গাজা পুরোপুরি ‘দখলের’ পরিকল্পনা অনুমোদন ইসরায়েল নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার

ফিলিস্তিনের গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের পরিসর আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা। সোমবার দেশটির একজন কর্মকর্তা জানান, পরিকল্পনার মধ্যে গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখল ও নিয়ন্ত্রণে আনার মতো বিষয় উঠে এসেছে । খবর বিবিসির।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, হামাসকে ধ্বংস করতে এবং অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে 'জোরালো অভিযান' চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা । তিনি আরও জানান, গাজার প্রায় ২১ লাখ জনসংখ্যাকে তাদের সুরক্ষা রক্ষার জন্য উপত্যকার দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়া হবে।
দুই মাসের যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর ১৮ মার্চ থেকে পুনরায় শুরু হওয়া গাজা অভিযান নিয়ে আলোচনা করতে গত রোববার সন্ধ্যায় ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আইয়াল জামিরের প্রস্তাবিত এই পরিকল্পনাটি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুসহ অন্যান্য মন্ত্রীরা সর্বসম্মতিক্রমে ভোট দিয়েছেন।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, প্রথম ধাপে গাজার অতিরিক্ত এলাকা দখল এবং সেসব অঞ্চলের সীমান্তে ইসরায়েল নির্ধারিত 'বাফার জোন' এর পরিসর বাড়ানো হবে।
এর আগে, গত রোববার ইসরায়েলি নৌঘাঁটি পরিদর্শনের সময় লেফটেন্যান্ট জেনারেল জামির বলেন, গাজায় ইসরায়েলের অভিযান আরও জোরদার ও সম্প্রসারণের জন্য কয়েক হাজার সংরক্ষিত সেনা তলব করা হয়েছে।
সোমবার জেরুজালেমে এক সম্মেলনে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেন, 'ইসরায়েল চূড়ান্তভাবে গাজা উপত্যকা দখল করতে যাচ্ছে'।
আগামী ১৩ থেকে ১৬ মে'র মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল সফরের কথা রয়েছে। এর আগে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে না বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের এক ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ।
ইসরায়েলকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, ইসরায়েলের সম্প্রসারিত সামরিক হামলা ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য আরও প্রাণহানি ও দুর্ভোগের কারণ হতে পারে।
বেসরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ত্রাণ সরবরাহের একটি পরিকল্পনাও অনুমোদন করা হয়েছে, যা মন্ত্রীসভার মতে, দুই মাসের অবরোধের ফলে গাজায় সৃষ্টি হওয়া মারাত্মক খাদ্য সংকটের অবসান ঘটাবে।
প্রস্তাবটিকে মৌলিক মানবিক নীতিমালার চরম লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য ত্রাণ সংস্থাগুলো বলেছে, পরিকল্পনাটিতে তারা কোনো সহযোগিতা করবে না।
গত ২ মার্চ গাজার ত্রাণ এবং মানবিক সহায়তার সমস্ত সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল সরকার। এতে সেখানে খাবার, পানি, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘের সতর্কতা অনুযায়ী, ইসরায়েলের অবরোধের সিদ্ধান্তের পরিণাম হিসেবে গাজার প্রায় ২৪ লাখ বাসিন্দা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
যদিও ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার দাবি, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলছে এবং গাজায় এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তার ঘাটতি দেখা যায়নি।
ইসরায়েলের প্রস্তাবটিকে 'রাজনৈতিক চাপ' হিসেবে উল্লেখ করে পরিকল্পনাটি পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। হামাসের কর্মকর্তা মাহমুদ মারদাওয়ি জানান, হামাস সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সৈন্যদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, গাজা উপত্যকার পুনর্গঠন এবং উভয় পক্ষের সকল বন্দীর মুক্তিসহ একটি পরিপূর্ণ চুক্তি চায়।
এছাড়া, গাজায় খাবারের মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হওয়ার মধ্যেই বেড়েছে ত্রাণ লুটপাটের ঘটনা । উপত্যকাটির বিভিন্ন খাবারের দোকান ও রান্নাঘরে হামলা চালিয়েছে সশস্ত্র কিছু দল। এ ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে হামাস, বলে জানিয়েছে সংগঠনটির একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র।
হামাসের কর্মকর্তাদের দাবি, এই লুটেরাদের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক রয়েছে। গাজায় হামাসের জনসংযোগ কার্যালয়ের পরিচালক ইসমাইল আল–তাওয়াবতা বলেন, কিছু লুটেরা এক নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সহায়তায় এবং অন্যরা বিভিন্ন সংঘবদ্ধ দল মিলে গাজায় অপরাধমূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে। এবং তাদের সরাসরি সহায়তা করছে ইসরায়েল সরকার।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। হামলার প্রতিক্রিয়ায় হামাসকে ধ্বংস করার অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৫২,৫৬৭ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে ২,৪৫৯ জন ।