ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কায় ভারতীয় রুপি, শেয়ার ও বন্ডের দরপতন

গতকাল বৃহস্পতিবারেই ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের কারণে রূপি, শেয়ারবাজার ও বন্ডের দরপতন হয়েছে।
রুপির মূল্য ১ শতাংশ কমে ৮৫.৭১-এ নেমে এসেছে। ভারতের প্রধান শেয়ার সূচক নিফটি ৫০ বেঞ্চমার্ক শেয়ার ইনডেক্স (এনএসইআই) ০.৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আর মূল্য কমে যাওয়ায় ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডের সংখ্যাও ৬ পয়েন্ট পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
পাকিস্তান-ভারতের সাম্প্রতিক পাল্টাপাল্টি হামলার প্রভাব এসে পড়েছে শেয়ার বাজারের ওপর।
ভারত সরকার জানায়, গতকাল পর্যন্ত পাকিস্তানের একাধিক সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার চেষ্টা 'নিষ্ক্রিয়' করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তান জানায়, তারা তাদের আকাশসীমায় ভারতীয় ২৫টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
ভারতীয় কোম্পানি ট্রাস্ট মিউচুয়াল ফান্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দীপ বাগলা বলেন, "সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারেও এ প্রভাব দেখা দেবে, বিষয়টি প্রত্যাশিতই ছিল।"
গত বুধবার ভারত জানায়, তারা পাকিস্তানে 'সন্ত্রাসী অবকাঠামো'তে হামলা চালিয়েছে। এর দুই সপ্তাহ আগে ভারত অভিযোগ করেছিল, কাশ্মীরে পেহেলগাম হামলায় পাকিস্তান জড়িত। এর পরিপ্রেক্ষিতেই তারা এ হামলা চালিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন—এই দক্ষিণ এশীয় দুই দেশকে সংযত হতে আহ্বান জানিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের রুপি ও শেয়ারবাজারের অস্থিরতা পরিমাক সূচকগুলো বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতি বাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
লেনদেন চলাকালে নিফটি ভোলাটিলিটি সূচক (এনআইএফভিআইএক্স) বেড়ে ২১.৯-এ পৌঁছায়, যা ৯ এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ। একই সময়ে রুপির ভোলাটিলিটিও দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে।
ভারতের ওভারনাইট ইনডেক্স সোয়াপের (ওআইএস) হারও বেড়ে গেছে। সেখানে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া পাঁচ বছরের হার ১২ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ৫.৬৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
ড্রোন হামলার খবরে পাকিস্তানে বেঞ্চমার্ক শেয়ার সূচকেরও ৬.৩ শতাংশ দরপতন হয়েছে। তাই আতঙ্কিত হয়ে শেয়ারের বিক্রি ঠেকাতে লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে দেশের আন্তর্জাতিক বন্ডগুলোর দামও সাম্প্রতিক ক্ষতির ধারা বজায় রেখেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সীমান্তবর্তী সাম্প্রতিক এ অস্থিরতা বাজারের ওপর প্রভাব ফেলবেই। তাই এ সময়টায় বিনিয়োগকারীরা স্বল্প মেয়াদি বিনিয়োগের ঝুঁকি থেকে বিরতই থাকবেন।
জেফরিস (একটি আর্থিক কোম্পানি) এক বিবৃতিতে বলে, "যদি সংঘর্ষ আরও বেড়ে যায়, তবে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও অবকাঠামোগত সুবিধাগুলোর জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে।"
তবে তারা বিশ্বাস করে, সংঘাতের কারণে যদি বাজারের পতনও হয়, পূর্ববর্তী উদাহরণগুলোর মতো এটি দ্রুত পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, যুক্তরাজ্য-ভারত বাণিজ্য চুক্তির পর মার্কিন-ভারত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা এবং মৌলিক বিষয়ে আবারও মনোযোগ দেওয়া হবে।
তবে মূল্য কমে যাওয়ায় বন্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিনিয়োগকারীরা সরকারি বন্ড বিক্রি করে দিচ্ছেন। এসব কারণে মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার মতো উদ্বেগ তৈরি করছে।