রূপপুর প্রকল্পের ঋণ ছাড়ের মেয়াদ বাড়ল
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে রাশিয়ার ঋণ ছাড়ের সময়সীমা ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাড়াতে সফল হয়েছে বাংলাদেশ।
গত ১৪ জুলাই, রাশিয়ার সঙ্গে "প্রটোকল-২" নামে পরিচত গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তিটি সই হয়, যা করোনা মহামারি এবং রুশ ব্যাংকগুলোর ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাজনিত বিলম্ব বিবেচনায় নিয়ে করা হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের উপস্থিতিতে সংশোধিত শর্তাবলির চুক্তিটি সই হয়, যার আওতায় মূল ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরুর সময় ১৮ মাস পেছানো হয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর সচিব মো. শাহরিয়ার কাদির সিদ্দিকী বিষয়টি নিশ্চিত করে টিবিএস-কে বলেন, "একটি নতুন প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে। আমরা এখন আশা করছি, প্রকল্পটি সময়মতো শেষ করা সম্ভব হবে।"
ঋণ চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী
বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যকার আন্তঃসরকার চুক্তি অনুযায়ী, রূপপুরের মূল প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ছিল ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত। ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ড শেষে ঋণের আসল পরিশোধ শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০২৭ সালের মার্চ থেকে। নতুন চুক্তি বা প্রটোকল -২ অনুযায়ী যা এখন ২০২৮ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হবে।
রূপপুর প্রকল্পের মোট আনুমানিক ব্যয় ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ৯০ শতাংশ—অর্থাৎ ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার—রাষ্ট্রীয় ঋণের মাধ্যমে জোগান দিচ্ছে রাশিয়া এবং বাকি ১০ শতাংশ বহন করছে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রায় ৭.৭০ বিলিয়ন ডলার অর্থছাড় পেয়েছে, তবে বিগত কয়েক বছর ধরে অর্থ বিতরণে বিলম্ব হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা ও তার সমাধান
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়, যার ফলে রূপপুর প্রকল্পের সমীক্ষার জন্য নেওয়ার ঋণের আসলের দুই কিস্তি বাবদ বাবদ ৫০০ মিলিয়ন ডলার এবং মূল রূপপুর প্রকল্প ঋণের সুদ পরিশোধ করতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে অর্থপ্রদানে বিলম্বের জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়, কারণ তহবিল সোনালী ব্যাংকে রোসাটমের অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা করা হলেও, তা নিতে পারেনি রাশিয়া। একারণে দীর্ঘ দিন প্রটোকল চুক্তিটিও আটকে ছিল।
তবে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ আন্তঃসরকারি ঋণ চুক্তি সংশোধনে সম্মতি দেন। বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উভয় পক্ষ শিগগিরই সংশোধনী চূড়ান্ত করবে।
এরপর গত এপ্রিলে রাশিয়া থেকে খসড়া প্রটোকল প্রস্তাব ইআরডিতে পাঠানো হয়। খসড়া প্রটোকলের ওপর একাধিক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাও হয়েছে, যেখানে রাশিয়ার বিভিন্ন প্রস্তাব বিশ্লেষণ করার পর চুক্তি সই হয়েছে।
কিস্তি পরিশোধ ও জরিমানার শর্ত
ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, গ্রেস প্রিরিয়ড বাড়লেও রূপপুরের ঋণের ম্যাচিউরিটি পিরিয়ড বাড়ছে না। আগে যেখানে ২০ বছরে ৪০টি সমান কিস্তিতে আসল পরিশোধের করার সুযোগ ছিল, এখন তা ৩৮টি কিস্তিতে নেমে আসবে। প্রতি বছর ১৫ মার্চ ও ১৫ সেপ্টেম্বর—কিস্তি পরিশোধ করতে হবে।
এছাড়া বাংলাদেশকে অব্যবহৃত ঋণের পরিমাণের ওপর ০.৫ শতাংশ হারে কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে, যার সর্বোচ্চ সীমা বার্ষিক ০.২৫ মিলিয়ন ডলার এবং তা পরবর্তী বছরের প্রথম প্রান্তিকে পরিশোধ করতে হবে।
তবে সই হওয়া প্রটোকলের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ব্যবহৃত ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণের বিলম্বিত কিস্তির কারণে বাংলাদেশকে ১৬৪ মিলিয়ন ডলার জরিমানা থেকে অব্যাহতি দিতে রাশিয়া সম্মত হয়েছে।
আগে ঋণ পরিশোধ এক মাস বিলম্বিত হলে বাংলাদেশকে ৪.৫ শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হতো। ১৫ মার্চ ২০২২ থেকে ১৫ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত সময়ে সম্ভাব্যতা অধ্যয়নের ঋণের কিস্তি বকেয়া থাকলে বাংলাদেশকে প্রায় ১৬৪.১৭ মিলিয়ন ডলার জরিমানা গুনতে হতো। তবে সংশোধিত প্রটোকলে উল্লেখ করা হয়েছে, এই অর্থ 'বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হবে না', কারণ সংশ্লিষ্ট বিধানগুলো প্রস্তাবিত চুক্তি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বকেয়া পরিশোধ নিয়ে সংশোধিত শর্তাবলিতে যদিও বলা হয়েছে, যদি কোনো কিস্তি ৩০ দিনের বেশি সময় ধরে বকেয়া থাকে, তবে তা বিলম্বিত হিসাবে বিবেচিত হবে এবং দৈনিক সুদের হার বার্ষিক ১৫০ শতাংশ হারে ধার্য হবে।
