ইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা 'চেরনোবিল বিপর্যয়' ডেকে আনবে সতর্ক করল রাশিয়া

রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান বৃহস্পতিবার সতর্ক করে বলেন, ইসরায়েল যদি ইরানের বুশেহর প্রদেশে অবস্থিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালায়, তবে তা 'চেরনোবিলের মতো' বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র জানান, তারা ওই স্থানে হামলা চালিয়েছে। তবে পরে এক ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা ওই বক্তব্যকে 'ভুল' বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, উপসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত বুশেহর স্থাপনাটি লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত বা অস্বীকার করতে পারছেন না।
বুশেহর ইরানের একমাত্র সচল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা রাশিয়ার নির্মিত।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার ভোরে সাংবাদিকদের বলেন, ইসরায়েল রাশিয়াকে আশ্বস্ত করেছে যে বুশেহরে পরমাণু স্থাপনা সম্প্রসারণে নিয়োজিত মস্কোর কর্মীরা নিরাপদ থাকবেন—যদিও ইসরায়েল বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা দুর্বল করার চেষ্টা করছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের প্রধান বৃহস্পতিবার সতর্ক করে বলেন, বুশেহর কেন্দ্রের চারপাশের পরিস্থিতি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আরআইএ-কে আলেক্সেই লিখাচেভ বলেন, 'যদি চালু থাকা প্রথম বিদ্যুৎ ইউনিটে হামলা হয়, তাহলে তা চেরনোবিলের মতো বিপর্যয় ডেকে আনবে।'
১৯৮৬ সালের বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনা—সোভিয়েত ইউক্রেনে চেরনোবিল পারমাণবিক চুল্লি বিস্ফোরণের কথা উল্লেখ করেন লিখাচেভ।
তিনি বলেন, বুশেহরে হামলা চালানো হবে 'খুব খারাপের চাইতেও বেশি'।
তিনি আরও জানান, রাশিয়া ইতোমধ্যে বুশেহর থেকে কিছু বিশেষজ্ঞকে সরিয়ে নিয়েছে, তবে মূল কর্মী দল—যাদের সংখ্যা পুতিনের ভাষ্য অনুযায়ী কয়েকশ'—সেই স্থাপনায়ই রয়েছেন।
লিখাচেভ রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আরআইএ-কে বলেন, 'আমরা যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত, এমনকি আমাদের সব কর্মীকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার জন্যও।'
'ঈশ্বর না করুন'
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থি।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন, কারণ এর পরিচালনায় রুশ বিশেষজ্ঞরা জড়িত।'
জাখারোভা আরও বলেন, 'আমরা বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করতে চাই—এই পরিস্থিতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে। এটি হবে অত্যন্ত বিপজ্জনক পদক্ষেপ, যার পরিণতি হবে সম্পূর্ণ অনিশ্চিত ও নেতিবাচক।'
তিনি জানান, মস্কো ইতোমধ্যে বুধবার এই হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোরে বক্তব্যে তেহরান বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, ইরান এখন পর্যন্ত রাশিয়ার কাছে সামরিক সহায়তা চায়নি। দুদেশের সম্পর্কোন্নয়ন দৃঢ়, আর বুশেহরে পারমাণবিক স্থাপনায় রুশ কর্মীদের উপস্থিতি ইরানের প্রতি রাশিয়ার সমর্থনেরই প্রমাণ।
তবে পুতিন একইসঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের গুরুত্বও তুলে ধরেন। যদিও পরে তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ফোনালাপে ইসরায়েলের আচরণের নিন্দা করেন, তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন—ইসরায়েলের নিরাপত্তা উদ্বেগ ও ইরানের অবস্থান বিবেচনায় রেখে কূটনৈতিকভাবে সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
রাশিয়া জানুয়ারিতে ইরানের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং ইসরায়েলের সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক রয়েছে—যদিও ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সেই সম্পর্ক কিছুটা টানাপোড়েনে পড়েছে।
ইসরায়েল-ইরান বিরোধে মধ্যস্থতার প্রস্তাব রাশিয়া দিলেও এখন পর্যন্ত তা কেউ গ্রহণ করেনি।
বৃহস্পতিবার রয়টার্সের এক প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে—এই সম্ভাবনা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে রাশিয়ার উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বগদানভ স্পষ্টভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানান।
তিনি বলেন, 'ঈশ্বর না করুন, এর পরিণতির বিষয়ে পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন হবে।'