আমরা খামেনিকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সুযোগ পাইনি: ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, সম্প্রতি ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালে তার দেশ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার কাটজ বলেন, খামেনিকে হত্যা করতে ইসরায়েলের যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতির প্রয়োজন ছিলো না। যদিও কিছু গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়েছিল।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১৩-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, 'আমরা খামেনিকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কোনো কার্যকরী সুযোগ পাইনি।'
তিনি দাবি করেন, খামেনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তার ওপর হামলার চেষ্টা হতে পারে, তাই তিনি 'খুব গভীরে আত্মগোপনে চলে যান' এবং ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) নিহত নেতাদের স্থলাভিষিক্ত হওয়া কমান্ডারদের সঙ্গেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
যদিও যুদ্ধ চলাকালে খামেনি ভিডিওবার্তা প্রকাশ করেছিলেন, এবং তিনি তার জেনারেলদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিলেন—এর কোনো প্রমাণ মেলেনি।
খামেনিকে হত্যা করলে এই সংঘাত আরও গুরুতর রূপ নিত। ইরানের কার্যত রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তিনি বিশ্বের কোটি কোটি শিয়া মুসলমানের কাছে তিনি একজন শীর্ষ ধর্মীয় নেতা।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প—দুজনেই বিভিন্ন সময়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে এই যুদ্ধ ইরানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে। ট্রাম্প গত রবিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলেন, এই সংঘাত ইরানকে 'আবার মহান' করে তুলতে পারে।
কাটজের মন্তব্য এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতার ওপর মার্কিন হামলার প্রভাব নিয়ে বিপরীতমুখী প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহানে পারমাণবিক স্থাপনায় বোমাবর্ষণ করেছে, কিন্তু এই হামলায় ঠিক কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার খামেনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার প্রভাব 'অতিরঞ্জিত' করেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, ইরান যদি তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে 'অগ্রগতি' সাধন করে, তাহলে দেশটির ওপর আরেক দফা হামলা চালাতে ট্রাম্প ইসরায়েলকে 'সবুজ সংকেত' দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, 'আমি এমন কোনো পরিস্থিতি দেখছি না, যেখানে ইরান হামলার পর তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুনর্গঠন করতে পারবে।'
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার বলেন, যুদ্ধের ফলাফল আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আরও আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক চুক্তির জন্য একটি 'সুযোগের জানালা' খুলে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় এই সংঘাত শেষ হয়। ইরান মার্কিন হামলার জবাবে কাতারের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যেখানে মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে।
ভিডিও ভাষণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, 'আমরা ইরানের বিরুদ্ধে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে লড়াই করেছি এবং একটি মহত্তর বিজয় অর্জন করেছি। এই বিজয় শান্তি চুক্তিগুলো ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণের পথ খুলে দিয়েছে।' তিনি স্পষ্টতই ২০২০ সালে ইসরায়েল ও কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তির কথাই উল্লেখ করেন।
ইরানও যুদ্ধের পর বিজয়ের ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলেছে, তারা ইসরায়েলের মূল উদ্দেশ্যগুলো—তেহরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করার পরিকল্পনা—ব্যর্থ করেছে এবং ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে নেতানিয়াহুকে আক্রমণ বন্ধ করতে বাধ্য করেছে।