ম্যারাডোনার মৃত্যু মামলার বিচারপ্রক্রিয়া 'বাতিল'

দিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসক দলের বিচার প্রক্রিয়া আর্জেন্টিনায় বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। মামলার সঙ্গে যুক্ত এক বিচারক মামলাটি নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে অংশ নেওয়ার কথা প্রকাশ্যে আসার পর এই সিদ্ধান্ত আসে।
চলতি বছরের ১১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই বিচারকাজ চলার কথা ছিল জুলাই পর্যন্ত। তবে এখন এটি নতুন করে শুরু করতে হবে বলে জানিয়েছেন মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক।
২০২০ সালে ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর তার চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল তার চিকিৎসক দলের সাত সদস্যকে। যদিও তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।
গেল সপ্তাহে মামলার একজন মুখ্য বিচারক, হুলিয়েতা মাকিনটাচ নিজেকে মামলার সমস্ত কার্যক্রম থেকে প্রত্যাহার করে নেন। এতে আলোচিত এই বিচারপ্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ শঙ্কার মুখে পড়ে।
নৈতিকতা সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের মুখে পড়ে 'ঈশ্বরের বিচারক' নামে পরিচিত মাকিনতাচ এই বিচারপ্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ান ।
চলমান বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে তৈরি 'ডিভাইন জাস্টিস' নামের একটি মিনি সিরিজে তিনি বিচারকাজের বেশ কিছু অংশ কয়েক মাস ধরে ক্যামেরায় ধারণ করান এবং এতে অভিনয়ও করেন। সিরিজটি প্রকাশের পর থেকে শুরু হয় তীব্র বিতর্ক।
মাকিনতাচের অপেশাদার আচরণ দেখে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি পাত্রিসিও ফেরারি বলেন, 'আপনি একজন বিচারকের মতো নয়, একজন অভিনেত্রীর মতো আচরণ করছেন।'
মাকিনতাচের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ, প্রভাব খাটানো ও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এছাড়া কিছু ফুটেজ আদালতের অনুমতি ছাড়া রেকর্ড করা হয়, যা আদালতের নিয়মের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
তীব্র সমালোচনার মুখে বিচারক মাকিনতাচ বলেন, 'আমার আর কোনো উপায় ছিল না' এবং নিজেকে মামলার কার্যক্রম থেকে সরিয়ে নেন।
এরপর বিচারকাজ স্থগিত করা হয় এবং গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হয় যে মামলাটি বাতিল হতে যাচ্ছে।
মামলা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ৫০ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন, যার মধ্যে ম্যারাডোনার দুই মেয়েরাও ছিলেন।
তবে নতুন বিচারকাজের তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি এবং নতুন বিচারকও মনোনীত হননি।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের নভেম্বরে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে অস্ত্রোপচারের পর বুয়েনোস এইরেসের নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন ছিলেন সাবেক ন্যাপোলি ও আর্জেন্টিনা মিডফিল্ডার ম্যারাডোনা। সে সময় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৬০ বছর বয়সী এই ফুটবল কিংবদন্তি।
তবে ম্যারাডোনাকে প্রদত্ত চিকিৎসাসেবাকে 'বেপরোয়া, ত্রুটিপূর্ণ ও নজিরবিহীন' বলে বর্ণনা করে কৌঁসুলিরা তার চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তোলেন সাত চিকিৎসাকর্মীর বিরুদ্ধে।
মামলায় অভিযুক্ত চিকিৎসকদের মধ্যে একজন নিউরোসার্জন, একজন চিকিৎসক ও একজন নাইট নার্স রয়েছেন। চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করে তারা দাবি করেন, মৃত্যুর আগে অবসরপ্রাপ্ত ফুটবলার ম্যারাডোনা আরও কিছু দিন বাড়িতে থেকে থেকে চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
দোষী সাব্যস্ত হলে অভিযুক্তদের ৮ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।