ট্রাম্পের শুল্ক নীতি হচ্ছে ‘ব্ল্যাকমেইল’, কোনো বিদেশির নির্দেশ মানবেন না লুলা

শুল্ক নিয়ে কোনো বিদেশি নির্দেশনা মানবেন না বলে জানিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। এ কথা তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইঙ্গিত করে বলেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির মুখে আরোপিত শুল্ককে 'অগ্রহণযোগ্য ব্ল্যাকমেইল' বলে অভিহিত করেন।
দুটি আলাদা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে লুলার এ মন্তব্যে দু'দেশের নেতৃত্বের মধ্যে চলমান বিবাদ আরও তীব্র হয়। যুক্তরাষ্ট্র যখন গত সপ্তাহে ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তখন থেকেই এই উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
আগস্ট থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই শুল্ক আরোপের কারণ হিসেবে ট্রাম্প বলেন, এটি ব্রাজিলে সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর প্রতি আচরণ এবং মার্কিন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্রাজিলের তথাকথিত অবিচারমূলক বাণিজ্য অনুশীলনের জবাব।
এই শুল্ক ঘোষণার কয়েকদিন আগেই লুলা ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেন, সে হলেন এমন 'সম্রাট' যাকে বিশ্বের কেউ চায় না।
লুলা এবং তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং ব্রাজিলের সার্বভৌমত্বের পক্ষে জোর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
এক বক্তৃতায় লুলা বলেন, 'এই প্রেসিডেন্টকে কোনো বিদেশি নির্দেশ দেবে না।' এ সময় তিনি 'গ্রিংগো' শব্দটি ব্যবহার করেন, যা ব্রাজিলে বিদেশিদের বোঝাতে সাধারণভাবে ব্যবহার হয় এবং লাতিন আমেরিকার অন্যান্য অঞ্চলের মতো শব্দটি অবমাননাকর নয়।
তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর বিধিনিষেধ ও কর আরোপের পরিকল্পনা ব্রাজিল বাস্তবায়ন করবে।
গোইয়াস রাজ্যে বামপন্থী ছাত্রকর্মীদের এক সমাবেশে লুলা বলেন, এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো 'মত প্রকাশের স্বাধীনতার' আড়ালে সহিংসতা ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর মাধ্যম হয়ে উঠেছে'।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে টেলিভিশন ও রেডিও ভাষণে লুলা বলেন, ব্রাজিলের সার্বভৌমত্ব রক্ষার অর্থ হচ্ছে বিদেশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর কার্যকলাপ থেকেও নিজেদের রক্ষা করা।
প্রায় পাঁচ মিনিটের এই ভাষণে লুলা জানান, শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্রাজিল আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং গত মে-তে ব্রাজিল একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিল।
লুলা বলেন, 'আমরা একটি জবাব প্রত্যাশা করেছিলাম, কিন্তু এর বদলে যা পেয়েছি তা হলো অগ্রহণযোগ্য ব্ল্যাকমেইল—যা এসেছে ব্রাজিলের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি হুমকি ও ব্রাজিল-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে।'
ব্রাসিলিয়ার সরকার যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে—এমন শিল্প গোষ্ঠী ও কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং আলোচনায় অগ্রগতি না হলে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সিএনএন ব্রাজিলকে আলাদাভাবে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌরো ভিয়েরা বলেন, লুলা ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী, যদিও এখনো তাদের দেখা হয়নি।
তিনি বলেন, 'যদি পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে, তবে তাদের মধ্যে কথা হবে।'
লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় অর্থনীতির রাষ্ট্রপতি হিসেবে লুলা তার তৃতীয় মেয়াদে রয়েছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্যিক বিরোধ শুরু হওয়ার পর গত সপ্তাহে লুলার জনপ্রিয়তা আবারও বাড়তে শুরু করেছে।