নারী নিপীড়নের অভিযোগে ২ তালেবান নেতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

আফগানিস্তানে নারী ও কন্যাশিশুদের নিপীড়নের অভিযোগে তালেবানের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। খবর বিবিসি'র।
আইসিসি জানিয়েছে, ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে তাদের নারী ও কিশোরীদের প্রতি আচরণ মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়ে—এ বিষয়ে 'যুক্তিসংগত প্রমাণ' রয়েছে। এই অভিযোগে তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এবং প্রধান বিচারপতি আবদুল হাকিম হাক্কানির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
তালেবান ২০২১ সালে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ করে এবং নারীদের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে কাজ করায় বাধা দেয়। এসব নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে দুই নেতার বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নিয়েছে আইসিসি।
তবে এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তালেবান সরকার। তারা বলেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে তারা স্বীকৃতি দেয় না। পরোয়ানাকে তারা 'শত্রুতামূলক পদক্ষেপ' এবং 'বিশ্বের মুসলমানদের বিশ্বাসের প্রতি অবমাননা' হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
তালেবান শাসনামলে নারীদের একা ভ্রমণ সীমিত করা হয়েছে, পুরুষ অভিভাবক ছাড়া দূরে যেতে দেওয়া হয় না। এমনকি প্রকাশ্যে নারীদের কণ্ঠস্বরও সীমিত করার নির্দেশ জারি কড়া হয়েছে।
এক বিবৃতিতে আইসিসি জানিয়েছে, 'যদিও তালেবান সরকার পুরো জনগণের ওপর কিছু নিয়ম আরোপ করেছে, তবে নারীদের শুধু নারী হওয়ার কারণে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে এবং তাদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করেছে।'
জাতিসংঘ এর আগেই তালেবানের এসব পদক্ষেপকে 'লিঙ্গবৈষম্যমূলক' বলে মন্তব্য করেছিল।
তবে তালেবান সরকার দাবি করেছে, তারা আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামী আইনের আলোকে নারীদের অধিকারকে সম্মান করে।
উল্লেখ্য, আখুন্দজাদা ২০১৬ সালে তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হন এবং ২০২১ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিদেশি বাহিনী আফগানিস্তান ছাড়ার পর 'ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান'-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৮০-এর দশকে তিনি আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, হাক্কানি ছিলেন তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবানের আলোচনায় প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের মতো গুরুতর অপরাধের তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে কাজ করে আইসিসি। বিশেষত তখনই যখন সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষ এসব অপরাধের বিচার করতে ব্যর্থ হয় বা ইচ্ছুক নয়।
তবে আইসিসির নিজস্ব কোনো পুলিশ বাহিনী নেই। ফলে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রথম আলোচনায় আসে দুই তালেবান নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি। তখন আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান অভিযোগ করেন,'আফগান কিশোরী ও নারীদের ওপর নির্যাতনের পাশাপাশি, যাদের লিঙ্গ পরিচয় তালেবানদের মতাদর্শের সঙ্গে মেলে না কিংবা যারা তাদের পক্ষ নেয়—তাদেরও নির্যাতনের অপরাধে তালেবান দায়ী।'
সেই সময় তালেবান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গ্রেপ্তারি হুমকির প্রতিক্রিয়ায় জানায়, 'আইসিসি আফগানিস্তানে ২০২১ সালের আগ পর্যন্ত মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিদেশি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় মিত্রদের 'নানা ধরনের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ' উপেক্ষা করছে।
এদিকে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তালেবান নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি আইসিসিকে আহ্বান জানিয়ে বলেছে, 'তালেবানদের অন্যান্য নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের পাশাপাশি খোরাসান শাখার আইএস যোদ্ধাদের, সাবেক আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের এবং মার্কিন বাহিনীর হাতে নির্যাতিতদেরও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'আফগানিস্তানে সহিংসতা ও দায়মুক্তির চক্র বন্ধ করতে হলে, সব পক্ষের নিপীড়নের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের জন্য সমানভাবে বিচার পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।'