আমদানি শুল্কের অস্থিরতা; তিন বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে সংকোচন

তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ)। বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশৃঙ্খল বাণিজ্যনীতির কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো শুল্ক বৃদ্ধির আগেই ব্যাপক আমদানি করে ফেলায় অর্থনীতিতে এই ধাক্কা এসেছে।
আজ বুধবার (৩০ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ জানায়, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি বার্ষিক হারে ০.৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যদিও ভোক্তা ব্যয় কিছুটা কমেছে, তবে ব্যবসায়িক বিনিয়োগ এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদার কিছু সূচক এখনও তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভোক্তা ব্যয় ও ব্যবসায়িক খরচ মূলত শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই 'আগাম কেনাকাটার' ফলে হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে সাময়িকভাবে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এই পতন ট্রাম্প প্রশাসনের ১০০ দিন পূর্তির সময়ে এসেছে, যখন ভোক্তাদের আস্থা পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে এবং ব্যবসায়িক আস্থাও নিম্নমুখী। মার্কিন এয়ারলাইনগুলো ২০২৫ সালের আর্থিক পূর্বাভাস প্রত্যাহার করেছে, কারণ শুল্কজনিত অনিশ্চয়তার কারণে আমেরিকানদের 'অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ' কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
'শুল্ক কর' অর্থনীতিকে টেনে নিচে নামাবে
বিশ্লেষক কার্ল ওয়েনবার্গ বলেন, "যদি আমদানি বৃদ্ধির কারণ হয়— ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর আগেভাগে পণ্য সংগ্রহ, তাহলে দ্বিতীয় প্রান্তিকে বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা হ্রাস পাবে এবং সাময়িকভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে। তবে শুল্ক নামক এই কর ও অনিশ্চয়তা বছরের শেষ নাগাদ আবারও অর্থনীতিকে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির দিকে ঠেলে দেবে।"
চতুর্থ প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ২.৪ শতাংশ হারে বেড়েছিল। তবে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে আমদানি বেড়েছে ৪১.৩ শতাংশ হারে, যা ২০২০ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের পর সর্বোচ্চ। এর ফলে রপ্তানি বৃদ্ধির সামান্য ইতিবাচক প্রভাবও মুছে গেছে। আমদানি-রপ্তানির এই ভারসাম্যহীনতা জিডিপি থেকে রেকর্ড ৪.৮৩ শতাংশ পয়েন্ট কেটে দিয়েছে।
সোনা-রুপার মতো মূল্যবান ধাতুর আমদানিও হিসাবকে প্রভাবিত করেছে
রিপোর্টে জানানো হয়, রূপার বার আমদানিকে 'বিনিয়োগ' হিসেবে গণ্য করা না হলেও— এটি প্রথম প্রান্তিকে আমদানির পরিসংখ্যানে বড় ভূমিকা রেখেছে। এ ধরনের মূল্যবান ধাতুর লেনদেন ভোক্তা ব্যয়, ব্যক্তিগত বিনিয়োগ বা সরকারি ব্যয়ের আওতায় পড়ে না— যা জিডিপির নির্ভুলতা ব্যাহত করেছে।
ভোক্তা ব্যয় কিছুটা কমলেও শক্তিশালী অবস্থানে
মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে থাকা ভোক্তা ব্যয় এ প্রান্তিকে ১.৮ শতাংশ হারে বেড়েছে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৪ শতাংশ। এই ব্যয় বাড়ার পেছনে স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনাকাটার প্রভাব রয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, বেশিরভাগ পরিবার শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে কেনাকাটা সেরে ফেলেছে। বর্তমানে শ্রমবাজারেও স্থবিরতা বিরাজ করছে, ফলে ভোক্তারা আরও বেশি সঞ্চয় করছে।
ট্রাম্পের নীতিতে দ্বৈত বার্তা
মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে গাড়ি শিল্পে শুল্ক কমিয়ে কিছুটা স্বস্তি দেন। তবে চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্কসহ অন্যান্য বহু আমদানি কর এখনো বহাল রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এই শুল্ককে রাজস্ব বৃদ্ধির মাধ্যম এবং দীর্ঘদিনের পতনশীল শিল্প খাতকে চাঙা করার কৌশল হিসেবে দেখছে।
তবে তীব্র শুল্ক সত্ত্বেও ব্যবসায়িক বিনিয়োগে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। ব্যবসায়িক সরঞ্জাম ক্রয়ে ব্যয় বেড়েছে ২২.৫ শতাংশ হারে। মূল অভ্যন্তরীণ চাহিদার অন্যতম সূচক — "প্রাইভেট ডোমেস্টিক পারচেজার"-এ বিক্রয় ৩ শতাংশ হারে বেড়েছে। তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন, এই চাহিদাও শুল্ক-প্রভাবিত এবং তাই তা দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে।