ইরানের হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে ১০, আহত ২০০; হামলা করেছে হুথিরাও

হাইফা ও তেল আবিব শহরসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে শনিবার রাত থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত ইরানের ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে ২০০। এছাড়া বাত ইয়াম শহরের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পর ইসরায়েলের একটি ভবনের ৩৫ জন নিখোঁজের মধ্য থেকে ৭ জন এখনও নিখোঁজ আছেন, বাকিদের উদ্ধার করা হয়েছে।
মধ্য ইরানে হামলা হুথিদের
এর আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছিল, ইয়েমেন থেকে দেশটির কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা হয়েছে। ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।

এক টেলিভিশন বিবৃতিতে হুথিরা বলেছে, ইরানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে এই হামলা চালানো হয়েছে এবং এতে একাধিক 'প্যালেস্টাইন ২ হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল' ব্যবহৃত হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলার লক্ষ্য ছিল জাফা অঞ্চলের 'ইসরায়েলি শত্রুর সংবেদনশীল স্থাপনাসমূহ'।
ইসরায়েলে নিহত বেড়ে ১০, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে নিখোঁজ ২০
ইসরায়েলের উত্তরে শনিবার রাতে ইসরায়েলের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে চারজন নিহত হন বলে পুলিশ জানিয়েছে। ইসরায়েলি পুলিশ বলেছে, 'একটি অস্ত্র সরাসরি আঘাত করলে' দুইজন চল্লিশোর্ধ্ব নারী, একজন ২০ বছর বয়সি নারী ও ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরী নিহত হয়।

পরে আরেক এক দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মধ্য ইসরায়েলের বাত ইয়াম শহরে আরও তিনজন নিহত হন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ।
এছাড়া হিব্রু মিডিয়ার বরাতে টাইমস অভ ইসরায়েল জানিয়েছে, বাত ইয়ামে একটি আবাসিক ভবনে মিসাইল আঘাত হানার পর সেখানে প্রথমে ৩৫ জন নিখোঁজ ছিলেন। তবে ৭ জন ছাড়া বাকিদের উদ্ধার করা হয়েছে। ভবনটি যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে।
এসব হামলার পর মধ্য ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে আরও ২০০ জনের বেশি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও তেল স্থাপনায় হামলা
অন্যদিকে এ সময়ে ইসরায়েলও ইরানে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। এতে দেশটির জ্বালানি খাত ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরকে সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এছাড়া হামলা চালানো হয়েছে ইরানের তেলের ডিপো ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রেও।

বিবিসির যাচাই করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর হাইফার তেল পরিশোধনাগারের কাছে আগুন জ্বলছে।
ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের বিভিন্ন বেসামরিক ও জ্বালানি অবকাঠামোর অবকাঠামোতে বোমাবর্ষণের পর এসব হামলা শুরু হয়।
ইসরায়েলের হামলায় তেহরানের শাহরান তেল স্থাপনায় আগুন ধরে যায়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, তারা ইরান সরকারের 'পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোকেই' লক্ষ্যবস্তু করেছে।

গতকাল ইরানের সাউথ পার্স গ্যাসক্ষেত্রেও হামলা চালায়, যা বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র। হামলার পর এ গ্যাসক্ষেত্রেও আগুন ধরে যায়। সাউথ পার্স ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি উৎসগুলোর একটি।
এদিকে ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রণালি বন্ধ করে দিলে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।
পারস্য উপসাগরে প্রবেশের একমাত্র সামুদ্রিক পথ হরমুজ প্রণালি। বিশ্বে যত তেল ব্যবহার করা হয়, তার প্রায় ২০ শতাংশই পরিবহন হয় এই প্রণালি দিয়ে।

যেসব দেশ উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে পেট্রোল আমদানি করে না, তাদের ওপরও হরমুজ প্রণালি বন্ধের প্রভাব পড়বে। কারণ জ্বালানির সরবরাহ ব্যাপক কমে গেলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যাবে।
ইরানি গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই দিনে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৮০ জন নিহত ও ৮০০ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২০ জন শিশু রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একমত হয়েছেন যে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতের অবসান হওয়া জরুরি।

চলমান সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ষষ্ঠ দফার পরমাণু আলোচনা বাতিল করেছে ইরান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ঘোষণা দেন, ইসরায়েলের চলমান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ আলোচনা চালানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইসরায়েল যদি পিছু না হটে, তবে 'আরও তীব্র' জবাব দেওয়া হবে।