ট্রাম্পের সামরিক কুচকাওয়াজ: ওয়াশিংটনে প্রস্তুত ট্যাঙ্ক, অস্ত্রশস্ত্র ও সাড়ে ৬ হাজার সেনা

১৪ জুন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনী এটির ২৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করবে। এ দিনটি আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৭৯তম জন্মদিনও।
এই আয়োজনের অংশ হিসেবে কনস্টিটিউশন অ্যাভিনিউতে শোভাযাত্রায় অংশ নেবে দুই ডজনেরও বেশি এম১ আব্রামস ট্যাঙ্ক, যেগুলোর প্রতিটির ওজন ৬০ টনেরও বেশি। ট্যাঙ্কগুলো হোয়াইট হাউসের কাছাকাছি এলাকায় প্রদর্শিত হবে।
সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত এ ধরনের প্রদর্শনী সেনাবাহিনীর নিয়মিত কর্মসূচিতে ছিল না। এবারের আয়োজনে আরও থাকবে অসংখ্য পদাতিক যুদ্ধযান, ভারী কামান ও হেলিকপ্টার। সব মিলিয়ে এতে প্রায় ৬ হাজার ৬০০ সেনাসদস্য অংশ নেবেন।
২০১৭ সালে ফ্রান্সের বাস্তিল দিবস উপলক্ষে প্যারিসে আয়োজিত কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়ার পর থেকেই ওয়াশিংটনে বড় ধরনের সামরিক প্রদর্শনীর পরিকল্পনা করেছিলেন ট্রাম্প। সে সময় তার পরিকল্পিত আয়োজনের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৯ কোটি ডলার, যার সঙ্গে ডিসির জননিরাপত্তা বাবদ আরও ২ কোটি ১০ লাখ ডলারের খরচ যুক্ত ছিল।
তবে বাজেট ঘাটতি ও নানা উদ্বেগের কারণে সেই সময় একটি তদন্ত শুরু হলে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে পরিকল্পনাটি বাতিল হয়ে যায়। এবার তার ঘনিষ্ঠ অনুগতদের পরিচালিত প্রশাসনে এসব আর্থিক ও নীতিগত উদ্বেগ উপেক্ষা করা হয়েছে।
এ ধরনের বিশাল সামরিক প্রদর্শনী যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় খুবই ব্যতিক্রমী এবং অনেক সময়ই একে কর্তৃত্ববাদী সরকারের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। ওয়াশিংটনে সর্বশেষ বড় সামরিক কুচকাওয়াজ হয়েছিল তিন দশকেরও বেশি আগে।
প্যারিসসহ বিশ্বের কিছু শহরে এমন আয়োজন এখনো দেখা যায়। তবে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক উদ্যোগ অনেকের কাছেই যুদ্ধংদেহী পরিবেশ তৈরি করছে—বিশেষত, যখন তার নির্দেশে লস অ্যাঞ্জেলেসে ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড ও ৭০০ মেরিন মোতায়েনের মতো ঘটনা ঘটছে।
এই সামরিক আয়োজনের খরচ ইতোমধ্যে অনেক বেড়েছে। দুই বছর আগে এর বাজেট ছিল ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা এখন বেড়ে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড়িয়েছে। এর সঙ্গে ডিসি প্রশাসনের নিজস্ব খরচ যোগ হয়নি। অথচ শহরের বাজেটে হাউস রিপাবলিকানদের প্রস্তাবিত ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি এখনো কংগ্রেসের অনুমোদনের অপেক্ষায়। ডিসি কর্তৃপক্ষকে এই আয়োজনে আবর্জনা পরিষ্কার, সড়ক বন্ধ রাখা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো খাতে বাড়তি ব্যয় বহন করতে হবে।
সেনাবাহিনীর একটি প্রাথমিক হিসাব বলছে, শুধু রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা সারানোর খরচই ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার ছাড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ট্যাঙ্ক ও ভারী যান ডিসির কিছু রাস্তায় কাঠামোগত ক্ষতি করতে পারে।
আরবান ইনস্টিটিউটের ল্যান্ড ইউজ ল্যাবের গবেষণা পরিচালক ইয়োনা ফ্রিমার্ক বলেন, 'সাধারণত যেসব রাস্তা প্রতিদিনের যানবাহনের জন্য তৈরি, সেগুলো ট্যাঙ্কের মতো অতিরিক্ত ভারী যান সহ্য করতে পারে না। এই ধরনের চাপ রাস্তার নকশা বা রক্ষণাবেক্ষণের সময় ডিসি পরিবহন বিভাগ বিবেচনায় নেয়নি।'
