রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ট্রাম্পের অনুমোদন অনিশ্চিত

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে সফল করতে রাশিয়ার ওপর নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিন মার্কিন কর্মকর্তা ও এক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রমসহ প্রাকৃতিক সম্পদ ও ব্যাংক খাতের প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলো।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন দেবেন কি না, তা এখনও অনিশ্চিত। মস্কোর প্রতি তার সহানুভূতি থাকলেও যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাড়া না দেওয়ায় ট্রাম্প এখন হতাশ।
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন মুখপাত্র জানান, 'রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি সমন্বয় করছে নিরাপত্তা পরিষদ। তবে এসব উদ্যোগ চূড়ান্ত করতে হলে ট্রাম্পের অনুমোদন লাগবে।'
বিষয়টি নিশ্চিত করে আরেকজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, 'পুরোটাই প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত।'
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জেমস হিউইট বলেন, 'শুরু থেকেই প্রেসিডেন্ট পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চলমান আলোচনার বিষয়ে আমরা মন্তব্য করি না।'
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরকারী প্রধান সংস্থা মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়।
যদি ট্রাম্প এই নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন দেন, তবে সেটি রাশিয়ার প্রতি তার অবস্থান কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দেবে। গত বুধবার ইউক্রেনের সঙ্গে খনিজসম্পদ চুক্তিতে স্বাক্ষরের পর এটি হবে তার শান্তি উদ্যোগের অংশ হিসেবে নেওয়া আরেকটি পদক্ষেপ।
২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা। এতে রাশিয়ার অর্থনীতি চাপে পড়লেও মস্কো নিষেধাজ্ঞা পরিহার করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে নিয়েছে।
সাবেক মার্কিন ইউক্রেনবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ও ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্রের দূত কার্ট ভলকার বলেন, 'পুতিনকে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি চুক্তিতে রাজি করাতে ট্রাম্প সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পুতিন সবসময় তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এখন রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগের নতুন ধাপ শুরু হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'পুতিন পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করছেন। এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন পূর্ণ যুদ্ধবিরতির পক্ষে এক কণ্ঠে কথা বলছে, কিন্তু পুতিন বিপরীত অবস্থানে।'
চলতি জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা রাশিয়ার মন জোগাতে সহায়ক হিসেবে দেখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ও রুশ ধনকুবেরদের টার্গেট করতে গঠিত বিচার বিভাগের একটি টাস্কফোর্সকে বাতিল করা।
এছাড়া তিনি মস্কোপন্থী কিছু বক্তব্য দিয়েছেন—যার মধ্যে রয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু করার জন্য ভুলভাবে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে দায়ী করা এবং তাকে 'স্বৈরাচারী' বলা।
এদিকে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল মস্কোর হাতে তুলে দিয়ে একটি শান্তি পরিকল্পনার পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন। তিনি এখন পর্যন্ত অন্তত চারবার পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
কিন্তু সেই বৈঠকের মাত্র তিন দিন পর রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ পুতিনের দাবিগুলোই তুলে ধরেন এবং ইউক্রেনের শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালালে আরও বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটে।
রয়টার্স মার্চে এক প্রতিবেদনে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিলের একটি পরিকল্পনা তৈরি করছে। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প পুতিনের গড়িমসি আচরণে ক্ষুব্ধ এবং গত শনিবার ভ্যাটিকানে জেলেনস্কির সঙ্গে তার একটি ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে।
পরদিন ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে লেখেন, তিনি রাশিয়ার ওপর 'বড় পরিসরে ব্যাংকিং নিষেধাজ্ঞা, শুল্ক ও অন্যান্য পদক্ষেপ' বিবেচনা করছেন, যা যুদ্ধবিরতি ও চূড়ান্ত শান্তিচুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।
ভলকার বলেন, 'যুদ্ধের অর্থ জোগাতে ভারত ও চীনের মতো দেশগুলোর কাছে তেল-গ্যাস বিক্রি করে রাশিয়া বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। এমন লেনদেনে যদি ট্রাম্প পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।'
পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞায় একটি দেশ কোনো তৃতীয় পক্ষকে অন্য একটি নিষেধাজ্ঞাবাহী দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করায় শাস্তি দেয়। সাধারণত নিজ দেশের বাজারে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়।