মার্কিন অর্থনীতি সংকোচনের খবরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দরপতন

টানা দ্বিতীয় দিনের মতো কমেছে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম। বৃহস্পতিবারের এই দরপতনের পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সংকোচনের খবর এবং সৌদি আরবের সম্ভাব্য তেল উৎপাদন বাড়ানোর ইঙ্গিত। সৌদি আরব যেমন বিশ্বের শীর্ষ জীবাশ্ম জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক দেশ, তেমনি যুক্তরাষ্ট্র-ও সর্ববৃহৎ তেল ব্যবহারকারী।
আজ বৃহস্পতিবার (১ মে) গ্রিনিচ মান সময় ৮টা ২২ মিনিটে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫৯ সেন্ট বা ১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬০.৪৭ ডলারে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ফিউচার্সে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে ৬৫ সেন্ট বা ১.১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫৭.৫৬ ডলারে।
গতকাল বুধবার ডব্লিউটিআইয়ের দাম ২০১৪ সালের মার্চের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে, আজ যা আরও কমেছে। মার্কিন অর্থনীতির সংকোচনের মধ্যে সৌদি আরবের সরবরাহ বৃদ্ধির ইঙ্গিত এই দরপতনে প্রভাব ফেলেছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
ব্যাংকিং ও বিনিয়োগ পরামর্শক সংস্থা– ইউবিএস এর বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউনোভো বলেন, "বাণিজ্য উত্তেজনা ও ওপেক প্লাসের দ্রুত উৎপাদন হ্রাস প্রত্যাহার ঘিরে বিশ্ববাজারে আগামী মাসগুলোতে জ্বালানি তেলের চাহিদা হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।"
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, সৌদি আরব তার মিত্র ও শিল্প বিশেষজ্ঞদের জানিয়েছে, তারা সরবরাহ কমিয়ে তেলের দাম বাড়ানোর পক্ষে নয়, এবং দীর্ঘসময় কম দামে বাজারে সরবরাহ করতেও প্রস্তুত।
ওপেক প্লাসের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছেন, এই জোটের কয়েকটি সদস্য দেশ— জুন মাসে টানা দ্বিতীয় মাসের মতো উৎপাদন বাড়ানোর পক্ষে মত দেবে। এর আগে আগামী ৫ মে আটটি ওপেক প্লাস সদস্য দেশের মধ্যে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে জুন মাসের উৎপাদন পরিকল্পনা নির্ধারিত হবে।
তবে দরপতনের পেছেন একই ধরনের বড় ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সংকোচন ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশৃঙ্খল বাণিজ্যনীতি।
যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সংকুচিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক বাড়ার ভয়ে আমদানিকারকরা তড়িঘড়ি করে আমদানি বাড়ানোর কারণে এই সংকোচন ঘটেছে, যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনিশ্চিত বাণিজ্যনীতির নেতিবাচক প্রভাব তুলে ধরে।
রয়টার্সের এক জরিপে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি চলতি বছর মন্দার মুখে পড়তে পারে।
মিতশুবিসি ইউএফজে ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের বিশ্লেষক এহসান খোমান বলেন, "বিশেষ করে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চিত শুল্কের নীতিমালা আগে থেকেই উদ্বিগ্ন (জ্বালানি তেলের) ট্রেডারদের আরও আতঙ্কিত করেছে, যারা বাজারে দীর্ঘদিনের অতিরিক্ত সরবরাহ নিয়ে চিন্তিত ছিল।"
চাহিদা কমার পূর্বাভাস ও মজুদের হ্রাস
রয়টার্সের এক জরিপে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক বাণিজ্য বিরোধ ও ওপেক প্লাসের সরবরাহ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত তেলের দামে চাপ সৃষ্টি করবে।
বাজার বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান কেপলার তাদের ২০২৫ সালের বৈশ্বিক তেলের চাহিদা বৃদ্ধির পূর্বাভাস দৈনিক ৮ লাখ ব্যারেল থেকে কমিয়ে ৬ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল করেছে। এর পেছনে রয়েছে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ভারতের দুর্বল চাহিদা।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসন জানিয়েছে, গত সপ্তাহে দেশটির অপরিশোধিত তেলের মজুদ ২৭ লাখ ব্যারেল কমেছে। রপ্তানি ও শোধনাগারের চাহিদা বেড়ে যাওয়াই এর কারণ। রয়টার্স জরিপে বিশ্লেষকরা ৪ লাখ ২৯ হাজার ব্যারেল মজুদ বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।