ইউক্রেন শান্তি আলোচনা নিয়ে নতুন ইঙ্গিত ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপে

গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি '২৪ ঘণ্টার মধ্যেই' ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন। খবর বিবিসি'র।
গত সপ্তাহে তিনি বলেন, এই সংঘাতের সমাধান সম্ভব নয়, যতক্ষণ না তিনি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একসঙ্গে বসে বিষয়টি আলোচনা করেন।
সোমবার আবারও পাল্টে গেল দৃশ্যপট।
পুতিনের সঙ্গে দুই ঘণ্টার ফোনালাপের পর ট্রাম্প বলেন, শান্তিচুক্তির শর্তাবলি কেবল রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হতে পারে—তবে সম্ভবত পোপের সহায়তাও থাকতে পারে।
তবু যুদ্ধ বন্ধের আশা হারাননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, দুই পক্ষই 'অবিলম্বে' যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনায় বসবে।
তবে রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে এই বক্তব্যর কিছুটা অমিল রয়েছে। পুতিন কেবল বলেছেন, তার দেশ ইউক্রেনের সঙ্গে মিলে একটি 'সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ শান্তিচুক্তি নিয়ে স্মারকলিপি তৈরি' করতে প্রস্তুত।
'স্মারকলিপি' বা 'সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ শান্তির' মতো শব্দচয়ন দীর্ঘস্থায়ী চুক্তির জন্য খুব একটা দৃঢ় ভিত্তি বলে মনে হয় না।
পুতিন আবারও জোর দিয়ে বলেন, যুদ্ধের সমাধান তখনই সম্ভব, যদি এর 'মূল কারণগুলো' চিহ্নিত ও সমাধান করা যায়। অতীতে রাশিয়া দাবি করে এসেছে, ইউক্রেনের ইউরোপমুখী আগ্রহই এই সংঘাতের মূল কারণ।
ফোনালাপের পর ট্রুথ সোশ্যাল-এ ট্রাম্প লেখেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন 'অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা শুরু করবে' এবং যোগ করেন—'চুক্তির শর্ত দুই দেশই পারস্পরিক আলোচনর মাধ্যমে নির্ধারণ করবে।'
তবে ট্রাম্পের যুদ্ধ সংক্রান্ত সর্বশেষ অবস্থান হয়ত এমন ইঙ্গিতই দেয়, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র শান্তি আলোচনার টেবিল থেকে উঠে যেতে পারে।
তবে সোমবার ট্রাম্প বলেন, তিনি দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টায় পিছু হটবেন না। যদিও তিনি স্বীকার করেন, তার 'সহ্যের একটি সীমা' আছে।
'বড় বড় ইগো (অহংকার) এখানে জড়িত, কিন্তু আমার বিশ্বাস কিছু একটা ঘটবে', বলেন তিনি। 'আর যদি না ঘটে, তাহলে আমি পিছিয়ে আসব, আর তারা নিজেরা চালিয়ে যাবে।'
তবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে রয়েছে একাধিক প্রশ্ন এবং ঝুঁকি।
যদি যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে এই যুদ্ধ থেকে সরিয়ে নেয়; যেমনটা ভাইস-রাষ্ট্রপতি জেডি ভ্যান্স এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও হুমকি দিয়ে বলেছেন, তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দেবে?
আর যদি তাই হয়, তবে তা হতে পারে এমন এক পরিস্থিতি, যা রাশিয়া স্বাগত জানাবে—কারণ আমেরিকার সহায়তা ছাড়া ইউক্রেনের চেয়ে রাশিয়ার সম্পদ ও সক্ষমতা অনেক বেশি।
এই সম্ভাবনাই ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
'যুক্তরাষ্ট্র যেন আলোচনার টেবিল ও শান্তি প্রচেষ্টা থেকে সরে না যায়, এটা আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ', সোমবার ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের পর বলেন জেলেনস্কি।
তিন বছর ধরে চলা এই সংঘাতের সমাধান নিয়ে ট্রাম্প পুতিন ও জেলেনস্কি—দুজনের প্রতিই হতাশা প্রকাশ করেছেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে এক উত্তপ্ত বৈঠকে ট্রাম্প ইউক্রেনীয় নেতাকে 'তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলার' জন্য অভিযুক্ত করেন। এপ্রিলেও তিনি বলেন, পুতিনের প্রতি তিনি 'খুব ক্ষুব্ধ' এবং 'চরম বিরক্ত', কারণ আলোচনা অগ্রসর হচ্ছে না।
সোমবারের আলোচনাকে আলাদা স্থানে রাখলেও, এটুকু স্পষ্ট—রাশিয়া ও ইউক্রেন কোনো না কোনো পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায়। প্রায় তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে এটিও এক ধরনের অগ্রগতি। তবে এখনো স্পষ্ট নয়, গত শুক্রবার ইস্তাম্বুলে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া রাশিয়ার নিম্নপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের চেয়ে উচ্চপর্যায়ের কেউ ভবিষ্যতে আলোচনায় অংশ নেবেন কি না।
শান্তিচুক্তির পথে পুতিনকে প্রলুব্ধ করতে ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, নতুন বাণিজ্য চুক্তি ও অর্থনৈতিক বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। ফোনালাপ-পরবর্তী প্রতিক্রিয়াতেও তিনি সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে নেতিবাচক পদক্ষেপ নিয়ে—যেমন রাশিয়ার ব্যাংকিং ও জ্বালানি খাতের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
গত মাসে ট্রাম্প সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, পুতিন যেন তাকে 'না ঘোরায়' এবং বেসামরিক এলাকায় হামলা না চালায়। অথচ গতকাল রাশিয়া ইউক্রেনের শহরগুলোতে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট, সোমবার দুই বিশ্বনেতার আলাপ সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি বা শান্তিচুক্তি এখনো বহুদূরের পথ।