যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে হামাসের সিদ্ধান্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জানা যাবে: ট্রাম্প

গাজায় ৬০ দিনের সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব হামাস গ্রহণ করবে কি না, তা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জানা যাবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তিতে হামাস রাজি হয়েছে কি না, বৃহস্পতিবার সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, 'দেখা যাক কী হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা জানতে পারব।'
এই সপ্তাহের শুরুতে কাতার ইসরায়েল ও হামাসের কাছে একটি হালনাগাদ প্রস্তাব তুলে ধরে। ইসরায়েল মঙ্গলবার সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।
অন্যদিকে হামাস জানিয়েছে, তারা অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করে পরে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে। তবে এতে কত সময় লাগবে, সে বিষয়ে কিছু জানায়নি।
ট্রাম্প জোর দিয়ে যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ইসরায়েল 'প্রয়োজনীয় শর্ত নিয়ে সম্মত হয়েছে', যার ফলে ৬০ দিনের জন্য সংঘাত বন্ধে একটি চুক্তি চূড়ান্ত করার পথ খুলে গেছে।
আরও পড়ুন: গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির শর্তে রাজি হয়েছে ইসরায়েল: ট্রাম্প
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম 'ট্রুথ সোশ্যাল'-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প হামাসকে প্রস্তাবটি গ্রহণের আহ্বান জানান।
তিনি লেখেন, 'মধ্যপ্রাচ্যের মঙ্গলের জন্য আমি আশা করি হামাস এই চুক্তিটি গ্রহণ করবে, কারণ এর চেয়ে ভালো কিছু আর আসবে না—পরিস্থিতি কেবল আরও খারাপই হবে।'
প্রস্তাবটি এগিয়ে নিতে কাতার ও মিসরের ভূমিকার জন্য ট্রাম্প ধন্যবাদ জানান।
সর্বশেষ এই প্রস্তাবটি আগের আলোচকদের দেওয়া পরিকল্পনার চেয়ে খুব একটা ভিন্ন নয়। এতে একই সংখ্যক জিম্মি মুক্তির বিষয়টি রাখা হয়েছে এবং আগের সাময়িক যুদ্ধবিরতির সময়সীমাও অপরিবর্তিত রয়েছে।
তবে এবার হামাসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে ছাড় দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, জিম্মিদের মুক্তি ধাপে ধাপে পুরো সময়জুড়ে হবে। দ্বিতীয়ত, যুদ্ধবিরতি ৬০ দিনের পরেও অব্যাহত থাকতে পারে—এমন একটি শক্তিশালী নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, যা সরাসরি ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এসেছে। এমনকি যুদ্ধ শেষ করতে পূর্ণ চুক্তি না হলেও যুদ্ধবিরতি বজায় থাকবে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী মোট ১০ জন জীবিত ও ১৮ জন মৃত ইসরায়েলি জিম্মিকে ধাপে ধাপে মুক্তি দেওয়া হবে।
যুদ্ধবিরতির প্রথম দিন হামাস আটজন জীবিত জিম্মিকে ছেড়ে দেবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল এক অজানা সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে এবং গাজা উপত্যকার উত্তরের কিছু নির্ধারিত এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেবে। সপ্তম দিনে, কিছু মৃত জিম্মির দেহ ফেরত দেওয়ার পর ইসরায়েল দক্ষিণ গাজার কিছু অংশ থেকেও সেনা প্রত্যাহার করবে।
আরও পড়ুন: আগামী 'এক সপ্তাহের মধ্যেই' গাজায় যুদ্ধবিরতি হতে পারে, আশা ট্রাম্পের
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইসরায়েল ও হামাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করবে। বর্তমানে গাজায় মোট ৫০ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, শেষ দুই জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে যুদ্ধবিরতির ৫০তম দিনে। এর আগে পাঁচজন মৃত জিম্মির দেহ ফেরত দেওয়া হবে সপ্তম ও ত্রিশতম দিনে এবং বাকি আটজনের দেহ ফেরত দেওয়া হবে শেষ দিনে।
চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের অনুরোধে জিম্মিদের মুক্তি কোনো রকম আনুষ্ঠানিকতা বা প্রচার ছাড়াই সম্পন্ন হবে। আগের যুদ্ধবিরতির সময় হামাস যেভাবে প্রকাশ্যে জিম্মি মুক্তির ঘটনা প্রচার করে তা নিয়ে ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল।
যুদ্ধবিরতি শুরু হলে গাজায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার পক্ষ থেকে ত্রাণ পাঠানো শুরু হবে, ঠিক যেমনটি হয়েছিল গত ১৯ জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির সময়।
বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে মার্কিন-ইসরায়েলি জিম্মি এডান আলেকজান্ডার ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি ট্রাম্পকে জানান, গাজায় লড়াই চলতে থাকলে বাকি জিম্মিরা আরও বড় ঝুঁকিতে পড়বে।
পরে 'হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম'-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়, আলেকজান্ডার ট্রাম্পকে বলেন, 'আমি ভয় পাচ্ছি, লড়াই চালিয়ে গেলে জিম্মিরা আরও ঝুঁকিতে পড়বে। আমি আশা করি আপনি আবারও ইতিহাস গড়বেন—একটি বড় চুক্তি করবেন যাতে পুরো ৫০ জন জিম্মিকে মুক্ত করা যায়। আপনিই সেটা করতে পারবেন।'