'সীমাহীন পাল্লার' পারমাণবিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘বুরেভেস্তনিক’-এর সফল পরীক্ষা চালানোর দাবি রাশিয়ার
রাশিয়ার শীর্ষ জেনারেল জানিয়েছেন, মস্কো পারমাণবিক শক্তিচালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র 'বুরেভেস্তনিক'-এর 'সফল পরীক্ষা' চালিয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এক টেলিভিশন বৈঠকে জানান, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি টানা ১৫ ঘণ্টা আকাশে উড়ে ১৪ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছে।
গেরাসিমভ বলেন, ক্ষেপণাস্ত্রটির উল্লম্ব ও আনুভূমিক গতিপথের কর্মক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তা প্রত্যাশিত মানে উত্তীর্ণ হয়েছে। রুশ সংবাদ সংস্থা তাসকে তিনি বলেন, 'এটি প্রমাণ করেছে যে ক্ষেপণাস্ত্রটি সহজেই শত্রু দেশের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে যেতে সক্ষম।'
২০১৮ সালে প্রথম উন্মোচিত এই পরীক্ষামূলক অস্ত্রটির পাল্লা কার্যত 'সীমাহীন' এবং এটি যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম বলে দাবি করা হয়েছে।
তবে পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা এর আগে ক্ষেপণাস্ত্রটির কৌশলগত কার্যকারিতা এবং সফল পরীক্ষার রুশ দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
পুতিন এর আগে ২০২৩ সালেও বলেছিলেন, অস্ত্রটির একটি 'চূড়ান্ত সফল পরীক্ষা' সম্পন্ন হয়েছে, যদিও সেটি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত একটি প্রচার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১৩টি পরীক্ষার মধ্যে মাত্র দুটি আংশিকভাবে সফল হয়েছিল।
আর মার্কিন বিমানবাহিনীর ন্যাশনাল এয়ার অ্যান্ড স্পেস ইন্টেলিজেন্স সেন্টারের ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, 'একটি পারমাণবিকচালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়াকে একটি অনন্য অস্ত্র দেবে, যার পাল্লা আন্তঃমহাদেশীয়।'
তবে একই বছর আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা সংস্থা (আইআইএসএস) জানায়, এই প্রযুক্তি বাস্তবায়নে রাশিয়াকে এখনো নানা জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ক্ষেপণাস্ত্রটির কার্যকারিতা নির্ভর করছে পারমাণবিক ইঞ্জিনের নির্ভরযোগ্যতা ও স্থায়িত্বের ওপর। এ পর্যন্ত একাধিক পরীক্ষায় ব্যর্থতা এবং একটি দুর্ঘটনায় কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।'
রুশ সামরিক পত্রিকাগুলোর বরাতে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা ১০ থেকে ২০ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে, যা রাশিয়ার যেকোনো অঞ্চল থেকে উৎক্ষেপণ করে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
এছাড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি মাটির মাত্র ৫০ থেকে ১০০ মিটার ওপর দিয়ে উড়তে পারে, যা একে শনাক্ত বা প্রতিহত করা প্রায় অসম্ভব করে তোলে।
ন্যাটোর দেওয়া কোডনাম 'স্কাইফল' (স্কাইফল) হিসেবে পরিচিত এই ক্ষেপণাস্ত্রটি একটি পারমাণবিক রিঅ্যাক্টরের মাধ্যমে চালিত, যা প্রাথমিকভাবে ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য প্রচলিত জ্বালানি বুস্টার দিয়ে আকাশে উঠার পর সক্রিয় হয়।
এদিকে ২০২৪ সালের আগস্টে স্যাটেলাইটচিত্র বিশ্লেষণ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, মস্কো থেকে প্রায় ৪৭৫ কিলোমিটার উত্তরে একটি স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্রটির সম্ভাব্য উৎক্ষেপণ কেন্দ্র চিহ্নিত হয়েছে। বিশ্লেষক ডেকার ইভেলেথের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, সেখানে নয়টি অনুভূমিক উৎক্ষেপণ প্ল্যাটফর্ম নির্মাণাধীন রয়েছে।
