বহুল প্রতীক্ষিত খনিজ চুক্তি স্বাক্ষর করল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বহুল প্রচারিত খনিজ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইউক্রেন। বুধবার (৩০ এপ্রিল) স্বাক্ষরিত এ চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনের নতুন খনিজ সম্পদ চুক্তিতে বিশেষ প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে এবং ইউক্রেন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ তহবিল বরাদ্দ করা হবে।
দুই দেশ বেশ কয়েক মাসের উত্তেজনাপূর্ণ আলোচনা এবং শেষ মুহূর্তের বাধার অনিশ্চয়তা কাটিয়ে অবশেষে ওয়াশিংটনে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
আরও সামরিক সহায়তা প্রদানের বিনিময়ে এ চুক্তি স্বাক্ষরে ইউক্রেনকে চাপ দিয়ে আসছিল হোয়াইট হাউজ।
চুক্তি অনুযায়ী, ইউক্রেনের পুনর্গঠনের জন্য একটি যৌথ বিনিয়োগ তহবিল স্থাপন করা হবে।
এই চুক্তি কিয়েভের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ট্রাম্প এবং হোয়াইট হাউজের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নতির চেষ্টার অংশ। জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর এ সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আশা করছেন, চুক্তিটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এবং ইউক্রেনের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া স্বরিদেঙ্কো চুক্তি স্বাক্ষর করছেন।
ট্রেজারি দাবি করেছেন, চুক্তিটি 'ট্রাম্প প্রশাসনের একটি স্পষ্ট সংকেত যে তারা একটি মুক্ত, সার্বভৌম, সমৃদ্ধ ইউক্রেনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'
স্বরিদেঙ্কো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স- লিখেছেন, চুক্তিটি ওয়াশিংটনকে তহবিলে অবদান রাখার সুযোগ দেয়।
তিনি বলেন, 'সরাসরি আর্থিক অবদানের পাশাপাশি, এটি নতুন সহায়তা যেমন ইউক্রেনের জন্য বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রদান করতে পারে।'
তবে, ওয়াশিংটন সরাসরি এ প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
জার্মানির কিয়েল ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের রুশ আক্রমণের পর থেকে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় সামরিক সহায়ক যুক্তরাষ্ট্র ৭২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদান করেছে।
চুক্তি স্বাক্ষরের আগে ট্রাম্প বুধবার আবারও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কিয়েভের জন্য সহায়তার বদলে কিছু পাওয়া উচিত। তাই ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদের চুক্তি সুরক্ষিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
চুক্তির ঘোষণা দেওয়ার সময় মার্কিন ট্রেজারি বলেছেন এই অংশীদারিত্ব 'রাশিয়ার পূর্ণ আক্রমণের পর ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ যে বিশাল আর্থিক ও বস্তুগত সহায়তা প্রদান করেছে, তা স্বীকার করে।'
ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে খনিজ উত্তোলন
চুক্তির আওতায় ইউক্রেনকে 'কোথায় এবং কোন খনিজ উত্তোলন করা হবে তা নির্ধারণ করার' অধিকার দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া স্বরিদেঙ্কো।
ইউক্রেনে বিরল মৃতিকা ধাতু, লোহা, ইউরেনিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রচুর পরিমাণে মজুদ রয়েছে। ধারণা করা হয়, ইউক্রেনের গ্রাফাইট, টাইটেনিয়াম ও লিথিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ ধাতুর বিশাল মজুত রয়েছে। নবায়নযোগ্য শক্তি, সামরিক কাজে ও শিল্প অবকাঠামোতে ব্যবহৃত হয় বলে এসব খনিজের চাহিদা বিপুল।
ইউক্রেনের এ চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কোনও ঋণ বাধ্যবাধকতা নেই, যা দুই দেশের দীর্ঘ আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।
চুক্তি ইউক্রেনের সংবিধান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের প্রচেষ্টার সাথে সংগতিপূর্ণ এবং এটি দীর্ঘমেয়াদি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা জোরালো করছে।
ইউক্রেনের খনিজ চুক্তি এবং যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রচেষ্টা আলাদা আলোচনা হলেও, এটি ইউক্রেন ও রাশিয়া সম্পর্কের ওপর ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। ট্রাম্প রাশিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নরম করেছেন এবং মাঝে মাঝে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে যুদ্ধের জন্য দোষারোপ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রস্তাবে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং ইউক্রেনের আরও চারটি অঞ্চলের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
তবে জেলেনস্কি বলেছেন, কিয়েভ কখনোই এটি মেনে নেবে না কারণ এটি ইউক্রেনের সংবিধান বিরোধী হবে।
এছাড়া, চুক্তির খসড়ায় ইউক্রেন পূর্ববর্তী সামরিক সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে কোনও টাকা পরিশোধের প্রয়োজনীয়তা বাতিল করেছে, যা ইউক্রেন বিরোধিতা করেছিল।
তবে, এই খসড়াতে ইউক্রেনের জন্য কোনো স্পষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়নি। ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তি হলে দেশটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের বিষয়ে আলোচনা করেছে।
পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার জেরে প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় বুধবার (৩০ এপ্রিল) পাকিস্তানের বিমানসংস্থার জন্য ভারতের আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নয়াদিল্লি।
সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানি বিমান সংস্থাগুলোর জন্য ভারতের আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে একটি 'এনওটিএএম' (নোটিশ টু এয়ারমেন) জারি করা হয়েছে।
ভারতের এই সিদ্ধান্তের এক সপ্তাহ আগেই পাকিস্তান ভারতীয় বিমানসংস্থার জন্য তার আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
এদিকে নিরাপত্তাজনিত কারণে পাকিস্তানের জাতীয় বিমান সংস্থা পিআইএ বুধবার গিলগিট, স্কারদু এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের অন্যান্য উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল করেছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
উর্দু দৈনিক 'জঙ্গ' জানিয়েছে, পিআইএ করাচি ও লাহোর থেকে স্কারদুর উদ্দেশে দুটি করে ফ্লাইট বাতিল করেছে।
এভিয়েশন সূত্রের বরাতে পত্রিকাটি আরও জানায়, ইসলামাবাদ থেকে স্কারদু যাওয়ার দুটি ফ্লাইট এবং ইসলামাবাদ থেকে গিলগিটগামী চারটি ফ্লাইটও বাতিল করা হয়েছে।
ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা পর্যবেক্ষণ আরও জোরদার করেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকা।
পত্রিকাটি লিখেছে, 'নিরাপত্তাজনিত কারণে বুধবার গিলগিট ও স্কারদু রুটে নির্ধারিত সব বাণিজ্যিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।'
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপগুলো সতর্কতামূলক এবং আঞ্চলিক উত্তেজনার সময় জাতীয় আকাশসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।
পত্রিকাটি আরও জানিয়েছে, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ দেশের সব বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে এবং নিরাপত্তা ও নজরদারির ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে জোরদার করেছে।