবিরতির চেষ্টা করছেন, কিন্তু মঙ্গলবার এসে তার মনোভাব বদলে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
মাখোঁ বলেন, 'আমরাও চাই না ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করুক। কিন্তু সবচেয়ে বড় ভুল হবে শাসন পরিবর্তনের জন্য সামরিক হামলা চালানো। এটি কেবল বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। আমাদের দায়িত্ব এখন আলোচনায় ফিরে যাওয়া এবং পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট একটি পথ নির্ধারণ করা।'
তিনি বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে আন্তর্জাতিক নজরদারির আওতায় আনতে হবে এবং তাদের ব্যালিস্টিক অস্ত্রভান্ডার হ্রাস করতে হবে। তবে তিনি শক্তভাবে বলেন, জ্বালানি অবকাঠামো, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা বা সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে বিরোধিতা করছেন, যেগুলো শেষ পর্যন্ত শাসন পরিবর্তনের দিকে যেতে পারে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষমতাচ্যুত ও ২০০৬ সালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের মতো পরিণতির হতে পারে।
জবাবে মাখোঁ বলেন, '২০০৩ সালে ইরাকে যা ঘটেছে, তা কেউ কি ভালো সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন? পরবর্তী দশকে লিবিয়ায় যা হয়েছিল, তা কি সঠিক ছিল? না!'
তিনি আরও বলেন, 'আমি আমাদের মধ্যপ্রাচ্যের ইরাক, লেবানন ও অন্যান্য দেশের বন্ধুদের কথাও ভাবছি। আমরা তাদের নিরাপত্তা হুমকি থেকে রক্ষা করতে চাই। কিন্তু তারা বিশৃঙ্খলা নয়, স্থিতিশীলতা চায়।'
মাখোঁর মন্তব্যের বিপরীত সুরে কথা বলেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎর্স। তিনি বলেছেন, 'ইসরায়েল তার পশ্চিমা মিত্রদের হয়ে 'নোংরা কাজ' করছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া এটি ব্যর্থ হতে পারে।'
ইসরায়েল ইতিমধ্যেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে। তবে মার্কিন সামরিক সহায়তা ছাড়া তারা সম্ভবত ফারদো পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে পারবে না। এই স্থাপনাটি পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত এবং সেখানে ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা ৯০ শতাংশ সমৃদ্ধ 'অস্ত্রমান' ইউরেনিয়ামের কাছাকাছি।
মেৎর্স জার্মান সম্প্রচারমাধ্যম জেডডিএফ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'ইসরায়েলি বাহিনীর সেই সক্ষমতা নেই। তারা প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্রে ঘাটতির মুখে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তা আছে।'
অন্য এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আলোচনা টেবিলে ফিরতে ইরান রাজি হলে খুব শিগগিরই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।