লিভারপুলের শিরোপা প্যারেডে গাড়ি চাপায় হাসপাতালে ভর্তি ২৭, গ্রেপ্তার ১

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের শিরোপা জয়ের আনন্দ উদযাপনে আয়োজিত বিজয় মিছিলে গাড়ি উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনায় অন্তত ২৭ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশ জানিয়েছে, তারা ঘটনাটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচনা করছে না।
সোমবার (২৬ মে) লিভারপুল শহরে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, তারা 'লিভারপুল এলাকার ৫৩ বছর বয়সী এক শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ পুরুষকে' গ্রেপ্তার করেছে। তিনি গাড়িটি চালাচ্ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই ব্যক্তি শহরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্যারেডের ভিড়ের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেন।
ঘটনাস্থলে ২০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। হাসপাতাল নেওয়া ২৭ জনের মধ্যে চারজন শিশু। তাদের মধ্যে এক শিশু ও এক প্রাপ্তবয়স্ক গুরুতর আহত। গাড়ির নিচে আটকে পড়া চারজনকে দমকল কর্মীরা উদ্ধার করেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, গাড়িটি ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়লে অনেকে ছিটকে যান। গাড়ি থেমে গেলে ক্ষুব্ধ সমর্থকেরা সেটিকে ঘিরে জানালায় আঘাত করতে থাকেন। পুলিশ দ্রুত হস্তক্ষেপ করে চালকের কাছে ভিড় জমতে বাধা দেয়।
পুলিশের অস্থায়ী ডেপুটি চিফ কনস্টেবল জেনি সিমস বলেন, 'আমরা ঘটনাটিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখছি। এর সঙ্গে আর কারও সম্পৃক্ততা নেই বলে মনে করছি। এটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নয়।'
স্প্রিং ব্যাংক হলিডের ছুটির দিনে শহরের কেন্দ্রস্থলে হাজারো লিভারপুল সমর্থক দল ও কর্মকর্তাদের খোলা ছাদওয়ালা বাসে শিরোপা প্রদর্শনের প্যারেড দেখতে জড়ো হন। এক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে বিবিসি জানায়, দলের বাসটি ঘটনাস্থল পার হওয়ার প্রায় ১০ মিনিট পর গাড়িচাপার ঘটনাটি ঘটে।
লিভারপুল সিটি কাউন্সিলের প্রধান লিয়াম রবিনসন বলেন, 'এটি ছিল এক আনন্দঘন দিন, কিন্তু এই ঘটনার কারণে উৎসবের ওপর অন্ধকার ছায়া নেমে এসেছে।'
রয়টার্সের এক আলোকচিত্রী জানান, জরুরি সেবাকর্মীরা আহতদের স্ট্রেচারে করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলছিলেন এবং রাস্তায় ছড়িয়ে ছিল ধ্বংসাবশেষ।
গ্রেপ্তার ব্যক্তির পরিচয় এত দ্রুত প্রকাশ করা সাধারণত দেখা যায় না। তবে লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক প্রধান সুপারিনটেনডেন্ট ডাল বাবু বিবিসিকে বলেন, ইসলামপন্থী হামলার গুজব ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতেই পুলিশ এমনটি করেছে।
উল্লেখ্য, এই একই পুলিশ বাহিনী গত বছর সাউথপোর্টে তিন কিশোরী হত্যার ঘটনায় তদন্ত করেছিল। ওই ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর কয়েকদিন ধরে দাঙ্গা চলেছিল।
সোমবারের ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী চেলসি বিবিসিকে বলেন, 'হঠাৎ মানুষের চিৎকার শুনে উপরে তাকাই। সামনে দেখি গাড়ি। ভাগ্যক্রমে আমরা লাফিয়ে একপাশে সরে যেতে পেরেছিলাম।' তিনি জানান, চালকের গতি কমানোর কোনো লক্ষণ ছিল না।
লিভারপুল সর্বশেষ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতেছিল করোনা মহামারির সময়। তখন লকডাউনের কারণে কোনও উৎসব করতে পারেনি দলটি।
রয়টার্সের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনার আগে থেকেই শহরের কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভিড় ও দিকনির্দেশনার অভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। অনেকেই রাস্তা বন্ধ থাকার বিষয়ে বিভ্রান্ত ছিলেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এক্স-এ লিখেছেন, 'ঘটনার দৃশ্য ছিল ভয়াবহ। আমি আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতি জানাচ্ছি।' তিনি জানান, তিনি নিয়মিত পরিস্থিতির আপডেট পাচ্ছেন।
লিভারপুল ফুটবল ক্লাব এক্স-এ জানায়, তারা পুলিশের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছে। এক বিবৃতিতে ক্লাবটি জানায়, 'এই মারাত্মক ঘটনার শিকারদের জন্য আমাদের প্রার্থনা ও সহমর্মিতা রইল।'