অন্যদিকে, অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির পেভমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক কামিল কালুশ জানান, ট্যাঙ্কের ওজন একাধিক চাকার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় রাস্তার ওপর চাপ কিছুটা কমে, ফলে ক্ষতির পরিমাণও তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ক্ষতির প্রকৃত মাত্রা নির্ভর করবে আরও কিছু বিষয়ের ওপর—বিশেষ করে সপ্তাহান্তের গরম আবহাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে।
ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক ইমেইলে তিনি লেখেন, 'তাপমাত্রা ও যানবাহনের গতি রাস্তার সক্ষমতার ওপর বড় প্রভাব ফেলে। সাধারণভাবে, যখন ফুটপাথের তাপমাত্রা বেশি থাকে আর যানবাহন ধীরে চলে, তখন রাস্তার ক্ষয়ও বেশি হয়।'
ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউসারের প্রকাশ্য উদ্বেগের জবাবে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আয়োজনে যদি রাস্তায় কোনো ক্ষতি হয়, তারা তার খরচ বহন করবে। তবে এখনো এ বিষয়ে কোনো লিখিত চুক্তি হয়নি।
সম্ভাব্য ক্ষতি কমাতে সেনাবাহিনী নতুন রাবার প্যাড বসাচ্ছে ট্যাঙ্কের ট্র্যাকের নিচে, আর যেসব জায়গায় ট্যাঙ্ক ঘুরবে সেখানে বসানো হচ্ছে ধাতব প্লেট। নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে ১৮ দশমিক ৫ মাইল দীর্ঘ অ্যান্টি-স্কেল ফেন্স, কংক্রিট ব্যারিকেড এবং ১৭৫টি ধাতব সনাক্তকারী যন্ত্র। নিরাপত্তা নজরদারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিস ব্যবহার করবে ড্রোন।
এই বিশাল আয়োজন স্থানীয় মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাতেও প্রভাব ফেলবে। কয়েক দিন ধরে বেশ কিছু সড়ক, মহাসড়ক ও সেতু বন্ধ থাকবে। শনিবার সন্ধ্যায় ফ্লাইওভার ও আতশবাজির প্রদর্শনের সময় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হবে রোনাল্ড রিগ্যান ন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে সব ফ্লাইট চলাচল।
ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা এই আয়োজনকে 'ব্যয়বহুল অহংকারের প্রকল্প' আখ্যা দিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন। তাদের অভিযোগ, ট্রাম্প সরকারি অর্থে সেনাবাহিনীর বার্ষিকী উদযাপনকে নিজের জন্মদিন পালনের মাধ্যম বানাতে চাইছেন।
এই সমালোচনার জবাবে সোমবার ট্রাম্প বলেন, 'আমি আমার জন্মদিন উদযাপন করছি না। আমি পতাকা দিবস উদযাপন করছি।' ১৭৭৭ সালের ১৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণের স্মরণে এ দিবস পালিত হয়। একই সঙ্গে তিনি এই সামরিক আয়োজনে খরচের বিষয়টি স্বীকার করে একে 'একটি বিশাল খরচ' হিসেবে বর্ণনা করেন।
এই মন্তব্যের পর সমালোচকরা আরও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, কারণ ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে সরকারি ব্যয় সংকোচে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো ভেটেরান্স অ্যাফেয়ার্স বিভাগ থেকে ৮৩ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা। এই প্রেক্ষাপটেই বৃহস্পতিবার সিনেটের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির এক শুনানিতে ডেমোক্র্যাট সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেন্থাল প্রশ্ন তোলেন, 'যেসব প্রবীণ সরকারি কর্মী চাকরি হারাচ্ছেন, তাদের আমি কীভাবে বোঝাব যে, আমরা এক কুচকাওয়াজে ৪০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত খরচ করছি, অথচ তাদের বলছি বাজেটে অপচয় বন্ধ করতে হবে?'
