পুতিন যুদ্ধবিরতিতে রাজি নাহলে রাশিয়ার ওপর আসতে পারে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা

ইউরোপীয় নেতারা যখন সোমবার থেকে ইউক্রেন যুদ্ধে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছেন এবং দাবি করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই চূড়ান্ত আহ্বানকে সমর্থন করছেন, তখন রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা আবার সামনে চলে এসেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শনিবার সতর্ক করে দেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলে তাঁর দেশের ওপর জ্বালানি ও আর্থিক খাতে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি হবে। তবে ক্রেমলিন এই হুমকিকে উড়িয়ে দিয়েছে। ট্রাম্পের রাশিয়াবিরোধী কৌশলে সাম্প্রতিক কঠোরতা এই হুমকির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার ওপর হাজার হাজার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বারবারই ট্রাম্প রাশিয়ার তেল রপ্তানিকে লক্ষ্য করার ইঙ্গিত দিয়ে এসেছেন। বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদকদের মধ্যে রাশিয়া অন্যতম।
কী আসতে পারে সামনে?
ব্লুমবার্গের ২ মে'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে ট্রাম্পের হাতে বিকল্প পরিকল্পনা প্রস্তুত রেখেছে মার্কিন প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার এক সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্প জানান, "যদি যুদ্ধবিরতি মানা না হয়," তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের পক্ষ থেকে আরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার গোপন তেলবাহী জাহাজ বহরের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা বিবেচনা করছে। প্রস্তাবিত তালিকায় রয়েছে প্রায় ১৫০টি অতিরিক্ত জাহাজ। ব্লুমবার্গের দেখা খসড়া অনুযায়ী, এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দুবাইভিত্তিক লিতাসকো মিডল ইস্ট ডিএমসিসি, যা রাশিয়ার তেল জায়ান্ট লুকওয়েল পিজেএসসির একটি বাণিজ্যিক শাখা।
মার্কিন সিনেটর এবং ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র লিন্ডসে গ্রাহাম জানিয়েছেন, তাঁর প্রস্তাবিত কঠোর নিষেধাজ্ঞার বিলটি দুই দলেরই ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছে। খসড়া অনুযায়ী, প্রস্তাবে রয়েছে— রাশিয়ার জ্বালানি পণ্য কেনা দেশগুলোর আমদানির ওপর ৫০০ শতাংশ শুল্ক এবং মার্কিন নাগরিকদের রুশ সার্বভৌম ঋণ কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা। গ্রাহাম এই বিলকে ট্রাম্পের "টুলবক্সের একটি অস্ত্র" বলে অভিহিত করেন, যদি তিনি মনে করেন যে পরিস্থিতি অচলাবস্থায় পৌঁছেছে।
এর আগে ২৬ এপ্রিল ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন যে, পুতিন হয়তো তাঁকে ঘোরাতে চাইছেন এবং তাই ব্যাংকিং খাত কিংবা তথাকথিত "সেকেন্ডারি স্যাংশন"— অর্থাৎ রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করা দেশগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা—আরোপ প্রয়োজন হতে পারে।
মার্চের শেষ দিকে, জেলেনস্কির নেতৃত্ব নিয়ে পুতিন সন্দেহ প্রকাশ করলে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দেন, রাশিয়ার তেল ক্রেতাদের ওপর সেকেন্ডারি ট্যারিফ আরোপ করা হতে পারে। তবে পরে তিনি এই অবস্থান কিছুটা শিথিল করেন।
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে যে, কূটনৈতিক সমঝোতার অংশ হিসেবে কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা যেতে পারে, যাতে রাশিয়ার পশ্চিমা বিশ্ব থেকে একঘরে অবস্থা কিছুটা হ্রাস পায়। মস্কোর দাবি—রাশিয়ান অ্যাগ্রিকালচারাল ব্যাংককে আবার 'সুইফট' অর্থপ্রদান ব্যবস্থায় যুক্ত করা হোক—তবে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আওতাধীন এবং এ বিষয়ে কোনো নমনীয়তার ইঙ্গিত দেয়নি ইউরোপ।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প বারবার বলেছেন, "যদি উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র একটি স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে; আর না হলে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আবারও টেবিলে থাকবে।"