২০২৫ সালে ছুটিতে শীর্ষে ইয়েমেন, বাংলাদেশে ৪০ দিন
কর্মবিরতি শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা এবং কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি। বিশ্বজুড়ে কর্মীরা কত দিনের বেতনসহ ছুটি পাবেন, তা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশের আইন, শ্রমনীতি ও সাংস্কৃতিক মানদণ্ডের ওপর।
বেতনসহ ছুটি একাধারে কর্মীদের বিশ্রাম নেওয়ার, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর এবং বিনোদনমূলক কাজে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয়; অন্যদিকে এটি কর্মদক্ষতা ও কাজে সন্তুষ্টি বাড়াতে সহায়ক, যা আধুনিক কর্মপরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বিভিন্ন দেশে ছুটির নিয়ম বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজারের প্রবণতা ও কর্মীদের অবসরের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ধারণা দেয়। তাই কর্মবিরতি কেবল বিলাসিতা নয়; এটি উৎপাদনশীলতা, মানসিক সুস্থতা ও কাজের ভারসাম্য রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
ছুটির সুযোগে এগিয়ে ইউরোপ
মোরপে প্রকাশিত গ্লোবাল পেইড লিভ রিপোর্ট ২০২৫ অনুযায়ী, বেতনসহ ছুটির ন্যূনতম সময়সীমা ঠিক করে জাতীয় সরকারগুলো, ব্যক্তিগত কোম্পানি নয়।
বেতনসহ কর্মীদের ছুটি দেওয়াতে ইউরোপ শীর্ষে। যুক্তরাজ্য কর্মীদের বছরে ২৮ দিনের বেতনসহ ছুটি দেয়, যা বিশ্বে দ্বিতীয়। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইতালি, লুক্সেমবার্গ ও কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। এসব দেশের কর্মীরা ২৬ দিন বেতনসহ ছুটি দিয়ে থাকে।
উত্তর ইউরোপের দেশ সুইডেন, নরওয়ে ও ডেনমার্ক ২৫ দিনের ছুটি দেয়, যা কর্মীদের জন্য উন্নত জীবনমান নিশ্চিত করে। জার্মানি, ফিনল্যান্ড, মাল্টা ও আইসল্যান্ডে সাধারণত ২৪ দিনের ছুটি দেওয়া হয়।
ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে আইন দ্বারা সুরক্ষিত হওয়ায় কর্মীদের ছুটি কমানো প্রায় অসম্ভব। ইউরোপীয়রা বছরে গড়ে ৩০ দিনের বেশি ছুটি পান, যা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সুযোগ করে দেয়।
মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এশিয়া
বিশ্বে সর্বোচ্চ ছুটি দিয়ে থাকে ইয়েমেন। দেশটির কর্মীরা বছরে ৩০ দিনের বেতনসহ বার্ষিক ছুটি এবং ১৬ দিনের সরকারি ছুটি মিলিয়ে মোট ৪৬ দিনের ছুটি পায়।
আফ্রিকার টোগো, জিবুতি ও গিনি দেশগুলোতেও ৩০ দিনের ছুটি দেওয়া হয়। মধ্যপ্রাচ্যে বাহরাইন ৩০ দিনের ছুটি দেয়, আর ইউএই ও ওমান ২২ দিনের ছুটি দেয়।
এশিয়ায় বৈচিত্র্য বেশি। ভারতে ১২ দিনের বার্ষিক ছুটি থাকলেও ১৭ দিনের সরকারি ছুটি যোগ হয়ে মোট ছুটি দাঁড়ায় ২৯ দিনে। ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও মেক্সিকোতেও প্রায় ১২ দিনের ছুটি দেওয়া হয়।
আমেরিকা ও ওশেনিয়া
