কঙ্গোর উদ্ধার কার্যক্রমের ভিডিও দেখিয়ে দ. আফ্রিকায় ‘শ্বেতাঙ্গ কৃষক’ হত্যার অভিযোগ তোলেন ট্রাম্প

হোয়াইট হাউসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি ছবি দেখিয়ে দাবি করেন, এটি দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের গণহত্যার প্রমাণ। তবে তার এ দাবি সঠিক নয় বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। বাস্তবে ছবিটি ছিল কঙ্গোর গোমা শহরে সংঘটিত সংঘর্ষের পর মৃতদেহ উদ্ধার কার্যক্রমের একটি দৃশ্য।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ওয়াশিংটন সফরে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের লক্ষ্যে। ট্রাম্প সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দক্ষিণ আফ্রিকার জমি আইন ও শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ তুলে সমালোচনা করে আসছিলেন।
বুধবার হোয়াইট হাউসে রামাফোসার সঙ্গে এক উত্তপ্ত বৈঠকে টেলিভিশন ট্রাম্প হঠাৎ করে একটি ভিডিও চালিয়ে বলেন, এটি দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের বিরুদ্ধে 'গণহত্যার প্রমাণ'। ট্রাম্প পরে বেশ কিছু প্রিন্ট করা প্রতিবেদন ও ছবি দেখাতে শুরু করেন, যেগুলো তিনি দাবি করেন—এরা সবাই দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ কৃষক, যাদের কবর দেওয়া হচ্ছে। তিনি বারবার বলতে থাকেন, 'মৃত্যু, মৃত্যু, মৃত্যু—ভয়াবহ মৃত্যু।'
তবে রয়টার্স জানায়, ছবিটি তাদের ৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি ইউটিউব ভিডিওর স্ক্রিনগ্র্যাব। তাদের ফ্যাক্ট-চেক দলও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

আসল ভিডিওতে দেখা যায়, রুয়ান্ডা-সমর্থিত এম২৩ বিদ্রোহীদের হামলার পর গোমা শহরে মানবিক সংস্থার কর্মীরা মরদেহের ব্যাগ তুলছেন। এই ভিডিও ধারণ করেন রয়টার্সের ভিডিও সাংবাদিক দাফার আল কাটান্তি। তিনি বলেন, 'সেদিন সাংবাদিকদের ঢোকা ছিল কঠিন। আমাকে এম২৩ বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরাসরি সমঝোতা করতে হয়েছিল এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রসের সঙ্গে সমন্বয় করে ভিডিও ধারণ করতে হয়।'
আল কাটান্তি বলেন, 'বিশ্ববাসীর সামনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমার ভিডিও ব্যবহার করেছেন, যা আমি কঙ্গোতে ধারণ করেছি—তাতে বোঝাতে চেয়েছেন যে দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের হাতে খুন হচ্ছেন। বিষয়টি দেখে আমি বিস্মিত।'
ট্রাম্প যেই পোস্টটি রামাফোসার সামনে উপস্থাপন করেন, সেটি প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ডানপন্থী অনলাইন ম্যাগাজিন 'এমেরিকান থিঙ্কার'। পোস্টটিতে ছবি সম্পর্কে ক্যাপশন না থাকলেও এটি 'ইউটিউব স্ক্রিনগ্র্যাব' হিসেবে চিহ্নিত ছিল এবং একটি ইউটিউব ভিডিওর লিঙ্ক সংযুক্ত ছিল, যেখানে রয়টার্সের ক্রেডিট দেওয়া হয়েছে।
রয়টার্সের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া চাইলে হোয়াইট হাউস কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এমেরিকান থিঙ্কার-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও পোস্টটির লেখক আন্দ্রেয়া উইডবার্গ জানান, ট্রাম্প ছবিটি ভুলভাবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও পোস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারকে 'দুর্নীতিগ্রস্ত, জাতিগত বিষয়ে অতি-আসক্ত মার্কসবাদী সরকার' বলা হয়েছে, এবং তাতে 'শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের ওপর বাড়তে থাকা চাপ' নিয়েও মন্তব্য ছিল।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের বিভ্রান্তিকর উপস্থাপনা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পরিবেশে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের নজির স্থাপন করে।