রাশিয়ার তেল রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা, বিশ্ববাজারে বাড়ল দাম
তেল রপ্তানিকারক রাশিয়ার বৃহত্তম দুই জ্বালানি কোম্পানি—রসনেফট ও লুকঅয়েল—এর ওপর যুক্তরাষ্ট্র নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে এক ডলারেরও বেশি বেড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে, আজ বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) টানা দ্বিতীয় দিনের মতো এই উত্থান এসেছে তেল বাজারে।
লন্ডনভিত্তিক ব্রেন্ট ক্রুডের ডিসেম্বর মাসের আগাম সূচক বা ফিউচার্স প্রতি ব্যারেল ১.৭৬ ডলার বা ২.৮১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৪.৩৫ ডলারে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট সূচকের অধীনে ক্রুড বা অপরিশোধিত তেলের দাম ১.৬৮ ডলার বা ২.৮৭ শতাংশ বেড়ে হয় ৬০.১৮ ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থান
নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর ওয়াশিংটন জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে চাপ দিতে প্রয়োজনে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যদিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি; তখন তিনি রাশিয়ার বাণিজ্যকে কোণঠাসা করে মস্কোকে চাপে রাখার কৌশলে প্রাধান্য দিচ্ছিলেন। তবে এবার প্রথমবারের মতো তিনি রাশিয়ার জ্বালানি খাতকে লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ নিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এক বিবৃতিতে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন। এতে তিনি বলেন, "প্রেসিডেন্ট পুতিনের যুদ্ধ থামাতে অস্বীকৃতির কারণে মার্কিন অর্থবিভাগ রাশিয়ার দুটি বৃহত্তম তেল কোম্পানিকে নিষিদ্ধ করছে, এসব প্রতিষ্ঠান ক্রেমলিনের যুদ্ধযন্ত্রকে অর্থের জোগান দেয়।"
পশ্চিমা জোটের যৌথ চাপ
ব্রিটেন এক সপ্তাহ আগেই রসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোও সম্প্রতি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৯তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ অনুমোদন করেছে, যাতে রাশিয়ান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে।
"নিষেধাজ্ঞার খবর তেলের দামে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে," বলেন আইজির বাজার বিশ্লেষক টনি সাইকামোর। "তবে এ পর্যন্ত উত্থানটা তুলনামূলক সীমিত, কারণ (রাশিয়ার বিরুদ্ধে) আগের নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক হুমকি প্রায়ই বাস্তবায়নে বিলম্বিত হয়েছে বা আংশিকভাবে প্রয়োগ হয়েছে, তাছাড়া এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা কঠিন।"
নিষেধাজ্ঞার পর বাজারে প্রতিক্রিয়া
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পরপরই ব্রেন্ট ও ডব্লিউটিআই ফিউচার্স সূচক এক ধাপে প্রতি ব্যারেলে দুই ডলারেরও বেশি বেড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানির চাহিদা বাড়ার খবরও বাজারে অতিরিক্ত উৎসাহ যোগায়।
রাশিয়ার তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের অন্যতম ক্রেতা এশিয়ার উন্নত অর্থনীতি জাপান। গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন রাশিয়ার থেকে জ্বালানি কেনা বন্ধের আহ্বান জানায় টোকিওকে। এই আহ্বান এসেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আসন্ন এশিয়া সফরের আগে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে রাশিয়ান জ্বালানি নির্ভরতা কমাতে নতুন করে কূটনৈতিক চাপ বাড়াচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর এই সমন্বিত নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানির আয়ে সরাসরি আঘাত হানতে পারে, যা মস্কোর যুদ্ধ অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার মূল উৎস। তবে বাজার আপাতত সতর্ক অবস্থায় আছে, কারণ অতীত অভিজ্ঞতা বলছে—বাজারে তেল নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে সময় লাগে।