লাতিন আমেরিকায় বেশিরভাগ দেশে ১২ থেকে ২২ দিনের ছুটি দেওয়া হয়। ব্রাজিল, কিউবা, পানামা ও পেরুতে থাকে ২২ দিনের ছুটি। মেক্সিকো, প্যারাগুয়ে ও গায়ানায় ১২ দিনের ছুটি দেওয়া হয়। আর্জেন্টিনা, কানাডা ও ক্যারিবীয় দেশগুলোতে সাধারণত ১০-১৫ দিনের ছুটি দেওয়া হয়।
ওশেনিয়ায় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে ২০ দিনের ছুটি দেওয়া হয়, যা ইউরোপের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ছোট দ্বীপরাষ্ট্র ফিজি ও সামোয়াতে ১০ দিনের ছুটি রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে কোনো আইনি বাধ্যতামূলক বেতনসহ ছুটি নেই। সব ছুটি ও সরকারি ছুটি নিয়োগকর্তার ইচ্ছাধীন।
সরকারি ছুটির গুরুত্ব
বেতনসহ ছুটির হিসাব করার ক্ষেত্রে সরকারি ছুটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক দেশে বার্ষিক ছুটি ও সরকারি ছুটি মিলিয়ে বেশ ভালো ছুটি পাওয়া যায়।
উদাহরণস্বরূপ- ভারতে ১২ দিনের বার্ষিক ছুটি এবং সরকারি ছুটি মিলিয়ে মোট ২৯ দিন হয়। ইয়েমেনে ৩০ দিনের ছুটি ও ১৬ দিনের সরকারি ছুটি মিলিয়ে ৪৬ দিন ছুটি পাওয়া যায়।
সিএন ট্রাভেলার প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী ২০২৫ সালে সবচেয়ে বেশি বেতনসহ ছুটি দেওয়া দেশগুলো হলো—
৩০ দিন: অস্ট্রিয়া, মোনাকো, ফ্রান্স, টোগো, জিবুতি, গিনি, লিবিয়া, বাহরাইন, ইয়েমেন।
২৮ দিন: যুক্তরাজ্য
২৬ দিন: লুক্সেমবার্গ, আইভরি কোস্ট, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, ইতালি
২৫ দিন: সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক
২৪ দিন: জর্জিয়া, ফিনল্যান্ড, মাল্টা, জার্মানি, আইসল্যান্ড, গ্যাবন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, বেনিন, চাদ, মালি, জাম্বিয়া, সিরিয়া
২২ দিন: আলবেনিয়া, পর্তুগাল, আন্দোরা, পেরু, ব্রাজিল, কিউবা, নিকারাগুয়া, পানামা, নাইজার, আলজেরিয়া, সোমালিয়া, কোমোরোস, মাদাগাস্কার, সিয়েরা লিওন, গিনি-বিসাউ, কেপ ভার্দে, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরান, ইউএই, ওমান, কুয়েত, তুর্কমেনিস্তান, মালদ্বীপ, স্পেন, কিরিবাতি, বুরকিনা ফাসো, অ্যাঙ্গোলা।
সর্বনিম্ন ছুটি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া (৮ দিন) ও যুক্তরাষ্ট্র (শূন্য দিন)।
ছুটি কেন গুরুত্বপূর্ণ
বেতনসহ ছুটি কেবল সুবিধা নয়; এটি কর্মদক্ষতা, মানসিক স্বাস্থ্য ও কর্মীদের ধরে রাখার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। পর্যাপ্ত ছুটি পাওয়া কর্মীরা বেশি সন্তুষ্টি, কম মানসিক চাপ ও উন্নত কর্মদক্ষতার কথা জানান।
যেসব দেশে বেশি ছুটি দেওয়া হয়—যেমন: পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো—সেখানে কর্মীরা বেশি সুস্থ থাকে।
