গাজায় যুদ্ধ বিস্তারে হাজারো রিজার্ভ সেনা ডাকার সিদ্ধান্ত নিল ইসরায়েল

গাজা উপত্যকায় হামলা আরও জোরদার করতে হাজারো রিজার্ভ সেনাকে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। রোববার (৪ এপ্রিল) ইসরায়েলি সেনাপ্রধান আইয়াল জামির এ ঘোষণা দেন।
এর আগেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, দেশের ভেতরে যুদ্ধবিরতির পক্ষে চাপ বাড়লেও তিনি হামলা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি নাগরিকদের অনেকে গাজায় আটক ইসরায়েলিদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর দাবি জানালেও, নেতানিয়াহু তা উপেক্ষা করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার (৪ মে) উত্তর উপকূলের আটলিট নৌঘাঁটি সফরকালে ইসরায়েলি সেনাপ্রধান আইয়াল জামির বলেন, 'আমাদের যেসব নাগরিক গাজায় বন্দি রয়েছেন, তাদের ফেরাতে এবং হামাসকে পরাজিত করতে আমরা চাপ আরও বাড়াচ্ছি। সেনাবাহিনী অতিরিক্ত এলাকাতেও অভিযান চালাবে এবং হামাসের মাটির ওপরে ও নিচে থাকা সব অবকাঠামো ধ্বংস করে দেবে।'
এই ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই গাজায় যুদ্ধ আরও বিস্তারের বিষয়ে আলোচনায় বসে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ ইতোমধ্যে গাজা উপত্যকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ইসরায়েলে আন্দোলন জোরাল হচ্ছে। ক্রমেই এমন রিজার্ভ সেনাদের সংখ্যা বাড়ছে, যারা সেনাবাহিনীর ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না।
এমন প্রেক্ষাপটে গাজায় সহায়তা পাঠানো ফের শুরু করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা করবে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা—রয়টার্সকে এমনটি জানিয়েছেন দেশটির দুজন সরকারি কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল পূর্ণ অবরোধ আরোপ করার পর গাজায় খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের হুমকি আরও বেড়েছে বলে সতর্ক করেছে মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলো।
গাজায় চলমান যুদ্ধে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার পতন এবং ২৩ লাখেরও বেশি মানুষের মধ্যে প্রায় সবাই অন্তত একবার গৃহহীন হওয়ায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার মুখে রয়েছে ইসরায়েল।
এমন পরিস্থিতিতেও যুদ্ধ আরও তীব্র করার আহ্বান জানিয়েছেন কট্টর ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির। ইসরায়েলি আর্মি রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'আমরা যুদ্ধের মাত্রা আরও বাড়াতে চাই। আমাদের পূর্ণ বিজয় অর্জন করতেই হবে।'
তিনি গাজার খাদ্য ও বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রগুলোতে বোমা হামলার দাবি তোলেন।
গাজায় চলমান অবরোধ ও বোমাবর্ষণের মধ্যে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো। রেডক্রসসহ শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রতিদিনই বেঁচে থাকার জন্য লড়তে হচ্ছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ত্রাণবাহী ট্রাক সীমান্তে জট বেঁধে রয়েছে এবং সেগুলো গাজার ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে না। খাদ্যঘাটতির ফলে অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে।
এদিকে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা দাবি করছেন, গাজায় সেনা অভিযান আরও বিস্তৃত হলে হামাসের হাতে থাকা ৫৯ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে তাদের ওপর চাপ তৈরি হবে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এতে বন্দিদের জীবন আরও ঝুঁকিতে পড়বে।
গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে ফিলিস্তিনি বন্দি বিনিময়ের যে উদ্যোগ হয়েছিল, সেটি ভেঙে দেওয়ার পর নতুন করে আর কোনো বন্দিমুক্তি ঘটেনি।
রিজার্ভ সেনা ডাকার সিদ্ধান্ত এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে ছয়জন আহত হয়েছেন এবং একাধিক বড় এয়ারলাইন ফ্লাইট স্থগিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই হামলার জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'আমরাই ঠিক করব, কবে ও কোথায় জবাব দেওয়া হবে।'
হুথি বিদ্রোহীরা বলছে, 'গাজায় গণহত্যার' প্রতিবাদ এবং 'নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতেই' তারা এই হামলা চালিয়েছে।