পুতিনকে ‘উন্মাদ’ বলায় ট্রাম্পকে ‘আবেগী’ বলল ক্রেমলিন

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে 'উন্মাদ' বলে মন্তব্য করার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প 'আবেগের চাপে ভুগছিলেন' বলে দাবি করেছে ক্রেমলিন। ইউক্রেনে মস্কোর বৃহত্তম বিমান হামলার পর পুতিনকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। খবর বিবিসি'র।
রোববার (২৬ মে) ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প বলেন,'পুতিনের কী হলো? তিনি তো অনেক মানুষ মেরে ফেলছেন।' পরে তিনি পুতিনকে 'পুরোপুরি উন্মাদ' বলেও অভিহিত করেন।
রোববার রাতভর রাশিয়ার ছোড়া ৩৬৭টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনে অন্তত ১২ জন নিহত হয় এবং আহত হয় বহু মানুষ। ২০২২ সালে পুতিন ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর এক রাতে এত বড় হামলা এই প্রথম।
এই হামলার পরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুতিনকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্যগুলো করেন। এর জবাবে পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, 'এই মন্তব্যগুলো সংশ্লিষ্ট সকলের আবেগের চাপে ভোগার সঙ্গে সম্পর্কিত।'
পেসকভ বলেন, এই হামলাগুলো রাশিয়ার 'সামাজিক অবকাঠামোর' ওপর ইউক্রেনের চালানো হামলার জবাব।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর ছোড়া ২০টি ইউক্রেনীয় ড্রোন তারা ধ্বংস করেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার বলেন, রাশিয়ার এই আকাশ হামলাগুলোর 'কোনও সামরিক উদ্দেশ্য নেই'। বরং তিনি বলেন, 'এটা একেবারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত... পুতিনের সিদ্ধান্ত, রাশিয়ার সিদ্ধান্ত... যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ও প্রাণ ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত।'
রাশিয়ার এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎর্স বলেন, ইউক্রেনকে দেওয়া অস্ত্রে আর পাল্লার সীমাবদ্ধতা থাকছে না।
তিনি বলেন, 'এখন ইউক্রেন নিজেদের রক্ষা করতে পারবে, যেমন—রাশিয়ার সামরিক অবস্থান লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালাতে পারবে। এত দিন এমনটা খুবই কম করেছিল। এখন সেটা করতে পারবে।'
রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী বুধবার জেলেনস্কির বার্লিন সফরের কথা রয়েছে। তবে এটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।
বিবিসি জার্মান চ্যান্সেলর কার্যালয়ের কাছে জানতে চেয়েছে, মেৎর্স-এর বক্তব্যের মাধ্যমে টরাস ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের কোনও ঘোষণা আসছে কি না—যেটা আগের জার্মান সরকার দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
গত বছর যুক্তরাজ্য বলেছিল, ইউক্রেন কীভাবে ব্রিটিশ অস্ত্র ব্যবহার করবে, সেই সিদ্ধান্ত তাদের নিজস্ব। নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার ওপর ব্যবহারের অনুমতি দেন, যদিও সেখানে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল।
টরাস ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় ৫০০ কিলোমিটার, যা ইউক্রেনের মিত্রদের সরবরাহ করা অন্যান্য অস্ত্রের তুলনায় অনেক বেশি। রাশিয়া বলেছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ 'একটি বিপজ্জনক পদক্ষেপ' হবে।
রোববার রাতে নিউ জার্সিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, 'আমি তাকে (পুতিনকে) অনেক দিন ধরে চিনি, সব সময় তার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এখন তিনি শহরে শহরে রকেট ছুড়ে মানুষ মারছেন, এবং এটি আমি একদমই পছন্দ করছি না।'
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে বৃহত্তম রুশ হামলার পর পুতিনকে 'উন্মাদ' বললেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'অবশ্যই।' তিনি এর আগেও একাধিকবার এ ধরনের হুমকি দিয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত মস্কোর বিরুদ্ধে কোনো নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেননি।
এর কিছু পরই ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লেখেন, 'পুতিন পুরোপুরি উন্মাদ হয়ে গেছেন।'
তিনি আরও লেখেন, 'আমি সব সময়ই বলে আসছি, তিনি ইউক্রেনের একটা অংশ নয়, পুরো দেশটাই চান। এখন হয়ত প্রমাণ মিলছে আমি ঠিকই বলেছিলাম। কিন্তু যদি তিনি তা করেন, তাহলে সেটি রাশিয়ার পতনের পথ তৈরি করবে।'
তবে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে নিয়েও তিনি কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, 'তিনি যেভাবে কথা বলছেন, সেটা তাঁর দেশের কোনো উপকারে আসছে না।'
জেলেনস্কিকে নিয়ে ট্রাম্প লেখেন, 'তাঁর মুখ থেকে যা কিছু বের হয়, তা কেবল সমস্যাই সৃষ্টি করে। আমি এটা পছন্দ করছি না, এবং এটা বন্ধ হওয়া উচিত।'
ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে এ প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি না হলে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার চেষ্টা থেকে 'সরে দাঁড়াবে' বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
গত সপ্তাহে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা করতে টেলিফোনে দুই ঘণ্টা কথা বলেন ট্রাম্প এবং পুতিন।
আলোচনার পর ট্রাম্প বলেন, ফোনালাপটি 'খুব ভালো' হয়েছে। তিনি আরও জানান, রাশিয়া ও ইউক্রেন 'তাৎক্ষণিকভাবে' যুদ্ধবিরতি এবং 'যুদ্ধের অবসান' নিয়ে আলোচনা শুরু করবে।
ইউক্রেন ইতোমধ্যে প্রকাশ্যেই ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মতির কথা জানিয়েছে।
অন্যদিকে পুতিন শুধু বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন একটি 'সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ শান্তির' বিষয়ে একটি 'স্মারকলিপি' প্রণয়নে একসঙ্গে কাজ করবে। কিয়েভ এবং ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়ার এই অবস্থানকে সময়ক্ষেপণ বলে অভিহিত করেছে।
২০২২ সালের পর গত ১৬ মে প্রথমবারের মতো ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সরাসরি আলোচনা হয় ।
তবে, গত সপ্তাহের একটি বড় যুদ্ধবন্দি বিনিময় ছাড়া যুদ্ধবিরতির বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে দখলকৃত ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপদ্বীপ ক্রিমিয়া।