চট্টগ্রামে ‘সাংবাদিক’ পরিচয়ে গেস্টহাউসে তল্লাশির ভিডিও ভাইরাল, আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন

চট্টগ্রামের একটি গেস্টহাউসের কক্ষে কক্ষে তল্লাশি চালানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর সেটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং সাংবাদিকতার নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।
ভিডিওটি ১৪ জুন 'হান্নান রহিম তালুকদার' নামে এক ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত হয়। প্রায় পনেরো মিনিট চব্বিশ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে এলাকার পপুলার গেস্টহাউসে ঢুকে কক্ষে কক্ষে তল্লাশি চালান।
ভিডিওতে দেখা যায়, তালুকদার ক্যামেরা নিয়ে বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে সেখানে থাকা অতিথিদের বের করে আনেন। তাদের কাছে পরিচয় জানতে চান। কেন, কার সঙ্গে এসেছেন—এসব প্রশ্নও করেন।
১৬ জুন পর্যন্ত ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক কোটি চল্লিশ লাখেরও বেশি বার দেখা হয়েছে এবং এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
ভিডিওর এক অংশে তিনি এক এক করে বিভিন্ন কক্ষের দরজায় নক করেন, অতিথিদের পরিবারের সদস্যদের মুখোমুখি হয়ে ব্যক্তিগত তথ্য চেয়ে প্রশ্ন করেন।
এক ব্যক্তি জানান, তিনি তার স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছেন। তাকে বারবার তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক প্রমাণ করতে চাপ দেওয়া হয়।
পুলিশ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছে, গেস্টহাউস কর্তৃপক্ষ অভিযোগ না করার কারণে এখনও পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
আইনজীবী ও সাংবাদিক সংগঠনগুলো এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন ও সাংবাদিক পরিচয় অপব্যবহার করার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ জানান, 'তালুকদার আমাদের সংগঠনের সদস্য নন।'
তিনি বলেন, 'কোনো সাংবাদিকের এককভাবে এমন তল্লাশি চালানোর অধিকার নেই। ব্যক্তিগত ঘরে অন্যদের ক্যামেরায় ধারণ করা এবং তা অনলাইনে প্রকাশ করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন। আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের উচিত এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।'
হান্নান রহিম তালুকদার নিজের ফেসবুক আইডিতে নিজেকে দৈনিক চট্টগ্রাম সংবাদের সম্পাদক ও সিএসটিভি২৪–এর চেয়ারম্যান বলে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি নিজেকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য বলেও উল্লেখ করেছেন। তবে, প্রেসক্লাব এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রোফাইলে তিনি স্থানীয় বিএনপি নেতাদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন এবং নিজেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্যসচিব পদপ্রার্থী উল্লেখ করে পোস্টার ও ব্যানার ছবি পোস্ট করেছেন।
চাঁদগাঁও থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফতাব উদ্দিন বলেন, 'তালুকদারের কাজ বেআইনি। কোনো সাংবাদিকের গেস্টহাউসের ঘরে ঢুকে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করার অধিকার নেই। অভিযোগ থাকলে তদন্তের দায়িত্ব পুলিশের।'
ওসি আরও জানান, 'তালুকদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তবে অভিযোগ ছাড়া পুলিশ মামলা করতে পারে না।'
তিনি বলেন, 'আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং গেস্টহাউস কর্তৃপক্ষকে মামলা করার জন্য অনুরোধ করেছি। তারা না করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব।'
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড তালুকদারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।