ইংরেজি বইয়ে সেমিকোলনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে কমছে, বলছে গবেষণা

লেখক কার্ট ভনেগাট লিখেছিলেন, 'সেমিকোলন ব্যবহার কোরো না।' তার প্রতি উপন্যাসে সেমিকোলনের গড় ব্যবহার ছিল ৩০টিরও কম, প্রায় প্রতি ১০ পৃষ্ঠায় একটি করে।
তার মতে, 'সেমিকোলন ব্যবহার মানে তুমি কলেজে পড়েছ এইটা বোঝানো।'
যুক্তরাজ্যের লেখকেরা হয়তো এই পরামর্শ মনেপ্রাণেই গ্রহণ করে ফেলেছেন, কেননা নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সেমিকোলনের ব্যবহার যেন একপ্রকার বিলুপ্তির পথে। গত দুই দশকে ইংরেজি বইয়ে এর ব্যবহার প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে, ২০০০ সালে যেখানে প্রতি ২০৫টি শব্দে একটি সেমিকোলন দেখা যেত, এখন তা নেমে এসেছে প্রতি ৩৯০ শব্দে একটি।
'দ্য পারফেক্ট ইংলিশ গ্রামার ওয়ার্কবুক'- এর লেখক লিসা ম্যাকলেনডন এর গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রিটিশ শিক্ষার্থীদের ৬৭ শতাংশ সেমিকোলন ব্যবহার করে না বা খুব কম করে! শুধু ১১ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজেদের 'নিয়মিত ব্যবহারকারী' বলে দাবি করেছে।
বিদেশি ভাষা শেখার সফটওয়্যার 'বাবেল' প্রথম এই বিষয়ের উপর করা গবেষণাটিকে অর্থায়ন করে। এরপর এই অবিশ্বাস্য ফলাফল দেখে সঙ্গে সঙ্গে লিসা ম্যাকলেনডনকে দায়িত্ব দেওয়া হয় লন্ডনের ৫ লাখ শিক্ষার্থীর নেটওয়ার্ককে সেমিকোলন নিয়ে ১০টি বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উপর পরীক্ষা দিতে। ফলাফল এক কথায় বললে বিপর্যয়। অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকেরও বেশি জানতেন না, বা বুঝতেন না, বাক্যে সেমিকোলন কীভাবে ব্যবহার করতে হয়।
অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধানের সংজ্ঞা অনুযায়ী, সেমিকোলন হলো 'একটি বিরামচিহ্ন, যা সাধারণত দুইটি মূল বাক্যাংশের মাঝখানে ব্যবহৃত হয়, কমার চেয়ে বেশি স্পষ্ট বিরাম বোঝাতে এটি ব্যবহৃত হয়।'
এটা সাধারণত দুটি স্বাধীন অথচ সম্পর্কিত বাক্যাংশকে একসঙ্গে জুড়ে দিতে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে যখন দুটি ভাব পাশাপাশি রেখে তুলনা বা বৈপরীত্য় দেখাতে হয়, বা যখন তালিকায় অতিরিক্ত কমার ব্যবহার বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে—সেখানে সেমিকোলন কমার পরিবর্তে স্পষ্টতা আনে।
সেমিকোলনের ইতিহাস বেশ পুরনো। প্রথম এর দেখা মেলে ১৪৯৪ সালে, ইতালিয়ান পণ্ডিত ও ছাপাখানার মালিক অল্ডাস পায়াস মানুটিয়াস দ্য এল্ডারের লেখায়। কিন্তু দীর্ঘকালব্যপী থাকা সত্ত্বেও এই চিহ্নটি বরাবরই ব্যাকরণপ্রেমীদের কারও খুব প্রিয়, আবার কারও তীব্র অপছন্দ।
