যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আগে কর্মীদের ভিসা সমস্যার সমাধান চায় দ.কোরিয়া
যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত দক্ষিণ কোরীয় কর্মীদের ভিসাজনিত সমস্যা সমাধান না হলে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি ডলারের বিশাল বিনিয়োগ প্যাকেজ আটকে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো হিউন জানান, সিউল বিষয়টি নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কাজ করছে।
এই পরিস্থিতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতি এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের আহ্বানের মধ্যেকার সংঘাতকে স্পষ্ট করে তুলেছে।
সম্প্রতি জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে কোরীয় মালিকানাধীন একটি ব্যাটারি প্ল্যান্টে মার্কিন কর্তৃপক্ষের অভিযানের পর ভিসা ও শুল্ক নিয়ে বিরোধ মেটাতে ওয়াশিংটনের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়িয়েছে সিউল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো হিউন বলেন, 'এটি যুক্তরাষ্ট্রে কোরীয় বিনিয়োগের জন্য কোনো পূর্বশর্ত নয়, তবে বাস্তবতার নিরিখে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, মূল বিনিয়োগ শুরু হওয়ার আগেই যেন ভিসা সমস্যার একটি সমাধান হয়।'
এই উত্তেজনার সূত্রপাত হয় চলতি মাসের শুরুতে। জর্জিয়ায় নির্মাণাধীন একটি ব্যাটারি প্ল্যান্টে অভিবাসন কর্তৃপক্ষের অভিযানে ৩০০ জনেরও বেশি কোরীয় কর্মীকে আটক করা হয়। পরে তাদের মুক্তি দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এই ঘটনার পর নতুন কারখানা স্থাপন এবং মার্কিন কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য দক্ষ কোরীয় কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে কাজের সুযোগ দিতে একটি নতুন ভিসা ক্যাটাগরি তৈরির দাবি তুলেছে কোরীয় কোম্পানিগুলো।
তবে অভিযানটির পর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং সতর্ক করে বলেন, এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যৎ বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করতে পারে। তার সরকার বিনিয়োগ-সম্পর্কিত ভিসা প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে ওয়াশিংটনের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে বলে জানান তিনি।
এ সপ্তাহে ওয়াশিংটন থেকে আলোচনা শেষে ফেরা বাণিজ্যমন্ত্রী ইও হান-কু জানান, তিনি কোরীয় কর্মীদের ভিসা সীমাবদ্ধতাসহ বিনিয়োগ পরিকল্পনার জন্য হুমকিস্বরূপ অন্যান্য বাধাগুলোর কথাও মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরেছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র কোরীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করলে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। গত জুলাইয়ে শুল্ক ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে একটি অনানুষ্ঠানিক চুক্তিও হয়। তবে বৃহত্তর বাণিজ্য চুক্তির আওতায় অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধান করে সেই চুক্তি চূড়ান্ত করতে এখনো আলোচনা চলছে।
ট্রাম্প জুলাই মাসে দাবি করেছিলেন, চুক্তির আওতায় দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ হাজার কোটি ডলারের একটি বিনিয়োগ প্যাকেজ দেবে, যার মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। তবে দক্ষিণ কোরিয়া বলছে, এটি মূলত একটি 'তহবিল', যা জাহাজ নির্মাণ, সেমিকন্ডাক্টর, ব্যাটারি ও বায়োটেকনোলজির মতো খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কোরীয় কোম্পানিগুলোর প্রবেশে সহায়তা করবে।
মার্কিন কর্তৃপক্ষের এই অভিযানে আটকের সময় কোরীয় কর্মীদের হাতে হাতকড়া পরানোর ছবি টেলিভিশনে প্রচারিত হলে দক্ষিণ কোরিয়ায় তীব্র জনরোষ তৈরি হয়। অনেকেই বিষয়টিকে মিত্র দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখছেন।
এর প্রতিবাদে সিউলে বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পকে ব্যঙ্গ করে এবং ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে 'বিনিয়োগের টোপ দিয়ে কর্মীদের অপরাধী বানানোর' অভিযোগ আনে। একজন বিক্ষোভকারীর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল: 'আমাদের বিনিয়োগ করতে বলে এখন গ্রেপ্তার করছ! বন্ধুর সঙ্গে কি এভাবেই আচরণ করে?'
ঘটনার পর পরিচালিত এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, দেশটির অন্তত ৬০ শতাংশ মানুষ মার্কিন কর্তৃপক্ষের এই অভিযানের বিরোধিতা করেছেন।
