পেহেলগাম হামলা: ‘নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ’ আন্তর্জাতিক তদন্ত চায় পাকিস্তান, সহায়তা করতেও প্রস্তুত

শনিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে ঘটে যাওয়া হামলার যেকোনো 'নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ' তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত পাকিস্তান।
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামের ওই জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হন। নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। একে ২০০০ সালের পর থেকে কাশ্মীরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সশস্ত্র হামলা মনে করা হচ্ছে। হামলার দায় স্বীকার করেছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) একটি সংগঠন।
এ ঘটনার পর থেকেই পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশ পরস্পরের বিরুদ্ধে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। ভারত প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে। এর জবাবে পাকিস্তান শিমলা চুক্তি স্থগিত করার পাশাপাশি ভারতের জন্য আকাশপথ বন্ধ করে দেয়।
এ হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসাজশ থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত। কিন্তু পাকিস্তান এ অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে।
পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমির এক পাসিং আউট প্যারেডে বক্তব্য দেওয়ার সময় পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, 'পেহেলগামের সাম্প্রতিক মর্মান্তিক ঘটনায় আবারও সেই চিরাচরিত দোষারোপের খেলা দেখা গেল। এই খেলা এখনই বন্ধ করতে হবে। দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে পাকিস্তান যেকোনো নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসযোগ্য তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত।'
শাহবাজ ভারতের সমালোচনা করে বলেন, ভারত ক্রমাগত 'একটি প্যাটার্ন অনুসরণ করে' নির্ভরযোগ্য তদন্ত কিংবা যাচাইযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই 'ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে'।
তিনি বলেন, 'আমি আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জাতির পিতা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যথার্থই বলেছিলেন—কাশ্মীর পাকিস্তানের গলার শিরা। …কোনো বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয়, কাশ্মীরি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ও ত্যাগের পক্ষে পাকিস্তান অটলভাবে সমর্থন দিয়ে যাবে।'
শাহবাজ আরও বলেন, 'পাকিস্তান সবসময় সন্ত্রাসবাদের সব রূপ ও প্রদর্শনের নিন্দা করেছে।'
এ সময় পাকিস্তান নিজেও কীভাবে সন্ত্রাসবাদের ফলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে, সেটি তুলে ধরে শাহবাজ বলেন, 'আমরা ৯০ হাজার প্রাণ হারিয়েছি, ৬০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।'
উল্লেখ্য, শাহবাজ শরিফ এই বক্তব্য দেওয়ার একদিন আগেই দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফও নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, পাকিস্তান 'আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের পরিচালিত যেকোনো তদন্তে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত'।
তিনি বলেন, ভারত এই হামলার ঘটনাকে অজুহাত বানিয়ে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থে তা ব্যবহার করছে। কোনোরকম তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই ভারত পাকিস্তানকে শাস্তি দিতে চাইছে বলেও মন্তব্য করেন আসিফ।
তিনি আরও বলেন, 'আমরা চাই না এই যুদ্ধের আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ুক। কারণ এ যুদ্ধকে উসকে দিলে তা সমগ্র অঞ্চলকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলতে পারে।'
ভারতের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা এখন 'বিলুপ্ত' এবং পাকিস্তান থেকে হামলা পরিচালনার সক্ষমতা তাদের নেই।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আসিফ বলেন, পেহেলগামের এই হামলা ভারত সরকারের সাজানো একটি 'ফলস ফ্ল্যাগ' অভিযান হতে পারে, যার উদ্দেশ্য সংকট উসকে দেওয়া।
আসিফ আরও বলেন, গত এক দশক ধরে ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে আসছিল। এ চুক্তি এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতার স্তম্ভ হিসেবে কাজ করেছিল।
তিনি অভিযোগ করেন, 'তারা অজুহাত বানাচ্ছিল। ওরা এমন সমস্যা সৃষ্টি করছিল, আদৌ যার অস্তিত্ব ছিল না। এখন তারা এই ব্যবস্থা [চুক্তি] থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য সেই অজুহাত খুঁজে পেয়েছে।'
স্কাই নিউজকে দেওয়া আরেক সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেন, ভারত যদি কোনো সামরিক হামলা চালায়, তবে তা 'সর্বাত্মক যুদ্ধের' রূপ নিতে পারে।
এদিকে পেহেলগাম হামলার পর চরম উত্তেজনার মধ্যে দ্বিতীয় দিনেও নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে।
আজাদ কাশ্মীরের সরকারি কর্মকর্তা সৈয়দ আশফাক গিলানি এএফপিকে জানান, দুই দেশের সীমান্তরেখায় সেনারা পাল্টাপাল্টি গুলি চালায়।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী এ বিষয়ে কোনো তাৎক্ষণিক মন্তব্য করেনি। তবে ভারতের সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে, সীমিত পরিসরে ছোট অস্ত্রের গুলি বিনিময় হয়েছে।