স্পেন ও পর্তুগালে বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট, বিপর্যস্ত জনজীবন

স্পেন ও পর্তুগালে সোমবার (২৮ এপ্রিল) বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। এতে করে দেশগুলোর গণপরিবহন ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন ফ্লাইট বিঘ্নিত হয়।
গ্রিড পুনরুদ্ধারে কাজ শুরু করলেও স্পেনের বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংস্থা রেড ইলেক্ট্রিকা জানিয়েছে, বিভ্রাটের কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে ছয় থেকে দশ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনো সাইবার হামলার সম্ভাবনা তারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে স্পেন ও পর্তুগালের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। ট্রাফিক সিগন্যাল অচল হয়ে পড়ায় সড়কে তীব্র যানজটে পরিবহন ব্যবস্থা থমকে যায়, হাসপাতালগুলো বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে এবং মেট্রোরেল ও লিফটে মানুষ আটকে যায়।
মাদ্রিদে শত শত মানুষ অফিস ভবনের বাইরে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পুলিশ সদস্যদের ট্রাফিক পরিচালনা এবং কেন্দ্রীয় সড়কগুলোতে টহল দিতে দেখা গিয়েছে।
ইতোমধ্যে স্পেন ও পর্তুগালের সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় বৈঠকে বসেছে। এই বিভ্রাটের প্রভাব ফ্রান্সের কিছু অংশেও সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য পড়ে। স্পেনে একটি ক্রাইসিস কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেস বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংস্থা রেড ইলেক্ট্রিকার নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। স্প্যানিশ সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, 'সরকার ঘটনাটির উৎস ও প্রভাব নির্ধারণে কাজ করছে এবং দ্রুত সমাধানে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।'
রেড ইলেক্ট্রিকা জানিয়েছে, তারা আঞ্চলিক বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করছে। পর্তুগালের ইউটিলিটি প্রতিষ্ঠান আরইএন জানিয়েছে, তারা ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।
ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, তারা স্পেন ও পর্তুগালের কর্তৃপক্ষ এবং ইউরোপীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংস্থা ইএনটিএসও-ই'র সঙ্গে বিভ্রাটের কারণ অনুসন্ধান করছে।
বিভ্রাটে জনজীবনে স্থবিরতা
ইউরোপে এ ধরনের বড় বিদ্যুৎ বিভ্রাট বিরল। ২০০৩ সালে ইতালি ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের লাইনে সমস্যা দেখা দিলে পুরো ইতালি প্রায় ১২ ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে।
মাদ্রিদে সাইরেনের শব্দ আর হেলিকপ্টারের গুঞ্জনে আকাশ মুখর হয়ে ওঠে। রাজধানীর সুউচ্চ টাওয়ার এম্পেরাডর ভবন থেকে সিঁড়ি ব্যবহার করে মানুষদের বের হতে দেখা যায়।
মাদ্রিদের মেয়র হোসে লুইস মার্টিনেজ-আলমেইদা এক ভিডিও বার্তায় রাজধানীর বাসিন্দাদের উদ্দেশে অপ্রয়োজনে চলাফেরা না করে যেখানে আছেন সেখানেই থাকার আহ্বান জানান।
দেশটির বিমানবন্দরগুলো ফ্লাইট বিলম্বের খবর জানা গেছে। স্পেনের বিমানবন্দর পরিচালনাকারী সংস্থা এইএনএ জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।
পর্তুগালের বিমানবন্দর পরিচালনাকারী সংস্থা এএনএ জানিয়েছে, তারা জরুরি জেনারেটরের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত পোর্তো ও ফারো বিমানবন্দরে ন্যূনতম কার্যক্রম চালু রেখেছে।
এএনএ জানায়, লিসবনে কার্যক্রম চললেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মাদেইরা ও আজোরেসের বিমানবন্দরগুলোতে বিভ্রাটের কোনো প্রভাব পড়েনি।