জিম্মি চুক্তি ও গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভ

গাজা যুদ্ধ বন্ধ এবং হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। খবর বিবিসি'র।
রোববার (১৭ আগস্ট) সবচেয়ে বড় সমাবেশ হয় তেল আবিবের 'হোস্টেজ স্কোয়ার'-এ। সেখানে বিক্ষোভকারীরা সরকারের যুদ্ধ সম্প্রসারণ পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেন। তাদের আশঙ্কা, গাজা সিটি দখলের পদক্ষেপ হামাসের হাতে থাকা ২০ জন জিম্মির জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
বিক্ষোভের অংশ হিসেবে ইসরায়েলজুড়ে এক দিনের ধর্মঘট পালিত হয়। এতে রাস্তা, অফিস ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। এই বিক্ষোভ থেকে প্রায় ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বিক্ষোভের সমালোচনা করে বলেন, এটি 'হামাসের অবস্থানকে আরও কঠোর করবে' এবং জিম্মিদের মুক্তির প্রক্রিয়াকে ধীর করবে। ডানপন্থী মন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এই বিক্ষোভকে ক্ষতিকর প্রচারণা হিসেবে অভিহিত করে বলেন, 'এটি হামাসের উদ্দেশ্য পূরণে সহায়তা করবে।'
জিম্মিদের পরিবার এবং যুদ্ধবিরোধী মানুষ ধর্মঘটের আহ্বান জানিয়েছেন। জিম্মি মাতানের মা আইনভ জাঙ্গাউকার, যিনি 'হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম'-এর প্রধান, সমাবেশে বলেন, 'আমরা একটি সুদূরপ্রসারী ও কার্যকর চুক্তি চাই এবং যুদ্ধের সমাপ্তি চাই।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা আমাদের অধিকার চাই—আমাদের সন্তানদের ফেরত চাই। ইসরায়েলি সরকার একটি ন্যায়যুদ্ধকে উদ্দেশ্যহীন যুদ্ধে পরিণত করেছে।'
ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা অনুমোদন করার এক সপ্তাহের মধ্যেই দেশটিতে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
হামাস পরিচালিত গাজা সিটি পৌরসভা বিবিসিকে জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণের জেইতুন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে গেছে। কয়েক দিনের ইসরায়েলি হামলার কারণে পরিস্থিতি সেখানে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
ইসরায়েলের সামরিক সংস্থা কোগাত জানিয়েছে, 'যুদ্ধজ¦্বলিত এলাকায় থাকা মানুষের নিরাপত্তার জন্য তাদের গাজা উপত্যকার দক্ষিণে স্থানান্তরের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গাজায় তাঁবু ও আশ্রয় সামগ্রীর সরবরাহ আবার শুরু হবে।'
গাজা শহর থেকে দক্ষিণের শিবিরে এক মিলিয়ন মানুষকে জোরপূর্বক সরানোর পরিকল্পনা করেছে ইসরায়েল। তবে কখন তাদের বাহিনী গাজা শহরে প্রবেশ করবে, সে নিয়ে তারা এখনও স্পষ্ট সময়সূচি দেয়নি।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় কমপক্ষে ১.৯ মিলিয়ন মানুষ বা প্রায় ৯০ শতাংশ জনগণ ইতিমধ্যেই স্থানান্তরিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা জানিয়েছে, গাজায় ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। সংস্থার বিশেষজ্ঞরা গত মাসে একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করে জানিয়েছিলেন, 'সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি' অর্থাৎ দুর্ভিক্ষ ও খাদ্যসঙ্কটের পরিস্থিতি উপত্যকায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়। হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।