ট্রাম্প এ সপ্তাহেই ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি আলোচনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন: রুবিও

রোববার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন এ সপ্তাহের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেবে—রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন নিয়ে চলমান আলোচনাকে আরও এগিয়ে নেওয়া হবে, নাকি অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃষ্টি ফেরানো হবে।
এনবিসির 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে রুবিও বলেন, 'এই সপ্তাহটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এই উদ্যোগে আমাদের আর সম্পৃক্ত থাকা উচিত হবে, নাকি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মনোনিবেশ করবো।'
তবে তিনি আরও বলেন, 'আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান আসুক। আশাবাদী হওয়ার কারণ আছে, আবার বাস্তবতাকে সামনে রেখেও ভাবতে হবে। আমরা খুব কাছে পৌঁছালেও এখনও তা যথেষ্ট নয়।'
আলোচনার অগ্রগতির বিস্তারিত কিছু জানাননি রুবিও। ফলে স্পষ্ট নয়, তিনি যে সময়সীমার কথা বললেন তা ইউক্রেন ও রাশিয়াকে আলোচনায় বসতে চাপ দিতে বলা কিনা, নাকি আসলেই ট্রাম্প প্রশাসন আলোচনার টেবিল থেকে সরে আসার কথা ভাবছে।
অন্যদিকে, সিবিএস নিউজের 'ফেস দ্য নেশন' অনুষ্ঠানে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ভি. ল্যাভরভ জানান, শিগগিরই সমঝোতা সম্ভব হবে এমন কোনো ইঙ্গিত এখনো নেই। তিনি বলেন, 'আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রস্তুত, তবে এখনো কিছু নির্দিষ্ট বিষয় রয়েছে, যেগুলো সূক্ষ্মভাবে ঠিকঠাক করার প্রয়োজন।'
গত বৃহস্পতিবার রাশিয়া কিয়েভে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালালে অন্তত ১২ জন নিহত হন। এ হামলার পর ট্রাম্পের পক্ষ থেকে অস্বাভাবিকভাবে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। একই দিন রেকর্ড করা সাক্ষাৎকারে ল্যাভরভ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের পূর্ণ অস্ত্রবিরতিতে রাশিয়া এখনও সম্মতি দেয়নি। অন্যদিকে, ইউক্রেন এই প্রস্তাবে রাজি ছিল।
রুবিওর দেয়া এই মন্তব্যের ঠিক একদিন আগে ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায় পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে দেখা হয়। দুজনের একসঙ্গে বসে আলাপ করার কিছু ছবি প্রকাশিত হয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসে উত্তপ্ত বৈঠকের পর এটাই ছিল ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে সরাসরি প্রথম সাক্ষাৎ। ওই সময়ে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সামনে যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করার অভিযোগে জেলেনস্কিকে ভর্ৎসনা করা হয়েছিল।
ট্রাম্প একাধিকবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি ইতিবাচকতা দেখালে ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও প্রকট হয়। ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং একই সঙ্গে ইউক্রেনকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ উত্তোলন সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে রাজি করানোর চেষ্টা চালান।
চলতি মাসে প্যারিস ও লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলোতে এবং মিত্র দেশগুলোর মাধ্যমে চালানো সংলাপে, মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য সমঝোতার শর্তাবলি নিয়ে আলোচনা করেন এবং পরস্পরের প্রস্তাব ও পাল্টা প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—যুক্তরাষ্ট্র যেন ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ২০১৪ সাল থেকে পূর্ব ইউক্রেনের যে বিশাল অঞ্চল রুশ সেনারা দখল করে রেখেছে, তা যেন কার্যত মেনে নেওয়ার অবস্থান গ্রহণ করে।
ট্রাম্প একইসঙ্গে ঘোষণা দিতে চাচ্ছেন যে তার শাসনামলে ইউক্রেন যেন ন্যাটোতে যোগ না দিতে পারে।
শনিবার ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ধন্যবাদ জানিয়ে এই সাক্ষাৎকে 'খুব প্রতীকী একটি বৈঠক' হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, 'আমরা যৌথভাবে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারলে এটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে।'
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র স্টিভেন চেউং এ বৈঠককে 'খুবই ফলপ্রসূ' বলে উল্লেখ করেন।
শনিবার আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, ট্রাম্প এবং জেলেনস্কি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে কথা বলছেন। ফ্রান্স ও ব্রিটেনের নেতারা আগে থেকেই বলেছিলেন, কোনো সমঝোতা চুক্তি হলে ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রদান জরুরি।
জেলেনস্কিও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, এ ধরনের নিশ্চয়তা দেওয়ার দায়িত্ব ইউরোপীয়দের, যুক্তরাষ্ট্রের নয়।
নিজের পোস্টে জেলেনস্কি জানান, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়টি তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
শুক্রবার, ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ মস্কোতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। এরপর শনিবার ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেন, 'রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার জন্য আজ ছিল একটি ভালো দিন। দুই পক্ষই এখন চুক্তির কাছাকাছি এবং শিগগিরই উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা উচিত তাদের।'
উল্লেখ্য, উইটকফ এবং রুবিও দুজনেই গত সপ্তাহে লন্ডনে ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি আলোচনায় অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে ১৭ এপ্রিল প্যারিসে হওয়া বৈঠকে তারা ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের কাছে সমঝোতা প্রস্তাব তুলে ধরলে এর মূল কিছু বিষয় নিয়ে জেলেনস্কির সহযোগীরা আপত্তি জানান।
প্যারিস বৈঠকের পর রুবিও বলেছিলেন, 'কয়েক দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটি সম্ভবপর হবে কি না। সব পক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব না হলে ইউক্রেন ইস্যু বাদ দিয়েই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।'