‘যদি জীবন থেকে পালিয়ে যেতে পারতাম’ লিখে পোস্ট, কয়েক ঘণ্টা পর মৃত্যু; ঈশ্বরকাঠির মানুষ শোক সইবে কীভাবে?
'ইচ্ছে তো অনেক আপাতত যদি জীবন থেকে পালিয়ে যেতে পারতাম'- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবুল কালাম আজাদের করা পোস্ট এটি। তবে এটাই যে তার শেষ পোস্ট হবে সেটা কে জানত।
রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বেয়ারিং প্যাড খুলে মাথায় পড়ে নিহত হন আবুল কালাম আজাদ। তার বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়ার ঈশ্বরকাঠি গ্রামে। তার মৃত্যুতে পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে ঈশ্বরকাঠির বাতাস। আবুল কালামের এই মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা। এ মৃত্যুর জন্য মেট্রোরেলের নির্মাণ ত্রুটিকে দায়ী করছেন তারা।
ছয় বোন আর চার ভাইয়ের মধ্যে আবুল কালাম ছিলেন সপ্তম। কিশোর বয়সেই মা-বাবা হারিয়েছেন। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন নারায়ণগঞ্জের পাঠানতলিতে। চাকরি করতেন বেসরকারি একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে। প্রতিদিনের মতো আজও কাজের তাগিদেই গিয়েছিলেন ঢাকায়। এরপর সেখান থেকে বাড়ি ফিরেছেন প্রাণহীন দেহে।
স্বজনদের অভিযোগ- মেট্রোরেলের নির্মাণ ত্রুটিই আবুল কালামের মৃত্যুর জন্য দায়ী।
সরেজমিনে আবুল কালামের বাড়িতে দেখা যায়, ভাইকে হারিয়ে আর্তনাদ করছেন বোনেরা। শোক সইতে না পেরে কিছুক্ষণ পর পর মুর্ছা যাচ্ছেন তারা।
আবুল কালামের এক চাচাতো ভাই জানান, আবুল কালাম ছিলেন তার আপন ভাইয়ের মতোই। সুখে-দুঃখে সবকিছু ভাগাভাগি করতেন তারা। আজ আবুল কালাম নেই, তিনি সেটা ভাবতেই পারছেন না। এ সময় তিনি আবুল কালামের পরিবারের দায়িত্ব নিতে রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান।
আবুল কালামের বন্ধু রিহিনুজ্জামান বলেন, কালাম ছিল আমার বাল্যবন্ধু। ও ঢাকায় পড়াশোনা করেছে। ওর সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। আজ বন্ধু হারানোর শোক সইতে পারছি না। ওর মতো এমন পরিণতি যেন কারো জীবনে না ঘটে।
আবুল কালামের বড় ভাই খোকন বলেন, ১০ ভাই বোনের সংসার। ছোটবেলায় বাবা-মা হারিয়ে কালাম আমাদের কাছেই মানুষ হয়েছে। ওকে সন্তানের মতো লালন-পালন করেছি। এখন ছোট ভাইয়ের লাশের অপেক্ষায়। এই কষ্ট বহন করতে পারছি না।
তিনি আরো জানান, আগামীকাল সোমবার সকাল ৯টায় পূর্ব পোড়াগাছা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে নড়িয়া জামে মসজিদ কেন্দ্রীয় কবরস্থানে আবুল কালামকে দাফন করা হবে।
