বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার খুব কাছাকাছি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ওয়াশিংটন ও দিল্লি বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার 'খুব কাছাকাছি' রয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে এ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা চলছে।
বুধবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা ভারতের সঙ্গে এমন একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছেছি, যার মাধ্যমে তারা তাদের বাজার উন্মুক্ত করে দেবে।'
পরে রিয়েল আমেরিকাস ভয়েস নামক এক সম্প্রচারমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আসন্ন বাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি আবারও বলেন, ভারতের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার 'খুব কাছাকাছি'।
উভয় পক্ষই চুক্তি নিয়ে আশাবাদী। মঙ্গলবার ট্রাম্প একটি সম্ভাব্য অগ্রগতির ইঙ্গিত দিয়ে বলেন যে, এই চুক্তির অংশ হিসেবে আমেরিকা ভারতীয় বাজারে "প্রবেশাধিকার" পাবে।
চড়া শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক মাস ধরে ব্যাপক দরকষাকষি চালিয়ে যাচ্ছে।
বৃহত্তর বাণিজ্য নীতির অংশ হিসেবে ২ এপ্রিল ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৭ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ শুল্কারোপ প্রথমে ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়, পরে যুক্তরাষ্ট্র এই সময়সীমা ১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ায়।
ভারত সরকারের সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য একটি ভারতীয় প্রতিনিধিদল এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে।
গত মাসে ভারতীয় কর্মকর্তাদের একটি দল আরও এক দফা আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে তাদের অবস্থান দীর্ঘায়িত করেছিল। এতে চুক্তিটি আটকে থাকার কারণ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি তৈরি হয়েছিল।
চুক্তি নিয়ে উভয় পক্ষই আশাবাদী মনোভাব প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার ট্রাম্প সম্ভাব্য অগ্রগতির ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, এ চুক্তির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বাজারে 'প্রবেশাধিকার' পাবে।
ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সাম্প্রতিক চুক্তি আওতায় মার্কিন কোম্পানিগুলোকে সম্পূর্ণ প্রবেশাধিকার দিয়েছে জাকার্তা। সেই চুক্তির উদাহরণ টেনে ট্রাম্প বলেন: 'ভারতও মূলত সেই পথেই এগোচ্ছে। আমরা ভারতে প্রবেশাধিকার পেতে চলেছি।'
ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল চলতি সপ্তাহে বলেছেন, আলোচনা দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। তবে কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন, ভারত কোনো সময়সীমার ভিত্তিতে বাণিজ্য চুক্তি করে না এবং দেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে কেবল এমন চুক্তিতেই স্বাক্ষর করবে।
দুই পক্ষ মাসাধিককাল ধরে আলোচনা চালালেও কৃষি খাতে প্রবেশাধিকার, গাড়ির যন্ত্রাংশ ও ভারতীয় ইস্পাতের ওপর শুল্কের মতো কয়েকটি মূল বিতর্কিত বিষয় এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
ওয়াশিংটন বহু বছর ধরেই ভারতের কৃষি খাতে বৃহত্তর প্রবেশাধিকারের জন্য চাপ দিয়ে আসছে, কারণ তারা একে বিশাল এক অব্যবহৃত বাজার হিসেবে দেখে। কিন্তু ভারত খাদ্য নিরাপত্তা, লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষকের জীবন-জীবিকা ও তাদের স্বার্থের কথা উল্লেখ করে কঠোরভাবে এই খাতকে রক্ষা করে এসেছে।
কিছুদিন আগেও যুক্তরাষ্ট্র ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। দুদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৯০ বিলিয়ন ডলার। ট্রাম্প ও মোদি এ অঙ্ককে দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।
ভারত ইতিমধ্যে বুর্বন হুইস্কি ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে। তবু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের ৪৫ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, যা কমাতে ট্রাম্প বিশেষভাবে আগ্রহী।
এদিকে ট্রাম্প সম্প্রতি চলতি বছরের শুরুর দিকে নেওয়া তার আগ্রাসী শুল্ক পরিকল্পনা নতুন করে সামনে এনেছেন। কয়েক ডজন দেশকে সতর্কীকরণ চিঠি পাঠিয়ে ১ আগস্ট থেকে বড় অঙ্কের শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
এই তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রধান বাণিজ্য অংশীদার—ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, মেক্সিকো, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া—রয়েছে।
বুধবার ভারতের সঙ্গে চুক্তির পাশাপাশি তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শীঘ্রই 'ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও চুক্তি করতে পারে'।