যুক্তরাষ্ট্রের বাংকার ধ্বংসকারী বোমা থামাতে নতুন কৌশল বাৎলালেন চীনা বিজ্ঞানীরা

যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক বাংকার বাস্টার বা শক্তিশালী ফিউজযুক্ত বোমাগুলো— বোমারু বিমান থেকে নিক্ষেপের পর তুলনামূলক কম গতিতে ধেয়ে আসলেও, এগুলোর ওয়ারহেড বা বিস্ফোরকবোঝাই অংশ ভীষণ শক্তিশালী। ওয়ারহেড আবার মোড়ানো থাকে পুরু আর্মার বা ইস্পাতের আবরণে। বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল এমন দেশগুলোর পক্ষে এই বোমাগুলোর সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
গত ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমানগুলো ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ম্যাসিভ অর্ডেন্যান্স পেনেট্রেটর (এমওপি) বাংকার বাস্টার বোমা ফেলে। এসময় ইরানের তেমন কোনো প্রতিরোধ লক্ষ্য করা যায়নি বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সংবাদে উঠে এসেছে।
তবে চীনের সামরিক গবেষকেরা এই বোমাগুলো ঠেকাতে একটি ব্যতিক্রমধর্মী কৌশলের কথা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এমওপি ধ্বংস করতে আক্রমণ করতে হবে বোমার দুর্বল অংশে বা পাশ থেকে। কারণ, বোমার নাকের দিকটা অত্যন্ত শক্তিশালী আর্মার দ্বারা রক্ষা করা হলেও, এর পাশে থাকে পাতলা স্টিলের প্রলেপ, যার পুরুত্ব মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার। ফলে, এক-দুটি অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট শেল বা বিমানবিধ্বংসী কামানের গোলা দিয়েই তা ভেদ করা সম্ভব।
চীনা অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নরিনকোর— নর্থওয়েস্ট ইনস্টিটিউট অব মেকানিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং -এর গবেষক চুই শিংইয়ের নেতৃত্বাধীন একটি গবেষক দল 'জার্নাল অব গান লঞ্চ অ্যান্ড কন্ট্রোল'-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন।
তবে এই গবেষণায় তারা চীনের নিজস্ব কোনো অস্ত্র নয়, বরং সুইজারল্যান্ডের নির্মিত ওরলিওকন জিডিএফ বিমানবিবংসী কামানকে মডেল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এই অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট গান— ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ ব্যবহার করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই কামান মাত্র দুই সেকেন্ডে ৩৬টি শেল ছুঁড়তে পারে। ১,২০০ মিটার দূরত্বে এই অস্ত্র দিয়ে বাংকার বাস্টার বোমাকে ধবংস করার সম্ভাবনা প্রায় ৪২ শতাংশ।
গবেষকদের মতে, বোমার ডিম্বাকৃতির সামনের অংশ সরাসরি আঘাত প্রতিহত করতে সক্ষম হলেও— পাশ দিয়ে আঘাত করলে তা ভেদ হয়ে যায়। তবে এর জন্য গোলার আঘাতের কোণ ৬৮ ডিগ্রির নিচে হতে হবে। এর বেশি হলে শেলগুলো আঘাতের ফলে ছিটকে সরে যায়।
তবে একটি চ্যালেঞ্জও রয়েছে: এই বোমাগুলো ভূপাতিত করতে হলে কামানগুলোকে বোমার গতিপথের একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে আগে থেকেই তাক করে রাখতে হবে। গবেষকেরা একে বলছেন "স্নাইপার ফায়ার কন্ট্রোল ট্যাকটিক্স"। এর মাধ্যমে সার্ভো সিস্টেমের ওপর চাপ কমে এবং প্রতিক্রিয়ার সময় নেমে আসে মাত্র ১ মিলিসেকেন্ডে। তারা বলছেন, এই কৌশল বর্তমান প্রযুক্তি দিয়েই প্রয়োগযোগ্য।
অবশ্য বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে এ ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্থাপন ও বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রসহ শক্তিশালী বিমান ক্ষমতাসম্পন্ন দেশগুলো প্রথমে সুনির্দিষ্ট হামলায় এই ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়, তারপরই পাঠায় বোমারু বিমান।
আরেকটি বড় সমস্যা হলো, স্মার্ট বোমাগুলো তাদের গন্তব্যের খুব কাছাকাছি এসে চূড়ান্ত গতিপথ পরিবর্তন করে ফেলে— ফলে আগেই নির্ধারিত আঘাতের বিন্দু ভুল হয়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে কামানের গোলা দিয়ে আঘাতের সঠিক সময় পাওয়াও যাবে খুবই কম, বলতে গেলে প্রায় চোখের পলকের মধ্যেই যা করার করতে হবে।
উড়ে আসা বোমার দিকে কামান দিয়ে এই ধরনের নির্ভুল আঘাত হানার সক্ষমতার জন্য চাই— অত্যাধুনিক রাডার ও কম্পিউটার যা চীনের কাছে রয়েছে, নেই ইরান বা অন্যান্য ছোট দেশের।
তাই চীনের এই গবেষণায় সম্পৃক্ত না থাকা এক বেইজিং-ভিত্তিক পদার্থবিজ্ঞানী বলেছেন, "যা চীনে কাজ করে, তা সব দেশে কাজ করবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।"
বিশ্লেষকদের মতে, এই গবেষণা ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগত প্রতিরোধ সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হলেও— বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে এর প্রয়োগ নির্ভর করবে সামগ্রিক কৌশল, প্রস্তুতি এবং পরিস্থিতির ওপর।