ইরানের নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত ৮, তেহরানে কুদস ফোর্সের সদর দপ্তরে হামলার দাবি ইসরায়েলের

ইসরায়েলি বাহিনী তেহরানে বোমাবর্ষণের পর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ইরান নতুন করে ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। বন্দরনগরী হাইফা আঘাত হানে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র।
শুক্রবার ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনা এবং বেসমারিক এলাকায় ইরান হামলা চালানোর পর জবাবে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে ইরান।
কুদস ফোর্সের সদর দপ্তরে হামলার দাবি ইসরায়েলের
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এক্স-এ দেওয়া পোস্টে বলেছে, তারা ইরানের রাজধানী তেহরানে কুদস ফোর্সের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছে।
কুদস ফোর্স হচ্ছে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) বিদেশি কার্যক্রম পরিচালনাকারী শাখা। লেবানন, ইরাক, ইয়েমেন ও সিরিয়াসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মিত্র সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে কুদস ফোর্সের।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর ফাইটার জেট কুদস ফোর্সের বিভিন্ন কমান্ড সেন্টারে হামলা চালিয়েছে।

আইডিএফের একজন মুখপাত্র বলেন, এই কমান্ড সেন্টারগুলো থেকে কুদস সদস্যরা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের মিত্র বাহিনী ব্যবহার করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিল।
আইডিএফের প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, তারা তেহরানে কুদস ও সামরিক লক্ষ্যবস্তু অভিহিত করে ১০টি স্থানে হামলা চালিয়েছে।
১৯৮০-র দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় গোপন গোয়েন্দা ইউনিট হিসেবে গড়ে ওঠে কুদস ফোর্স। আফগানিস্তান, ইরাক, লেবানন, সিরিয়া ও গাজা উপত্যকাসহ (হেজবুল্লাহ ও হামাসসহ) মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক পরিচালনায় এই বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আইরজিসির কমান্ডার হোসেইন সালামি ইসরায়েলের শুক্রবারের প্রথম হামলায় নিহত হন। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন জেনারেল আহমেদ বাহিদি।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তেল আবিবে মার্কিন দূতাবাস ক্ষতিগ্রস্ত
ইসরায়েলের তেল আবিবে মার্কিন দূতাবাসের কাছাকাছি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি এক্স-এ দেওয়া পোস্টে এ তথ্য জানান।

হাকাবি লেখেন, ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবে মার্কিন দূতাবাস ভবনের কাছে আঘাত হেনেছে। এতে দূতাবাস ভবন সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ঘটনায় মার্কিন কর্মীদের কেউ হতাহত হননি বলে জানান মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
ইসরায়েলের হামলার মুখে থাকা অবস্থা যুদ্ধবিরতির আলোচনা প্রত্যাখ্যান ইরানের
মধ্যস্থতাকারী কাতার ও ওমানকে ইরান বলেছে, ইসরায়েলি হামলার মুখে থাকা অবস্থায় তারা কোনো যুদ্ধবিরতির আলোচনা করতে আগ্রহী নয়। রোববার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানান বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এক কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ইরান কাতারি ও ওমানি মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়ে দিয়েছে, ইসরায়েলের আগের হামলার জবাব না দেওয়া পর্যন্ত ইরান কোনো ধরনের 'সিরিয়াস' আলোচনা শুরু করবে না।
ওই কর্মকর্তা বলেন, 'ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—হামলার মুখে তারা কোনো আলোচনায় যাবে না।'
ইসরায়েলের নিহত বেড়ে ৮, আহত ৮০
ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮, আহত অন্তত ৮০ জন।
এর মধ্যে হাইফায় নিখোঁজ তিনজন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি আর্মি রেডিও।
এর আগে ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে পাঁচজন নিহত হন। মধ্যাঞ্চলে নিহতদের মধ্যে দুইজন নারী ও একজন পুরুষ। তাদের প্রত্যেকের বয়স ৭০-এর কোঠায়। নিহত আরেকজনের বয়স ৮০। তাকে তেল আবিবের নেই ব্রাক-এ মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। আরেকজন নিহতের বিস্তারিত পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
এর ফলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ২৩-এ দাঁড়িয়েছে।

মধ্য ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত অন্তত দুটি ভবনে আঘাত হানে ক্ষেপণাস্ত্র। হতাহতের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ইরানে নিহত বেড়ে ২২৪, আইআরজিসি-র গোয়েন্দাপ্রধান ও দুই জেনারেল নিহত
ইসরায়েলি হামলায় রোববার ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪-এ পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে ৭০ জন নারী ও শিশু রয়েছেন।
এছাড়া রোববার ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা শাখার প্রধানসহ দুই জেনারেল নিহত হয়েছেন।
ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা ইরনা বলেছে, আইআরজিসির গোয়েন্দা শাখার প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং জেনারেল হাসান মোহাগেগ ও মোহসেন বাগেরি হামলায় নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলের হাইফায় আহত ২, নিখোঁজ ৩
ইসরায়েলের রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচারমাধ্যম কান জানিয়েছে, ইরানের নতুন দফার হামলায় বন্দরনগরী হাইফায় দুইজন সামান্য আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও তিনজন।
এর আগে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হাইফা বন্দরের কাছাকাছি একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন লাগতে দেখা গেছে।
খামেনিকে হত্যার 'পরিকল্পনা' ছিল ইসরায়েলের, 'আটকে দেন' ট্রাম্প
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যা করার জন্য ইসরায়েলের প্রস্তাব করা একটি পরিকল্পনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রত্যাখ্যান করেন বলে এপি-কে জানিয়েছেন এ বিষয়ে সম্পর্কে অবগত একজন মার্কিন কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে জানায়, তারা খামেনিকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করেছে। তবে পরিকল্পনাটি উপস্থাপনের হোয়াইট হাউস স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, ট্রাম্প চান না ইসরায়েল এটি বাস্তবায়ন করুক।
ফক্স নিউজ-এ সাক্ষাৎকারে পরিকল্পনাটি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হোয়াইট হাউসের সরাসরি পরিকল্পনাটি প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে কিছু বলেননি।
তবে তিনি বলেন, 'তবে বলতে পারি, আমরা যা প্রয়োজন, সেটাই করব। এবং আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্র জানে তাদের জন্য কোনটি ভালো।'
এরপর নেতানিয়াহুর মুখপাত্র ওমের দস্তরি দাবি করেন, খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা-সংক্রান্ত সংবাদগুলো 'মিথ্যা'।
একই সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু আরও বলেন, চলমান সংঘাতের ফলাফল হিসেবে ইরানের 'সরকার পরিবর্তন' অবশ্যই ঘটতে পারে, কারণ দেশটির 'শাসনব্যবস্থা খুবই দুর্বল'।