“তেহরানের আকাশ এখন আমাদের দখলে”—ইসরায়েলের দাবি, কিন্তু বাস্তবতা কী?

ইসরায়েল ঘোষণা করেছে, তারা এখন সম্পূর্ণভাবে ইরানের রাজধানী তেহরানের আকাশসীমার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গত কয়েক দিনে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর টানা বিমান হামলা দেখে এমন দাবিকে পুরোপুরি অস্বীকারও করা যাচ্ছে না। তবে এর সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন স্বাধীন বিশ্লেষকরা। খবর বিবিসির।
তেহরানে হামলার ক্ষেত্রে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো নিকটবর্তী অঞ্চল থেকে লক্ষ্যবস্তুতে গাইডেড বোমা ফেলেছে—যার মানে হচ্ছে, তাদের দীর্ঘ-পাল্লার স্ট্যান্ড-অফ অস্ত্র বা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়নি। এটা ইসরায়েলি সামরিক সক্ষমতারই প্রতিফলন।
ইরানের পুরনো মডেলের ও সীমিত সংখ্যক যুদ্ধবিমান এসব হামলায় কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। এমনকি সাম্প্রতিক হামলার আগেই, ইসরায়েল ইরানের বড় একটি অংশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়।
গত অক্টোবরেও ইসরায়েল ইরানের হাতে থাকা রাশিয়ান ডিজাইনের দূরপাল্লার এস-৩০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর আঘাত হেনেছিল। সেই ধারাবাহিকতায়, এবারও ইসরায়েল আঘাত হেনেছে রাডার স্টেশন ও বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চারগুলোর ওপর, যা ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও দুর্বল করে ফেলেছে।
তবে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা- রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট (রুসি)-এর গবেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক মনে করেন, ইসরায়েল যদিও বর্তমানে তেহরানের আকাশে আংশিক শ্রেষ্ঠত্ব বা এয়ার সুপিরিয়রিটি অর্জন করেছে, তবে সম্পূর্ণ আকাশসীমায় আধিপত্য বা নিয়ন্ত্রণ (এয়ার ডমিনেন্স) এখনো প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।
কারণ, ইরানের হাতে এখনও প্রচুর স্বল্প-পাল্লার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যেমন—কাঁধে বহনযোগ্য ম্যানপ্যাডস বা যানবাহনে বসানো ভূমি-থেকে-আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যেগুলো ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের জন্য হুমকি।
এই পরিস্থিতি অনেকটা ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানগুলোর মতো। সেখানে মার্কিন জেট যুদ্ধবিমান সহজেই আকাশে আধিপত্য স্থাপন করলেও, হুথিরা একাধিক মার্কিন ড্রোন গুলি করে নামাতে সক্ষম হয়—যদিও সেগুলো তুলনামূলকভাবে ধীরগতির ছিল।
মধ্যপ্রাচ্যে অতীতের সামরিক অভিযানের অভিজ্ঞতাও বিমানশক্তির সীমাবদ্ধতাকে তুলে ধরে। যেমন সন্ত্রাসী গোস্থী আইএসআইএসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান অভিযানের মাধ্যমে তাদের পুরোপুরি ধ্বংস করা যায়নি, এজন্য স্থল আক্রমণের প্রয়োজন হয়। আবার গাজায় হামাসের ওপর ইসরায়েলের লাগাতার বিমান আক্রমণেও হামাস্কে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হয়নি। তখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ভূমিতে আগ্রাসনে যেতে বাধ্য হয়।
মোদ্দা কথা, প্রতিপক্ষের ওপর শুধু আকাশ থেকে ধ্বংস নামিয়ে আনা—যুদ্ধ জয়ের নিশ্চয়তা দেয় না। প্রতিপক্ষের প্রতিরোধ শক্তি ভেঙে দেওয়া এবং রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া, কেবল বিমান শক্তির উপর নির্ভরশীলতা প্রায়ই অস্থায়ী লাভে সীমাবদ্ধ থাকে।
তেহরানের আকাশে ইসরায়েলি বিমান উড়ছে ঠিকই, কিন্তু যুদ্ধের পরিণতি এখনও অনেক দূরের পথ।