রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে ‘বাফার জোন’ তৈরি করছে রুশ বাহিনী: পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের সীমান্ত বরাবর একটি 'নিরাপত্তা বাফার জোন' তৈরি করছে রুশ সশস্ত্র বাহিনী।
তিনি বলেন, 'আমি আগেই বলেছি যে, সীমান্তে প্রয়োজনীয় বাফার জোন তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বর্তমানে এই সমস্যার সমাধানে কাজ করছে। শত্রুর গোলাবর্ষণের অবস্থানগুলোকে সক্রিয়ভাবে দমন করা হচ্ছে।'
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিওরহি তিখি এ পরিকল্পনাকে 'আক্রমণাত্মক' হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, 'বর্তমানে শান্তি প্রচেষ্টার পথে প্রধান অন্তরায় রাশিয়াই।'
আজ শুক্রবার ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে বন্দি বিনিময় হওয়ার কথা রয়েছে। তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার পুতিন এ ঘোষণা দেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট এর আগেও মার্চ মাসে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল সফরের সময় 'বাফার জোন' তৈরির সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। এরপর বৃহস্পতিবার সরকারের সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি সীমান্ত পরিকল্পনার ওপর জোর দেন এবং সীমান্ত অঞ্চলে 'যা কিছু ধ্বংস হয়েছে, তা পুনর্গঠন ও পুনঃনির্মাণের' প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
পুতিন আরও বলেন, 'আমাদের মানুষকে তাদের নিজ নিজ গ্রাম, বসতি ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি যেখানে অনুমতি দেয়, সেসব জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করতে হবে এবং সব ধরনের যোগাযোগ ও অন্যান্য অবকাঠামো পুনরুদ্ধার করতে হবে।'
রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ার নেতা পুতিন সীমান্ত অঞ্চলে 'পুনর্গঠন' প্রকল্প নিয়ে আলোচনার জন্য একটি বিশেষ বৈঠক আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন।
বুধবার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই ঘোষণার মাত্র কয়েক দিন আগে পুতিন রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল সফর করেন।
কুরস্ক অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর গতকাল বৃহস্পতিবার জানান, ইউক্রেনের হামলায় রাশিয়ার লগভ শহরে দুই শিশুসহ ১২ জন বেসামরিক লোক আহত হয়েছে। প্রাথমিক মূল্যায়ন অনুযায়ী, ওই 'ব্যাপক' হামলায় চারটি যানবাহন, দুটি বাড়ি এবং একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বলে জানান তিনি।
মার্কিনভিত্তিক সংঘাত পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার-এর এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সীমান্ত অঞ্চল সফরের সময় স্থানীয় পৌর কর্মকর্তাদের সঙ্গে নতুন বাফার জোন নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, একজন স্থানীয় কর্মকর্তা পুতিনকে ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলে বাফার জোন তৈরির আহ্বান জানান। জবাবে পুতিন জানতে চান, এই জোন কত কিলোমিটার গভীরে হওয়া উচিত।
এছাড়াও, পুতিন তার সফরের সময় বলেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার সীমান্তের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে, বলে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা রিয়া নভোস্তি জানিয়েছে।
গত আগস্টে কিয়েভ রুশ সীমান্ত অঞ্চলে হামলা চালায়। ওই অঞ্চলটির কিছু অংশ গত মাসের শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল, এবং কিয়েভ শান্তি আলোচনায় এটি একটি বড় দেনা-পাওনার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছিল।
তবে, এমন আলোচনা গত সপ্তাহ পর্যন্ত শুরু হয়নি। তুরস্কে অনুষ্ঠিত গত আলোচনায় কিয়েভ ও মস্কোর প্রতিনিধিরা মুখোমুখি বৈঠকে মিলিত হয় যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনা শুরু করে এবং প্রত্যেক পক্ষ থেকে এক হাজার বন্দি বিনিময়ে সম্মত হয়।
রুশ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের প্রস্তাবিত যুদ্ধবন্দিদের বিনিময়ের তালিকা পেয়েছে।
তালিকা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে পেসকভ বলেন, 'হ্যাঁ, আমরা এখন এটি পেয়েছি।'
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার এক্স প্ল্যাটফর্মে বলেছেন, ইউক্রেন রাশিয়ার পাঠানো তালিকায় থাকা প্রত্যেক ব্যক্তির বিস্তারিত তথ্য যাচাই করছে।
জেলেনস্কি আরও বলেছেন, 'তুরস্কে অনুষ্ঠিত বৈঠকের একমাত্র স্পষ্ট ফলাফল হতে পারে রাশিয়ার বন্দিত্ব থেকে আমাদের এক হাজার মানুষের মুক্তির চুক্তি। আমরা এই ফলাফল বাস্তবায়িত হবে, তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি।'