কলোরাডোয় সমাবেশে বোমা হামলা, আহত ৮

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর বোল্ডারে ইসরায়েলি জিম্মিদের স্মরণে আয়োজিত এক সমাবেশে 'বোমা সদৃশ বস্তু' নিক্ষেপ করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে এক ব্যক্তি। এতে অন্তত আটজন আহত হন।
বোল্ডার পুলিশ জানায়, রোববার স্থানীয় সময় এক ব্যক্তি 'ফ্রি প্যালেস্টাইন' চিৎকার করে ভিড়ের দিকে আগুন লাগানো বোমা সদৃশ বস্তু নিক্ষেপ করে।
পুলিশ জানায়, আহতদের মধ্যে চারজন নারী ও চারজন পুরুষ রয়েছেন, যাদের বয়স ৫২ থেকে ৮৮ বছরের মধ্যে। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে পুলিশের দেওয়া প্রাথমিক তথ্যে বলা হয়েছিল, ছয়জন আহত হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে অন্তত একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এফবিআইয়ের ডেনভার ফিল্ড অফিসের প্রধান স্পেশাল এজেন্ট মার্ক মিশালেক বলেন, 'প্রাথমিক তথ্যে এটিকে উদ্দেশ্যমূলক সহিংস হামলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এফবিআই এটি সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে তদন্ত করছে।'
মিশালেক আরও জানান, হামলাকারীর নাম মোহাম্মদ সোলাইমান (৪৫)। হামলার পর তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সোলাইমান বা তার পরিবারের কোনো যোগাযোগের তথ্য তারা তাৎক্ষণিকভাবে পায়নি।
এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেলও এই ঘটনাকে 'টার্গেটেড টেরর অ্যাটাক' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কলোরাডোর অ্যাটর্নি জেনারেল ফিল ওয়াইজার বলেন, 'টার্গেট করা গোষ্ঠী বিবেচনায় এটি ঘৃণাজনিত অপরাধ (হেইট ক্রাইম) বলেই মনে হচ্ছে।'
বোল্ডার পুলিশের প্রধান স্টিফেন রেডফার্ন বলেন, 'এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত বলে মনে হচ্ছে না। আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, হামলাকারী একাই ছিলেন এবং তাকে আমরা আটক করেছি।'
হামলাটি ঘটে ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডোর পাশে অবস্থিত জনপ্রিয় পার্ল স্ট্রিট মলে, যেখানে 'রান ফর দেয়ার লাইভস' নামের একটি সংগঠন ইসরায়েলি জিম্মিদের স্মরণে একটি পদযাত্রার আয়োজন করেছিল। হামলার পর এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, ২০২৩ সালে হামাসের হামলার পর থেকে জিম্মিদের জন্য তারা প্রতি সপ্তাহে শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা করছে এবং এবারই প্রথম সহিংসতার ঘটনা ঘটল।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক বার্তায় এই হামলাকে 'ভয়াবহ ইহুদিবিদ্বেষী সন্ত্রাসী হামলা' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং বলেছেন, 'এটি নিখাদ ইহুদিবিদ্বেষিতা।'
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ইহুদিবিদ্বেষী অপরাধের ঘটনাও বেড়েছে। পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে ইসরায়েলের রক্ষণশীল সমর্থকরা ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভগুলোকে 'ইহুদিবিদ্বেষী' বলে প্রচার করে চলেছেন।
তার প্রশাসন যুদ্ধবিরোধী অনেক বিক্ষোভকারীকে অভিযোগ গঠন না করেই আটক করেছে এবং যে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমন বিক্ষোভে বাঁধা দেয়নি, সেগুলোর অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে।
এক্স-এ পোস্ট করা এক বার্তায় ট্রাম্পের উপ-প্রধান স্টাফ স্টিফেন মিলার দাবি করেন, হামলাকারী সোলাইমান ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন এবং আগের প্রশাসন তাকে কাজের অনুমতিও দিয়েছিল।
তিনি বলেন, এটি আবারও প্রমাণ করে যে 'আত্মঘাতী অভিবাসন নীতিমালার পুরোপুরি প্রত্যাহার এখন জরুরি।'
সোলাইমানের অভিবাসন-সংক্রান্ত তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানিয়েছে, এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।