অন্যদিকে, সেনা সচিব ড্যানিয়েল ড্রিসকলসহ আয়োজনের সমর্থকরা বলছেন, এমন উদ্যোগ সেনাবাহিনীর মনোবল বাড়াবে, জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করবে এবং নতুন নিয়োগেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তবে ট্রাম্পের এই ধরনের প্রদর্শনীর প্রচেষ্টা তাকে বিগত কয়েক বছর ধরে কর্তৃত্ববাদী সরকারের ছাঁচে ফেলেছে—এমন অভিযোগও উঠেছে। এই আয়োজনগুলোর সঙ্গে রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া কিংবা নাৎসি জার্মানির মতো একনায়কতান্ত্রিক শাসনের তুলনাও করা হচ্ছে।
২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রথম সামরিক কুচকাওয়াজের প্রস্তাব দিলে, এক মার্কিন জেনারেল তাকে সাফ জানিয়ে দেন, এ ধরনের প্রদর্শনী মূলত 'স্বৈরশাসকদের অভ্যাস'। সাংবাদিক পিটার বেকার ও সুসান গ্লাসার তাদের বই দ্য ডিভাইডার-এ এই ঘটনার উল্লেখ করেছেন, যেখানে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের নানা বিতর্কিত দিক বিশদভাবে উঠে এসেছে।

এবারের আয়োজনটি এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প বারবার তার নির্বাহী ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো—ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসমের প্রকাশ্য আপত্তি সত্ত্বেও লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসনবিরোধী অভিযান চালাতে ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিন মোতায়েনের সিদ্ধান্ত। নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি 'ভেতরের শত্রুদের' মোকাবিলায় সেনাবাহিনী ব্যবহার করবেন এবং অভ্যন্তরীণ নীতিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবেন। সোমবার তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, তিনি গভর্নর নিউসমকে 'গ্রেপ্তার করবেন'।
বিশ্বজুড়ে নজির
তবে সামরিক কুচকাওয়াজ শুধুই কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতীক নয়—বিভিন্ন দেশে এটি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা স্মরণ, বিজয় উদযাপন বা দেশপ্রেম জাগানোর মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। যেমন, ফ্রান্সে বাস্তিল দিবসের কুচকাওয়াজ ফরাসি বিপ্লবের স্মরণে, ইতালির রোমে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ মুসোলিনির ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের প্রতীক হিসেবে এবং ভারতে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ দেশটির সংবিধান গ্রহণের ঐতিহাসিক দিন উপলক্ষে আয়োজিত হয়।
অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির সামরিক কর্মক্ষমতা বিশ্লেষক আন্দ্রেয়া গুনো বলেন, 'অনেক সময় কুচকাওয়াজ স্মারক কিংবা দেশপ্রেমিক উৎসাহের অংশ হিসেবে আয়োজিত হয়, যা সামরিক বাহিনীতে নতুন নিয়োগ আকর্ষণেও সহায়ক হতে পারে।'
তার মতে, কূটনৈতিক দিক থেকেও এসব আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় প্রতিটি বড় সামরিক কুচকাওয়াজেই বিদেশি সেনাবাহিনীকে অংশগ্রহণে আমন্ত্রণ জানানো হয়, অথবা গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি অতিথিদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। এভাবেই, বলেন তিনি, একবার ট্রাম্পও ফরাসি সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নিয়েছিলেন।