আন্তর্জাতিকভাবে পরিচালিত কোম্পানিগুলোকে এসব আইনি বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়। তারা সাধারণত স্থানীয় আইনি ন্যূনতম ছুটির নিয়ম মেনে চলে এবং অতিরিক্ত সুবিধা দিয়ে দক্ষ কর্মী আকর্ষণ করে।
ছুটির নিয়ম জানা ভ্রমণ পরিকল্পনায়ও সাহায্য করে। যেমন- যেসব দেশে ৩০ দিনের ছুটি থাকে; সেখানে কর্মীরা আন্তর্জাতিক ভ্রমণ, দীর্ঘ পারিবারিক ভ্রমণ বা বহু দিনের রিট্রিট পরিকল্পনা করতে পারেন। অন্যদিকে, কম ছুটি পাওয়া কর্মীরা সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ বা স্থানীয় পর্যটনে গুরুত্ব দেন।
এ ছাড়া সরকারি ছুটির তথ্য জানা গেলে বার্ষিক ছুটি ব্যবহার না করেও বিশ্রামের সময় বাড়ানো সম্ভব। ভারত, ইয়েমেন ও ইউরোপে এ কৌশলটি বহুল প্রচলিত।
বিশ্বজুড়ে ছুটির নীতিতে বড় পার্থক্য রয়েছে। অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স ও ইয়েমেন বছরে ৩০ দিনের ছুটি দেয়, আর যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বাধ্যতামূলক বেতনসহ ছুটি নেই।
বেশিরভাগ দেশেই ছুটির মেয়াদ ২০-২২ দিনের মধ্যে। সরকারি ছুটি মিলিয়ে প্রকৃত ছুটির সময় আরও বাড়ে।
এসব নীতি সরাসরি কর্মীদের স্বাস্থ্য, উৎপাদনশীলতা ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সুযোগে প্রভাব ফেলে। ফলে স্থানীয় শ্রম আইন জানা কর্মী ও নিয়োগকর্তা উভয়ের জন্য জরুরি।
বাংলাদেশে কর্মীদের বেতনসহ ছুটি
বাংলাদেশে ২০২৫ সালে সাধারণ ছুটি ১২ দিন, আর নির্বাহী আদেশের ছুটি ১৪ দিন; মোট ২৬ দিন সরকারি ছুটি। তবে, এই ছুটিগুলো সপ্তাহের ছুটির দিন (শনিবার ও শুক্রবার) বাদে গণনা করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮ ও ২০১৯) অনুযায়ী, যে কোনো শিল্প, কারখানা বা প্রতিষ্ঠান ১ বছরের মধ্যে কর্মরত কর্মচারী কমপক্ষে ১৪ দিনের বেতনসহ বার্ষিক ছুটি পাওয়ার অধিকারী। অর্থাৎ, বার্ষিক ছুটি ও সরকারি ছুটি মিলিয়ে মোট ছুটি ৪০ দিন।
সাধারণ ছুটিগুলো হলো
২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, ২৮ মার্চ জুমাতুল বিদা, ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর, ১ মে মে দিবস, ২১ মে বুদ্ধপূর্ণিমা (বৈশাখী পূর্ণিমা), ৭ জুন ঈদুল আজহা, ১৬ আগস্ট জন্মাষ্টমী, ৫ সেপ্টেম্বর ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.), ২ অক্টোবর দুর্গাপূজা (বিজয়া দশমী), ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস ও ২৫ ডিসেম্বর যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন (বড়দিন)।
নির্বাহী আদেশে ছুটি হলো
১৫ ফেব্রুয়ারি শবে বরাত, ২৮ মার্চ শবে কদর, ২৯ ও ৩০ মার্চ এবং ১ ও ২ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের আগে দুই দিন ও পরে দুই দিনসহ মোট চার দিন, ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ, ঈদুল আজহার আগে ৫ ও ৬ জুন দুই দিন এবং পরে ৮ থেকে ১০ জুন তিন দিনসহ মোট পাঁচ দিন, ৬ জুলাই আশুরা ও ১ অক্টোবর দুর্গাপূজার মহানবমীর দিন নির্বাহী আদেশে ছুটি থাকবে।
