ভারতের রাফাল ভূপাতিত করেছে চীনের তৈরি জে-১০সি, দাবি পাকিস্তানের

ভারতের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করতে চীনের তৈরি জে-১০সি যুদ্ধবিমান ব্যবহারের দাবি করেছে পাকিস্তান। বুধবার কাশ্মীর ও সীমান্তবর্তী অন্যান্য বিতর্কিত এলাকায় স্বল্প সময়ের এক সামরিক সংঘর্ষে পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও দেশটির সেনাবাহিনী।
ভারতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশহাক দার সংসদে বলেন, গুলি করে নামানো পাঁচটি যুদ্ধবিমানের মধ্যে তিনটি ছিল ফ্রান্সের তৈরি রাফাল। আর এগুলো গুলি করেছে পাকিস্তানের জে-১০সি বিমান।
তিনি বলেন, 'আমাদের জেট ফাইটার… ভারতীয় রাফাল গুলি করে ভূপাতিত করেছে। তিনটি রাফাল ছিল। আমাদের দিক থেকে ছিল জে-১০সি, যা চীনের সহযোগিতায় তৈরি।'
পাকিস্তানের দাবি সত্যি হলে এটি হবে জে-১০সি যুদ্ধবিমানের ইতিহাসে প্রথম এয়ার-টু-এয়ার সফলতা এবং যুদ্ধক্ষেত্রে প্রথম রাফাল ভূপাতিত হওয়ার ঘটনা।
সিএনএন এক ফরাসি গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ভারতীয় বাহিনীর একটি রাফাল যুদ্ধবিমান পাকিস্তান ভূপাতিত করেছে। আরও বিমান ভূপাতিত হয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, ভারতের পাঞ্জাবে বুধবার যে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে, তা চীনা উৎপাদিত পিএল-১৫ই ক্ষেপণাস্ত্রের বলে দাবি করেছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
এটি ইঙ্গিত দিতে পারে, জে-১০সি বা জেএফ-১৭সি ব্লক ৩ বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিক্ষেপ করা হয়েছে—এই দুই মডেলই পিএল-১৫ই মিসাইল ব্যবহারে সক্ষম এবং বর্তমানে ওই অঞ্চলে সক্রিয়।
পিএল-১৫ই হচ্ছে পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রের রপ্তানি সংস্করণ। মূল সংস্করণটি দ্বৈত-পালস শক্তিচালিত, মাক ৫ (শব্দের গতি) গতিবেগে উড়তে পারে এবং এতে সক্রিয় ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যানড অ্যারে রাডার গাইডেন্স ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে রপ্তানি সংস্করণটির পাল্লা কমিয়ে আনা হয়েছে ১৪৫ কিলোমিটারে।
চেংডু এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ নির্মিত জে-১০ একটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট মাল্টিরোল ফাইটার জেট। ২০০৩ সালে এটি চীনা বিমানবাহিনীতে যুক্ত হয়। এর উন্নত সংস্করণ জে-১০সি-তে উন্নত ইঞ্জিন ও রাডার প্রযুক্তি রয়েছে এবং এটি চতুর্থ ও পঞ্চম প্রজন্মের (৪.৫ প্রজন্ম) মাঝামাঝি ধরনের যুদ্ধবিমান হিসেবে বিবেচিত।
চীনের বাইরে পাকিস্তানই একমাত্র দেশ, যার বিমানবাহিনী জে-১০সি ব্যবহার করে। ২০২০ সালে পাকিস্তান ৩৬টি জে-১০সিই এবং ২৫০টি পিএল-১৫ই ক্ষেপণাস্ত্র অর্ডার দেয়। ২০২২ সালে ছয়টি বিমান পাকিস্তানে পৌঁছায় এবং বর্তমানে ২০টি জে-১০সি পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে সক্রিয় রয়েছে।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ইরানে বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ওপর হামলায় সীমান্ত পেরিয়ে জে-১০সি প্রথমবারের মতো সরাসরি লড়াইয়ে অংশ নেয়, তবে তখন বিমানযুদ্ধে অংশ নেয়নি।
চীনের এই যুদ্ধবিমান নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মিশরও। সম্প্রতি শেষ হওয়া দ্বিপাক্ষিক সামরিক মহড়ায় এক মিশরীয় সামরিক কর্মকর্তাকে জে-১০সি বিমানে বসে থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে, সোভিয়েত আমলের যুদ্ধবিমান সরিয়ে নতুন মডেল কেনার পরিকল্পনায় রয়েছে উজবেকিস্তান। দেশটি রাফাল এবং জে-১০সি'র মধ্যে তুলনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছে।
পাকিস্তান পার্লামেন্টে নিজের বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশহাক দার আরও জানান, বুধবার ভোর ৪টায় চীনা রাষ্ট্রদূত এবং তার প্রতিনিধি দল তার কার্যালয়ে যান এবং সামরিক অভিযানের যাবতীয় তথ্য তারা একে অপরের মধ্যে আদান-প্রদান করেন।
তিনি বলেন, 'একটি বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে তারা এ ঘটনা জেনে অত্যন্ত আনন্দ প্রকাশ করেছেন।'