গুনো আরও বলেন, কৌশলগতভাবে এমন প্রদর্শনী আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শক্তি ও সক্ষমতার বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি দেশের নাগরিকদের মধ্যে ঐক্যের অনুভূতি জাগাতে পারে। সামরিক বাহিনীকে জাতীয় পরিচয়ের অংশ হিসেবে তুলে ধরতে এটি কার্যকর হতে পারে, যা ভবিষ্যতে প্রতিরক্ষা খাতে আরও ব্যয় বৃদ্ধির জন্য জনসমর্থন আদায়ে সহায়ক হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের জাঁকজমকপূর্ণ সামরিক প্রদর্শনী খুবই বিরল এবং ইতিহাসে এর নজির তুলনামূলকভাবে দূরবর্তী। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হচ্ছে ১৯৪৬ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বিজয় কুচকাওয়াজ। তবে রাষ্ট্রপতি ডোয়াইট আইজেনআওয়ার ও জন এফ. কেনেডির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সামরিক অস্ত্রের প্রদর্শনী গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ছিল।
আন্দ্রেয়া গুনো বলেন, 'মার্কিন সামরিক বাহিনী অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনের পেছনে অর্থ ব্যয় করে ঠিকই, তবে তা অন্য অনেক দেশের তুলনায় অনেক সীমিত। এ কারণেই আমেরিকানরা এমন আয়োজনের সঙ্গে খুব বেশি পরিচিত নয়।'
শেষবার কী ঘটেছিল
যুক্তরাষ্ট্রে সর্বশেষ বড় পরিসরের সামরিক কুচকাওয়াজ হয়েছিল তিন দশকেরও বেশি আগে—উপসাগরীয় যুদ্ধের সমাপ্তি উপলক্ষে। যদি ইতিহাস থেকে এবারের আয়োজনের আভাস মেলে, তাহলে বলা যায়, লজিস্টিক ও প্রশাসনিক দিক থেকে কর্তৃপক্ষকে একাধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হতে পারে।
১৯৯১ সালের ৮ জুন, কনস্টিটিউশন অ্যাভিনিউতে ৮ হাজার ৮০০ সৈন্য ট্যাঙ্ক, যুদ্ধযান ও অন্যান্য ভারী সরঞ্জাম নিয়ে লক্ষ লক্ষ দর্শকের সামনে মার্চ করে। ওই বিজয় কুচকাওয়াজ ঘিরে ডিসি পুলিশ বিভাগ মোতায়েন করে ১ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য এবং ৭০০ স্বেচ্ছাসেবক। শহরের সেতু, মোড় ও প্রধান সড়কগুলো বন্ধ থাকায় সাধারণ যাত্রীদের পড়তে হয় তীব্র যানজটে।
ওই সময় ওয়াশিংটন পোস্ট-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সামরিক কনভয়ের পথ তৈরির জন্য রাস্তার সাইনবোর্ড ও ল্যাম্পপোস্ট পর্যন্ত সরিয়ে ফেলতে হয়েছিল।
সামরিক ফ্লাইওভারের জন্য জাতীয় বিমানবন্দর ৩০ মিনিট বন্ধ রাখার পরিকল্পনা থাকলেও, কুচকাওয়াজ পরিকল্পিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে চলায় সেটি এক ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ রাখতে হয়।
সেদিন তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রির ঘরে পৌঁছালে ট্যাঙ্কগুলো নরম অ্যাসফল্টে গভীর দাগ ফেলে। অতিরিক্ত গরম ও ভিড়ে তাপঘাত ও ক্লান্তিতে ১০০ জনেরও বেশি দর্শক চিকিৎসা নেন। এদিকে, ন্যাশনাল মলে নামা যুদ্ধ হেলিকপ্টারগুলো ধুলোর ঝড় তোলে এবং পাশের হিরশহর্ন ভাস্কর্য উদ্যানে নুড়ি ছুড়ে দেয়, যার ফলে অ্যারিস্টাইড মাইললের 'দ্য নিম্ফ'সহ প্রায় ৫০টি ভাস্কর্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সবশেষে ডিসি শহরে পড়ে থাকে ১২ লাখ পাউন্ডের বেশি আবর্জনা, যা পরিষ্কার করতে ১ হাজারের বেশি কর্মী মোতায়েন করতে হয়। পুরো কুচকাওয়াজে ব্যয় হয় ১ কোটি ২০ লাখ ডলার—যা পূর্বানুমানের দ্বিগুণেরও বেশি।
সমালোচকদের মতে, মাত্র এক বছরেরও কম সময়ের একটি যুদ্ধের স্মরণে এত বিপুল অর্থব্যয় অযৌক্তিক ছিল। শান্তিবাদী গোষ্ঠীগুলো যুদ্ধ ও সহিংসতার মহিমান্বিতকরণের বিরুদ্ধেও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
এরপর থেকে মার্কিন প্রশাসন ও সামরিক বাহিনী এ ধরনের আয়োজন থেকে অনেকটাই সরে আসে—আংশিকভাবে খরচ বিবেচনায়, আর আংশিকভাবে এর মাধ্যমে ভুল বার্তা দেওয়ার আশঙ্কায়। বরং বিভিন্ন শহরে ভেটেরান্স ডে উপলক্ষে যে কুচকাওয়াজ আয়োজিত হয়, সেগুলো সাধারণত অনেক বেশি অনানুষ্ঠানিক এবং বেসামরিক অংশগ্রহণে গঠিত। সেখানে যুদ্ধযান কিংবা গণবিধ্বংসী অস্ত্রের উপস্থিতি থাকে না—এটিই অন্যতম বৈশিষ্ট্য।