ভারতই যুদ্ধবিরতি চেয়েছে, পাকিস্তান নয়: দাবি পাক আইএসপিআরের

রোববার পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি আইএসপিআর) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেছেন, পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ বা ভূখণ্ডে আঘাত এলে পূর্ণমাত্রায়, কঠোর এবং চূড়ান্ত জবাব দেওয়া হবে।
পাকিস্তান বিমানবাহিনীর এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদ ও নৌবাহিনীর ডেপুটি চিফ অভ নেভাল স্টাফ (অপারেশনস) ভাইস অ্যাডমিরাল রাজা রাব নওয়াজকে সঙ্গে নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা সামরিক অভিযান বুনিয়ান-উম-মারসুস সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর জন্য এ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়েছিল।
সেখানে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পাকিস্তান কখনও যুদ্ধবিরতির জন্য অনুরোধ করেনি। '৬ ও ৭ মে রাতে কাপুরুষোচিত ও নিষ্ঠুর হামলা চালানোর পর ভারত যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করে। পাকিস্তান পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, আমরা জবাব দেওয়ার পরই কথা বলব।'
ডিজি আইএসপিআর দাবি করেন, '১০ মে পাল্টা জবাব ও প্রতিশোধের পর আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের অনুরোধে পাকিস্তান ভারতীয় অনুরোধে সাড়া দেয়।'
'আপনি যদি ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর প্রকাশ্য বিবৃতি দেখেন, সেখানে স্পষ্টভাবেই উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান ছিল,' বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এই অভিযানে এমন ২৬টি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়, যেগুলোর মাধ্যমে পাকিস্তানের নাগরিকদের লক্ষ্য করা হয়েছিল।
ডিজি আইএসপিআর বলেন, পাক বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ছিল সুরতগড়, সিরসা, আদমপুর, ভূজ, নালিয়া, ভাথিন্ডা, বারনালা, হরওয়াড়া, আভান্তিপুরা, শ্রীনগর, জম্মু, মামুন, আম্বালা, উদমপুর ও পাঠানকোটের মতো বিমানঘাঁটি ও বিমান চলাচল কেন্দ্র।
ভারতের ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র মজুতাগারও ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও দাবি করেন, পাক বিমানবাহিনী আধানপুর ও ভূজে থাকা ভারতের এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং উরি-র ফিল্ড সাপ্লাই ডিপো ও পুঞ্চের রাডার স্টেশনেও হামলা চালিয়েছে। কেজি টপ ও নওশেরার ১০ম ও ৮০তম ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার ধ্বংস করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
ডিজি আইএসপিআর আরও বলেন, পাক সশস্ত্র বাহিনী শক্তিশালী ও কার্যকর সাইবার হামলাও চালিয়েছে, যার মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও সেবাগুলোকে সাময়িকভাবে বিপর্যস্ত করে দেওয়া হয়।
বেলুচিস্তানে ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় 'সন্ত্রাসী' কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, পাকিস্তান কেবল সামরিক লক্ষ্যবস্তুতেই আঘাত হেনেছে। 'ভারতের পক্ষ থেকেই কি কোনো বিবৃতিতে প্রমাণ মিলেছে যে পাকিস্তান সামরিক লক্ষ্যবস্তুর বাইরে অন্য কিছুতে আঘাত করেছে? না, একটিও না।'
পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত নিখুঁতভাবে কাজ করেছে দাবি করে ডিজি আইএসপিআর বলেন, ভারতের পাঠানো ৮৪টি ড্রোন গুলি করে ধ্বংস করেছে পাক বাহিনী।
পারমাণবিক শক্তিধর দুই রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে যুদ্ধ—এটা একধরনের অযৌক্তিক, বোধের অগম্য কাজ এবং নিছক বোকামি।'
তিনি আরও বলেন, 'ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এমন যুদ্ধ ১৬০ কোটিরও বেশি মানুষের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। বাস্তবতা হলো, এই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের কোনো স্থান নেই। কেউ যদি সেই পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করে, সে আসলে পারস্পরিক ধ্বংসের পরিস্থিতি তৈরি করছে।'
এদিকে পাকিস্তানের হাতে ভারতীয় পাইলট আটক হওয়ার যে খবর ছড়িয়েছে, সেটি গুজব বলে উল্লেখ করেছেন পাক ডিজি আইএসপিআর। এই গুজব সোশ্যাল মিডিয়ায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়ানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'এটি বহু উৎস থেকে চালানো মিথ্যা তথ্য এবং প্রোপাগান্ডার অংশ।'