যৌন অপরাধী এপস্টিনকে নিয়ে প্রতিবেদন: ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে ১০ বিলিয়ন ডলারের মামলা ট্রাম্পের

কুখ্যাত উচ্চবিত্ত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টিনের সঙ্গে বন্ধুত্বের বিষয়ে একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও সংবাদমাধ্যমটির মালিক, মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ মামলায় তিনি অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
শুক্রবার ফ্লোরিডার সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের ফেডারেল আদালতে এই মামলাটি দায়ের করেন ট্রাম্প। তার লক্ষ্য, এপস্টিন মামলাকে ঘিরে বাড়তে থাকা এই কেলেঙ্কারির বিস্তার রোধ এবং এর থেকে সৃষ্ট মারাত্মক রাজনৈতিক ক্ষতির ঝুঁকি এড়ানো।
ট্রাম্প মার্কিন বিচার বিভাগকেও নির্দেশ দিয়েছেন, যেন এপস্টিন ও তার সাবেক সহযোগী জিস্লেইন ম্যাক্সওয়েলের মামলার গ্র্যান্ড জুরির কার্যবিবরণী প্রকাশ করার জন্য ম্যানহাটনের ফেডারেল আদালতে আবেদন করা হয়। ২০২১ সালে ম্যাক্সওয়েল অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের যৌন নিপীড়নে এপস্টিনকে সহায়তার দায়ে পাঁচটি ফেডারেল অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন।
মানহানি মামলায় ট্রাম্প অভিযোগ এনেছেন, ডাও জোনস, নিউজ কর্প, মারডক ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের দুই প্রতিবেদক বিদ্বেষপ্রসূত উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেছেন, যা তার ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি ও সুনামহানি ঘটিয়েছে। সংবাদপত্রটির মূল প্রতিষ্ঠান ডাও জোনস হলো নিউজ কর্প-এর একটি বিভাগ।
মামলা দায়েরের আগে শুক্রবার সকালে ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ লেখেন: 'রুপার্ট মারডক এবং তার "আবর্জনার স্তূপ" সংবাদপত্র ডব্লিউএসজে-র বিরুদ্ধে আমার মামলায় তাকে সাক্ষ্য দিতে দেখার জন্য আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। এটি একটি আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা হবে!!!'
এর জবাবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মালিক প্রতিষ্ঠান ডাও জোনস বলেছে, তারা ট্রাম্পের এই আইনি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে 'জোরালোভাবে আত্মরক্ষা' করবে।
এপস্টিনকে অশ্লীল জন্মদিনের বার্তা পাঠানোর কথা অস্বীকার ট্রাম্পের
বৃহস্পতিবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এপস্টিনের এক জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের স্বাক্ষরযুক্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল।
সংবাদপত্রটি বলে, চিঠিতে একজন নারীকে নিয়ে হাতে লেখা একটি অশ্লীল বার্তা ছিল। ওই বার্তায় হয়েছিল: 'শুভ জন্মদিন—এবং প্রতিটি দিন হোক আরও একটি চমৎকার গোপন রহস্য।' চিঠিতে 'ডোনাল্ড' নামে স্বাক্ষর করা ছিল।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর এপস্টিনকে চিঠি পাঠানোর কথা অস্বীকার করে সংবাদপত্রটির ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প একসময় এপস্টিনকে বন্ধু মনে করতেন। কারাগারে আত্মহত্যা করা এই বহুল আলোচিত ব্যক্তিকে ঘিরে বিতর্ক ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের জন্ম হয়েছে, বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কট্টর-ডানপন্থি সমর্থকদের মধ্যে।
গত সপ্তাহে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি তার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসে এপস্টিনের আদালতের নথি প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে ট্রাম্প সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হন। অনেকেই বিশ্বাস করতেন, ওই নথিতে এপস্টিন ও তার অভিজাত গ্রাহকদের ব্যাপারে বিস্ফোরক তথ্য ছিল।
২০১৯ সালে নিউইয়র্কের একটি জেলখানায় এপস্টিন আত্মহত্যা করেন। ট্রাম্পের অনেক সমর্থক বিশ্বাস করেন, সরকার ধনী ও ক্ষমতাধরদের সঙ্গে এপস্টিনের সম্পর্ক ধামাচাপা দিচ্ছে। কেউ কেউ মনে করেন, তিনি আত্মহত্যা করেননি।
তবে গত ৭ জুলাই প্রকাশিত বিচার বিভাগের একটি মেমোতে বলা হয়, এপস্টিন আত্মহত্যাই করেছিলেন এবং সেখানে 'অপরাধে জড়ানোর মতো কোনো গ্রাহক তালিকা' বা এপস্টিন যে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইল করতেন, তার কোনো প্রমাণ নেই।
ট্রাম্পকে ১৯৯০-এর দশকে ও ২০০০-এর দশকের শুরুতে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে এপস্টিনের সঙ্গে একাধিকবার ছবি তুলতে দেখা গেছে। ২০১৯ সালে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এপস্টিনের আইনি সমস্যা স্পষ্ট হওয়ার আগেই তিনি তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।