সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ট্রাম্পের ক্ষমতা বাড়ল, সহজ হবে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধ করা

মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভবিষ্যতের সব প্রেসিডেন্টের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা তুলে দিল। এই রায় অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নিম্ন আদালতগুলো নির্বাহী আদেশ ঠেকাতে আর আগের মতো সহজে সারাদেশে কার্যকর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে না।
হোয়াইট হাউজের ব্রিফিং রুমে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে উচ্ছ্বসিত ট্রাম্প এই রায়কে আখ্যা দেন "একটি বিশাল, অবিশ্বাস্য সিদ্ধান্ত" হিসেবে। তিনি বলেন, "এটি সংবিধান, ক্ষমতার পৃথকীকরণ ও আইনের শাসনের জন্য এক ঐতিহাসিক বিজয়। আমরা এই সিদ্ধান্তে অত্যন্ত সন্তুষ্ট।"
এই রায়ের প্রভাবে বহু নীতিমালা দ্রুত কার্যকর করার সুযোগ পাবে প্রেসিডেন্ট, যেগুলো এতদিন নিম্ন আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞায় আটকে ছিল।
বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেট লিখেছেন, "রাজ্যগুলোর মতে, তাদের আর্থিক ক্ষতি ও প্রশাসনিক চাপের সমস্যাগুলো একমাত্র পুরো নির্বাহী আদেশ নিষ্ক্রিয় করলেই সমাধান সম্ভব।"
ট্রাম্প এ রায়কে "জায়ান্ট উইন" বলে অভিহিত করেন। তার ভাষায়, "জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলা প্রতারণা এবার বড়সড় ধাক্কা খেল।" তার মতে এই সিদ্ধান্ত অভিবাসন ব্যবস্থায় 'স্ক্যাম' বন্ধে সহায়ক হবে।
ট্রাম্পের আইন উপদেষ্টা পাম বন্ডি জানান, আগামী অক্টোবর মাসে সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নেবে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিধান শেষ হবে কি না।
প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার পরিধি বাড়ল
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় অবিলম্বে এবং ব্যাপক পরিসরে প্রভাব ফেলবে। এর ফলে, নিম্ন আদালতের ফেডারেল বিচারকরা এখন আর নির্বাহী আদেশের ওপর দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে আগের মতো স্বাধীন থাকছেন না।
রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট, উভয় দলের প্রেসিডেন্টরাই একাধিকবার অভিযোগ করেছেন যে, অনেক জেলা আদালতের বিচারক রাজনৈতিক পক্ষপাত থেকে নির্বাহী আদেশ ও এমনকি কংগ্রেসে পাস হওয়া আইনও এককভাবে ঠেকিয়ে দিচ্ছেন।
ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করার উদ্যোগ এই আলোচিত মামলার কেন্দ্রে থাকলেও, তার নেওয়া আরও অনেক নীতিমালাই একইভাবে আটকে আছে নিম্ন আদালতে। কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস বলছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্পের শপথ নেওয়া থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অন্তত ২৫টি নির্বাহী সিদ্ধান্ত আদালতের নিষেধাজ্ঞায় আটকে গিয়েছিল।
এর মধ্যে আছে বৈদেশিক সহায়তা কমানো, বৈচিত্র্যভিত্তিক নিয়োগ কর্মসূচি বাতিল, সরকারি কর্মচারী ছাঁটাই সংক্রান্ত নীতিমালা, অভিবাসন সংস্কার স্থগিত, এবং হোয়াইট হাউসের প্রস্তাবিত নির্বাচনী সংস্কার।
রায়ের পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা এখন আইনি পথে সঠিকভাবে এগোতে পারব, যেসব নীতিমালা অন্যায়ভাবে আটকে দেওয়া হয়েছিল।"
এই রায়ের ফলে প্রশাসন আরও অনেক নীতি বাস্তবায়নের জন্য এখন আদালতের কাছে ছাড় চেয়ে এগোতে পারবে। ট্রাম্প বলেন, "আমরা এখন প্রকৃত প্রক্রিয়া অনুযায়ী এগোতে পারি। এটি আমাদের অনেক বাধা দূর করবে।"
এই রায় কেবল ট্রাম্পের জন্যই নয়; বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রেসিডেন্টদেরও ক্ষমতা বাড়াবে। যেমন, বাইডেন প্রশাসনের সময়েও পরিবেশ বিষয়ক নতুন বিধিনিষেধ, শিক্ষাঋণ মওকুফ, ও অভিবাসন আইনে পরিবর্তন আনার মতো উদ্যোগগুলো আদালতের রায়ে আটকে গিয়েছিল।
বরাক ওবামার আমলেও অভিবাসন নীতির সংস্কার ও কম বেতনের কর্মীদের ওভারটাইম সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ আদালতের আদেশে বাস্তবায়ন হয়নি।
এইসব উদাহরণে স্পষ্ট, ভবিষ্যতেও আদালত চাইলে প্রেসিডেন্টের কোনো কর্মসূচি অবৈধ বা সংবিধানবিরোধী মনে করলে তা স্থগিত করতে পারবে। তবে এখন তা অনেক সময়সাপেক্ষ হবে এবং আপিল আদালত কিংবা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে।
সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে বলেছে, "নিম্ন আদালতগুলোকে দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে, প্রতিটি মামলায় নিষেধাজ্ঞা যেন এই রুল অনুসারে এবং ন্যায়বিচারের নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।"
তবে যতক্ষণ না সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসে, প্রেসিডেন্ট সে ট্রাম্প হোন বা তার উত্তরসূরি নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য পাবেন আরও সময় ও সুযোগ।
অনুবাদ : নাফিসা ইসলাম মেঘা