লন্ডন সফরের মূল উদ্দেশ্যই ছিল খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ: জামায়াতের আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, আমাদের (লন্ডন) সফরের মূল উদ্দেশ্যই ছিল খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করা।
ইউরোপ ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে আজ বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন শফিকুর রহমান।
শফিকুর রহমান বলেন, 'আমরা প্রথমেই উনার (খালেদা জিয়ার) সাথে দেখা করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, তিনি আমাদের ভালোবাসা ও সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। আমাদের (লন্ডন) সফরের মূল উদ্দেশ্যই ছিল তাঁর সাথে দেখা করা। যেহেতু তিনি অবস্থান করছেন, তাঁর বড় ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বাসায়, সেহেতু তিনিও থাকবেন- এটাই স্বাভাবিক।'
খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জামায়াতের মতো বিএনপিও একইভাবে দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে। "আমরা ১১ জন শীর্ষ নেতা হারিয়েছি, অসংখ্য কর্মী নিহত ও পঙ্গু হয়েছেন। বিএনপিও অনেক নেতা-কর্মী হারিয়েছে। আমাদের দলের নেতারা আয়নাঘরে গুম, খুন, মামলা ও নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতারাও লাখে লাখে নির্যাতিত হয়েছিল। হাজারে হাজারে নয়, লাখে লাখে। ব্যক্তি হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াও একদিকে মজলুম, আরেকদিকে অসুস্থ।
সাক্ষাতে কি আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদশের দুজন অপিরিচিত সাধারণ মানুষ চা দোকানে বসলেও– রাজনীতি নিয়ে কথা বলে। আর আমরা দুই দলের দায়িত্বশীলবৃন্দ এক জায়গায় বসবো, আর রাজনীতির কোন কথা হবে না এটা কি বাস্তব? এটা বাস্তব না। কথা তো হয়েছে, কিন্তু আমরা সুনির্দিষ্ট কোনও বিষয় নিয়ে কথা বলিনি। কখন নির্বাচন হবে, কীভাবে নির্বাচন হবে, বিচার প্রক্রিয়া কীভাবে হবে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা সাধারণ আলোচনা করেছি। এটার ডিসিসিভ কোন ডিসকাশন ছিল না।
বিএনপি-জামায়াতের বিরোধ প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, 'রাজনৈতিক বিরোধ থাকতেই পারে, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নির্বাচনে দুই দলের বিরোধ দেখেন। নির্বাচন শেষ, হ্যান্ডশেক। নির্বাচন শেষে সবাই মিলেমিশে দেশ চালানো যায়। আমাদেরও সেদিকেই এগোতে হবে। রাজনীতিতে আমরা চাই মতপার্থক্য থাকুক, না হলে রাজনীতিবিদরা অন্ধ হয়ে যাবে। বন্ধ চোখ খুলে দেওয়ার জন্যই দরকার মতপার্থক্য। কিন্তু এ-ও আমরা প্রত্যাশা করি, এটা যেন মতবিরোধে রুপ না নেয়।'
ইউরোপ ও যুক্তরাজ্য সফরের প্রসঙ্গে জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, 'তাঁরা (বিদেশিরা) আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে জানতে চেয়েছেন যে এই নির্বাচন কখন হবে, কীভাবে হবে? আমরা বলেছি, অনেক ত্যাগ এবং চেষ্টার বিনিময়ে যে পরিবেশ এসেছে, সেই পরিবেশ তিনটি ম্যান্ডেটরি জিনিস দাবি করছে। প্রথম হলো, দৃশ্যমান, গ্রহণযোগ্য, মৌলিক সংস্কার। কিছু সুনির্দিষ্ট জায়গা আমরা মেনশন (উল্লেখ) করেছি, যা এর আগে আমরা জাতির সামনে পেশ করে যাচ্ছি। এ বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব কমিশনগুলোর কাছে জমা দিয়েছি। আমরা বলেছি, সংস্কারগুলো সাধন না করে যেই নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচন গণতন্ত্রের কোনো ভিত্তি রচনা করতে পারবে না। বরং অতীতের যেসব নির্বাচন দেশ ও জাতির কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য হয়নি, সে রকম হয়তো আরেকটা খারাপ নির্বাচন হবে। আমরা ওই নির্বাচন চাই না।'
শফিকুর রহমান বলেন, হাজার প্রাণের বিনিময়ে, হাজার হাজার মানুষের পঙ্গুত্বের বিনিময়ে, আহত হওয়ার বিনিময়ে দেশে এই পরিবর্তন এসেছে। তাই অবশ্যই সংস্কার সাধন করতেই হবে। এই সংস্কার কারা করবে? সংস্কারের প্রধান অংশীজন হলো রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলো যত তাড়াতাড়ি ও আন্তরিকতার সঙ্গে সংস্কারে সহযোগিতা করবে, তত তাড়াতাড়ি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে। সংস্কার যদি না হয়, তাহলে সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির বিষয়ে দেশের মানুষের যে প্রত্যাশা, সেটি পূরণ না হয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে পড়বে। আর তার দায় রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে বাস্তবতার কাতারে এসে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সংস্কারে সহযোগিতা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, তাঁরা (বিদেশিরা) নির্বাচনের সময় জানতে চেয়েছেন। তাঁরা তাদের বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতির সামনে বারবার বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাঁরা মনে করেন, আনুষঙ্গিক প্রস্তুতির জন্য, সংস্কারের জন্য, বিচারের জন্য এই সময়টা গ্রহণযোগ্য। এই সময়ের সীমা যাতে অতিক্রম করে না যায়, তাঁরা সেই বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন।