গাজার হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন মা, কয়েক ঘণ্টা পর সেখানেই এল ৯ সন্তানের দগ্ধ দেহ

শুক্রবার সকালে দক্ষিণ গাজার নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কাজ করতে যাওয়ার সময় ডা. আলা আল-নাজ্জার বাড়িতে তার ১০ সন্তানকে রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরই ওই হাসপাতালেই পৌঁছায় তার সাত সন্তানের মরদেহ, সবার শরীর পুড়ে অঙ্গার। এর পরের দিন শনিবার সকালে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ৭ মাস ও ২ বছর বয়সী আরও দুই শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নিহত ওই শিশুদের বয়স ৭ মাস থেকে ১২ বছরের মধ্যে।
১০ সন্তানের মধ্যে মারাত্বক আহত অবস্থায় বেঁচে ছিল শুধু ১১ বছর বয়সী আদম। ডা. নাজ্জারের চিকিৎসক স্বামীও বিমান হামলায় গুরুতর আহত হন।
গাজার সিভিল ডিফেন্স ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, খান ইউনুস এলাকার তাদের বাড়িটি ইসরায়েলি বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল।
সিএনএনের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, তারা খান ইউনুস এলাকায় আইডিএফ সেনাদের কাছাকাছি একটি স্থাপনায় 'কার্যক্রম পরিচালনাকারী একাধিক সন্দেহভাজনের' অবস্থান শনাক্ত করে বিমান হামলা চালিয়েছিল। তারা জানায়, হামলায় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে কি না, তা তারা খতিয়ে দেখছে।
গাজার সিভিল ডিফেন্স হামলার স্থল থেকে গ্রাফিক ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া বাড়ি থেকে দগ্ধ শিশুদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে, অন্যদিকে দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। আহত একজনকে স্ট্রেচারে তোলা হচ্ছে।
'সম্পূর্ণ পরিবার নিশ্চিহ্ন'
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বারশ এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে বলেন, ডা. নাজ্জারের স্বামী বাড়ি ফিরে আসার কিছুক্ষণ পরই হামলা হয়েছিল। তিনি নিহত শিশুদের নাম উল্লেখ করে জানান, '৯ শিশু নিহত হয়েছে: ইয়াহিয়া, রাকান, রাসলান, জেবরান, ইভ, রিভাল, সাইদেন, লুকমান এবং সিদরা।' তিনি জানান, ডা. নাজ্জারের স্বামী বর্তমানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।
বারশ বলেন, 'গাজার চিকিৎসা কর্মীদের জন্য এটাই বাস্তবতা। এখানে কেবল স্বাস্থ্যকর্মীরাই নয়, ইসরায়েলি আগ্রাসন পুরো পরিবারকেই নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে।'
নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আহমদ আল-ফাররা সিএনএনকে বলেন, ডা. নাজ্জার তার স্বামী ও একমাত্র জীবিত সন্তান আদমের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে নিজ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ফাররা জানান, বাবা-ছেলে দুজনেরই হাসপাতালে দুটি করে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে এবং তারা এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউসুফ আবু আল-রিশ বলেন, ডা. নাজ্জার নিজের সন্তানদের বাড়িতে রেখে হাসপাতালে যান, কারণ অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসার জন্য তার মতো মানুষের দায়িত্ব পালন করা জরুরি। তিনি বলেন, 'আমি হাসপাতালে পৌঁছে দেখলাম তিনি মাথা উঁচু করে, শান্তভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। তার চোখে ছিলো ধৈর্য আর নিয়তি মেনে নেওয়ার প্রতিচ্ছবি। আর চাহনিতে স্পষ্ট ছিল শুধু সৃষ্টিকর্তার মহিমা উচ্চারণ আর ক্ষমা প্রার্থনার ধ্বনি।'
৩৮ বছর বয়সী ডা. নাজ্জার শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ হলেও, চলমান সংঘর্ষের কারণে গাজার চিকিৎসকরা প্রায় সবাই এখন জরুরি বিভাগে কাজ করছেন।