‘বন্ধুত্বের প্রস্তাব’ প্রত্যাখ্যান করায় বাড়িতে ঢুকে পাকিস্তানি টিকটক তারকাকে গুলি করে হত্যা, অভিযুক্ত যুবক গ্রেপ্তার

পাকিস্তানের ইসলামাবাদে ইনস্টাগ্রামে জনপ্রিয় ১৭ বছর বয়সী কনটেন্ট ক্রিয়েটর সানা ইউসুফকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় উমর হায়াত নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। খবর বিবিসির।
নিহত তরুণীর পরিবার ও পুলিশ বলছে, 'বন্ধুত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান' করাতেই ২২ বছর বয়সী ওই যুবক সানার বাড়িতে ঢুকে তাকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর তার মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায় সে। অভিযুক্ত যুবক সানার সঙ্গে দেখা করার বহু চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, অভিযুক্ত উমর হায়াত ও সানার মধ্যে এক বছরের পরিচয় ছিল। এই সময়ের মধ্যে তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগও ছিল।
সূত্র ডনকে জানায়, গত ২৮ মে রাতে উমর ফয়সালাবাদ থেকে ইসলামাবাদে আসেন সানার জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে। তিনি সরাসরি সানার বাড়ি, সেক্টর জি-১৩-তে গিয়েও পৌঁছান। কিন্তু তখন তাদের দেখা হয়নি। ঠিক কী কারণে দেখা হয়নি, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
পরদিন দুজনের মধ্যে ফোনে কথা হয়। সেখানে উমর ক্ষোভ প্রকাশ করেন যে, সানা তার জন্মদিনে তার সঙ্গে দেখা করেনি। কথোপকথনের একপর্যায়ে তারা ২ জুন আবার দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
উমর নির্ধারিত দিন আবার সানার বাসার সামনে হাজির হন। কিন্তু এবারও সানা তার সঙ্গে দেখা করতে বাইরে আসেননি। এরপর কীভাবে যেন উমর বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়েন।
বাড়ির ভেতরে দুজনের মধ্যে তর্ক বাধে। সেই সময় উমর হঠাৎ আগ্নেয়াস্ত্র বের করে সানাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। গুলি লাগার পর হাসপাতালে নেওয়ার আগেই ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। পরে সানার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় চিত্রাল, যেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
সানার বাবা সৈয়দ ইউসুফ হাসান বিবিসিকে জানান, তার মেয়ে কখনো উমরের কথা বলেনি বা কোনো হুমকির ইঙ্গিত দেয়নি। তিনি বলেন, 'সানা আমার একমাত্র মেয়ে। সে খুব সাহসী ছিল।'
তিনি আরও জানান, ঘটনার সময় বাসায় সানার ফুফুও ছিলেন। ঘাতক তাকে গুলি করার হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অপরাধীর খোঁজে ইসলামাবাদ ও পাঞ্জাবজুড়ে অভিযান চালায় তারা। ১১৩টি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজনের গতিবিধি শনাক্ত করা হয়। পরে সানার মোবাইল ফোন এবং হত্যায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
সানা ইউসুফ পাকিস্তানে বেশ পরিচিত মুখ ছিলেন। ইনস্টাগ্রামে তার অনুসারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ লাখ। মৃত্যুর পর তার টিকটক অ্যাকাউন্টে অনুসারীর সংখ্যা এক লাফে ১০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে নিজের জন্মদিন উপলক্ষে বেলুনে ঘেরা একটি কেক কাটার ভিডিও পোস্ট করেছিলেন সানা, যেটি তার শেষ ইনস্টাগ্রাম পোস্ট ছিল।
তরুণ এই ইনফ্লুয়েন্সারকে নিয়ে খবর প্রকাশের পর সামাজিক মাধ্যমে তার মৃত্যু নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। একদিকে যেমন হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে, অন্যদিকে তার অনলাইন কার্যক্রম নিয়েও কিছু মানুষের সমালোচনা দেখা গেছে।
ডিজিটাল অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা 'বলো ভি'র পরিচালক উসামা খিলজি বলেন, সমালোচকদের একটি অংশ মূলত পুরুষ এবং তারা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সানার কনটেন্ট নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছেন। কেউ কেউ এমনকি পরিবারের কাছে অনুরোধ করছেন যেন তার টিকটক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলা হয়।
মানবাধিকারকর্মী ড. ফারজানা বারি এই প্রতিক্রিয়াকে 'পুরুষতান্ত্রিক' ও 'নারীবিদ্বেষী' আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, সানা তার নিজের মত প্রকাশ করতেন এবং এই হত্যাকাণ্ডের পর অনলাইনে যে প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তা প্রমাণ করে যে পাকিস্তানে নারীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখনো একটি হুমকির জায়গা হয়ে আছে।
ইসলামাবাদ পুলিশের আইজিপি সৈয়দ আলি নাসির রিজভী বলেন, 'যেসব নারী সোশ্যাল মিডিয়ায় কাজ করছেন, তারা আমাদের সমর্থন পাওয়ার যোগ্য। সানার মৃত্যু অত্যন্ত মর্মান্তিক।'
গ্রেপ্তার হওয়া উমর হায়াত পাঞ্জাবের ফয়সালাবাদের বাসিন্দা এবং একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তার ছেলে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।