'ইটস,শ্যুটস অ্যান্ড লিভস'- এর লেখক লিন ট্রাস সেমিকোলনকে বলেছিলেন 'বিপজ্জনকভাবে আসক্তিকর'। তার ভাষ্যে, 'অনেক লেখক সেমিকোলনের নেশায় পড়ে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের কাছে লজ্জার কারণ হয়ে ওঠেন।'
আরএল স্টাইনের বিখ্যাত শিশু-হরর সিরিজ 'গুজবাম্পস' এর প্রতি দুই লক্ষ শব্দে মাত্র একটি সেমিকোলন! করম্যাক ম্যাকার্থির প্রথম বই 'দ্য অরচার্ড কিপার'-এ সেমিকোলন ছিল ৪২টি, কিন্তু পরের ৯টি উপন্যাসে মিলিয়ে একটিই মাত্র। আর ফিফটি শেডস ট্রিলজির লেখক ইএল জেমস তো সেমিকোলনের বদলে যেখানে-সেখানে ভুলভাবে কমা ব্যবহার করে ব্যাকরণবিদদের ব্যাপক সমালোচনা কুড়িয়েছেন।
তবে এই বিরামচিহ্নটির সমর্থকও কম নয়। যেমন- চার্লস ডিকেন্স, মার্ক টোয়েন, জেন অস্টেন এবং এমনকি আব্রাহাম লিংকনও ছিলেন সেমিকোলনের পক্ষের মানুষ। তিনি বলেন 'আমি সেমিকোলনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রাখি; এটা খুবই উপকারী ছোট্ট জিনিস।'
ভার্জিনিয়া উলফ তো সেমিকোলনের উপর এমন নির্ভরশীল ছিলেন যে 'মিসেস ডলওয়ে' উপন্যাসে তিনি এটিকে ব্যবহার করেছেন ১,০০০ বারেরও বেশি! সময়, স্মৃতি ও চেতনার প্রবাহ নিয়ে লেখা এই উপন্যাসের মূল চত্রিত্রের চিন্তার স্রোতকে ঠিকঠাকভাবে বোঝানোর জন্য উলফের মতে সেমিকোলনই ছিল সবচেয়ে উপযুক্ত নাবিক।
সালমান রুশদি, জন আপডাইক এবং ডোনা টার্ট-এর লেখায় প্রতি ১ লক্ষ শব্দে গড়ে ৩০০টি সেমিকোলন রয়েছে—যা তাদের সাহিত্যিক উচ্চতায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।
মার্ক টোয়েনের ভাষায় বললে, 'এই উপকারী ছোট্ট বন্ধুর' মৃত্যুর খবর সম্ভবত খানিকটা বাড়াবাড়ি।
সাহিত্যিকদের এই সুনিপুণ বিরামচিহ্নে যে এখনও আস্থা রয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে গুগল বুকস এনগ্রাম ভিউয়ার-এর তথ্যেও।
১৮০০ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে ইংরেজি সাহিত্যে সেমিকোলনের ব্যবহার বেড়েছিল রীতিমতো ৩৮৮%। যদিও এরপরের এক দশকে সেটি ৪৫% কমে যায়, ২০১৭ সালে আবার দেখা যায় ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত। ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্যবহারে বেড়েছে প্রায় ২৭%।
তাই হয়তো সেমিকোলনের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত নয়। শেষ পর্যন্ত সেমিকোলনের অস্তিত্বের লড়াইয়ে কার্ট ভনেগাট নন, বরং জয়ী হবেন ফরাসি বিপ্লবের সাংবাদিক ক্যামিল দেসমুলাঁ, যাকে হিলারি ম্যানটেল তার উপন্যাস 'আ প্যালেস অব গ্রেটার সেফটি'-তে জীবন্ত করে তুলে ধরেছেন।
ম্যান্টেলের বইয়ে দেসমুলাঁ বলেছেন, 'আমি বুঝি না কেন আগে কখনও যৌনতাকে এত গুরুত্ব দিয়েছিলাম। এই পৃথিবীতে নিঃশ্বাস নেওয়া অবস্থায় সঠিকভাবে বসানো একটি সেমিকোলনের মতো তৃপ্তিদায়ক কিছু নেই।'
অনুবাদ: নাফিসা ইসলাম মেঘা